রোগের সংক্রমণ : যুগে যুগে বিজ্ঞ মুহাদ্দিস ও ফকীহদের বিশ্লেষণ

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল হাকীম ।।

বিশ্ব জাহানের সবকিছুর স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা। তিনি এসব সৃষ্টি করেছেন এবংএর নিয়ন্ত্রণও তার হাতে রেখে দিয়েছেন। জগত পরিচালনার জন্য তিনি অনেক কার্যকারণ সৃষ্টি করেছেন। এসব কার্যকারণও তার ইচ্ছাশক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি ভাল-মন্দ সৃষ্টি করেছেন। এরও অনেক কার্যকারণ সৃষ্টি করেছেন।

সে সব কার্যকারণের নিয়ন্ত্রণও তারই হাতে। তিনি রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি করেছেন। সে রোগের প্রতিষেধকও দান করেছেন। সেগুলোর প্রভাব ও কার্যক্ষমতাও তার ইচ্ছাধীন।

আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী মুমিন ও মুসলিম যেমন একমাত্র আল্লাহকে স্রষ্টা, মা’বুদ, ত্রাণকর্তা ও রক্ষাকর্তা হিসেবে মানে । পাশাপাশি জগতের ঘটে যাওয়া ভালমন্দের কার্যকারণেও বিশ্বাস রাখে। এটাই হল নাজাতপ্রাপ্ত দল ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’এর সর্ববাদী আকীদা।

এখান থেকে দূরে সরে আল্লাহর একত্ববাদের আকীদার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে গিয়ে আসবাব বা কার্যকারণকে অস্বীকার করা যেমন বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন। অপরদিকে আসবাব বা কার্যকারণকে স্বীকার করতে গিয়ে এ পর্যায়ে চলে যাওয়া যে, এসব কার্যকারণকে স্বয়ংসম্পূর্ণরূপে কার্যক্ষমতার মালিক মনে করা ছাড়াছাড়ি ও শিথিলতা বরংঅবস্থাভেদে শিরকের নামান্তর।

বক্ষমান প্রবন্ধে আমার আলোচনার বিষয় হলো, ‘রোগের সংক্রমণ:যুগে যুগে বিশিষ্ট মনিষীদের বিশ্লেষণ’। নিচে আমি এ বিষয়ে বিভিন্ন যুগের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরব।
এ ক্ষেত্রে দুধরনের হাদীস পাওয়া যায়। যা বাহ্যদৃষ্টিতে সাঙ্ঘর্ষিক ও পরস্পরবিরোধী।কিন্তু বাস্তবে তার মাঝে কোন বিরোধ নেই।

এক.আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘রোগের সংক্রমন বলতে কিছু নেই’। (বুখারী:৫৭০৭, মুসলিম: ৫৯১৯)

দুই.আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘তুমি কুষ্ঠ রোগী থেকে সেভাবে বেচেঁ থাক যেমন সিংহ থেকে বেচেঁ থাক’। (বুখারী:৫৭০৭, মুসনাদে আহমদ: ৯৭২০), অন্য এক হাদীসে আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘অসুস্থ উটের মালিক যেন তার অসুস্থ উটকে আরেক ব্যক্তির সুস্থ উটের সাথে না রাখে’। (বুখারী: ৫৭৭১, মুসলিম: ৫৯২৩)
এসব হাদীসের বাহ্যবিরোধ সমাধানে উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। তারমধ্যে বিখ্যাতমুহাদ্দিস ও ফকীহদের নিকট সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও অগ্রগণ্য মত নিচে তুলে ধরছি।

উপরিউক্ত হাদীস সমূহের বাহ্যত বিরোধ নিরসন কল্পে এসব মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ হলো, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহিলী যুগে যে সংক্রমনের বিশ্বাস ছিল তাকে নির্মূল করেননি। তার অস্তিত্বকে পুরোপুরি অস্বীকার করেননি। বরং তার মাঝে ইতিদাল তথা আকীদায় ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেছেন। অর্থাত ভাল-মন্দ, রোগ-ব্যাধি আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি। তার সৃষ্টির মাঝে রয়েছে নানা বৈচিত্র। তিনি তার নানা সৃষ্টির মাঝে রেখে দিয়েছেন নানা রকম প্রভাব ও ক্ষমতা। তবে এ প্রভাব ও ক্ষমতা রোগের নিজস্ব নয়। বরং তা তারই নিয়ন্ত্রনাধীন। তাই এ হাদীসে তার উদ্দেশ্য হল, রোগের সংক্রমন তো রোগের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহরই দান। রোগের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। তাই ইচ্ছা করলেই তা সংক্রমিত হবে। এটা জরুরী নয় যে, এসব রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির সংশ্রবে গেলেই আক্রান্ত হয়ে পড়বে।

বরং এটা একটা সবব বা কার্য-কারণ যা আল্লাহ তায়ালার হুকুমেই কাজ করে।

এজন্যই অপর হাদীসে এজাতীয় কার্যকারণ থেকে দুরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ ইসলাম জীবনের জন্য অতীব প্রয়োজন ছাড়া কোন ঝুকি নেওয়ার শিক্ষা দেয় না। এই উম্মতের সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরাম এমতের প্রবক্তা। তাদের মধ্যে রয়েছেন, ইমাম খাত্তাবী (৩৮৮হি.), ইমাম বায়হাকী (৪৫৮হি.),ইমাম ইবনুস সালাহ (৬৪৩হি.)ইমাম নববী (৬৭৬হি.), হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ূতী (৯১১হি.) সহ অধিকাংশ শাফিয়ী ফুকাহা, আল্লামা তুরবেশতি হানাফী(৬৬১হি.), আল্লামা তীবী (৭৪৩হি.),ইবনে মালাক (৮৫৪হি.), মোল্লা আলী আল কারী (১০১৪হি.) ফকীহুন নফস মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (১৩২৬হি.), আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী (১৩৫২হি.), সহ অনেক হানাফী উলামায়ে  কেরাম ।

নিচে তাদের বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র থেকে তুলে ধরা হলো।

এক.বুখারী শরীফের বিখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম খাত্তাবী (৩৮৮হি.) তার বিখ্যাত ভাষ্য গ্রন্থ ‘আ’লামুল হাদীস গ্রন্থে বলেন,
قوله: لا عدوى, يريد أن شيئًا لا يعدى من قبل ذاته وطبعه وما كان من ضرر وفساد, فإنما هو بمشيئة الله وقضائه وقدره.(أعلام الحديث: ৩/২১১৮)

অর্থাৎহাদীসে যে ‘লা আদওয়া’ বা কোন সংক্রমন নেই কথা আছে তার দ্বার উদ্দেশ্য হলো, কোন জিনিসের মাঝে সংক্রমনের নিজস্ব ক্ষমতা নেই। এবং সেটা তার স্বভাবজাত নয়। তাতে যে ক্ষয়-ক্ষতির বিষয় রয়েছে সেটা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন ও তার ফায়সালার নিয়ন্ত্রনাধীন। (আ’লামুলহাদীস: ৩/২১১৮)

দুই. শাফিয়ী মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম বায়হাকী (৪৫৮হি.) বলেন,

وَأَمَّا قَوْلُهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا عَدْوَى» فَإِنَّهُ أَرَادَ وَاللهُ أَعْلَمُ عَلَى الْوَجْهِ الَّذِي كَانُوا يَعْتَقِدُونَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ مِنْ إِضَافَةِ الْعَمَلِ إِلَى غَيْرِ اللَّهِ تَعَالَى، ثُمَّ قَدْ يَجْعَلُ اللَّهُ تَعَالَى بِإِرَادَتِهِ مُخَالَطَةَ الصَّحِيحِ مَنْ بِهِ شَيْءٌ مِنْ هَذِهِ الْعُيُوبِ سَبَبًا يُحَدِّثُونَهُ بِهِ، وَقَدْ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَرِدُ مُمرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ، وَبِاللَّهِ الْعِصْمَةُ»(السنن الصغير:2515)

 

অর্থাৎ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বলেছেন, ‘কোন সংক্রমন নেই’ এর দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য হলো, জাহিলী যুগে যে বিশ্বাস ছিল আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে কাজের স্রষ্টা মনে করত সে বিশ্বাসকে খন্ডন করা। আল্লাহতায়ালা তো অসুস্থ জিনিসের সংশ্রবে সুস্থ কোন কিছু আসাকে অসুস্থতার কারণ বানিয়ে দিতে পারেন। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অসুস্থ উটকে কেউ যেন সুস্থ উটের কাছে না নিয়ে যায়।(আস্সুনানুস সগীর:২৫১৫)

তিন.হাফেয ইবনুস সালাহ (৬৪৩হি.)। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ইমাম বায়হাকী রহ. এর বক্তব্য উদ্ধৃত করার পর বলেন, ইবনুস সালাহও একই মতের প্রবক্তা। (ফাতহুলবারী: ১০/১৭৫)

চার.শাফিয়ী মাযহাবের মুখপাত্র ইমাম নববী (৬৭৬হি.) বলেন,
قَالَ جُمْهُورُ الْعُلَمَاءِ يَجِبُ الْجَمْعُ بَيْنَ هَذَيْنِ الْحَدِيثَيْنِ وَهُمَا صَحِيحَانِ قَالُوا وَطَرِيقُ الْجَمْعِ أن حديث لاعدوى الْمُرَادُ بِهِ نَفْيُ مَا كَانَتِ الْجَاهِلِيَّةُ تَزْعُمُهُ وتعتقده أن المرض والعاهة تعدى بطبعها لابفعل الله تعالى وأما حديث لايوردمُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ فَأُرْشِدَ فِيهِ إِلَى مُجَانَبَةِ مَا يَحْصُلُ الضَّرَرُ عِنْدَهُ فِي الْعَادَةِ بِفِعْلِ اللَّهِ تَعَالَى وَقَدْرِهِ فَنَفَى فِي الْحَدِيثِ الْأَوَّلِ الْعَدْوَى بِطَبْعِهَا وَلَمْ يَنْفِ حُصُولَ الضَّرَرِ عِنْدَ ذَلِكَ بِقَدَرِ اللَّهِ تَعَالَى وَفِعْلِهِ وَأَرْشَدَ فِي الثَّانِي إِلَى الِاحْتِرَازِ مِمَّا يَحْصُلُ عِنْدَهُ الضَّرَرُ بِفِعْلِ اللَّهِ وَإِرَادَتِهِ وَقَدَرِهِ فَهَذَا الَّذِي ذَكَرْنَاهُ مِنْ تَصْحِيحِ الْحَدِيثَيْنِ وَالْجَمْعِ بَيْنَهُمَا هُوَ الصَّوَابُ الَّذِي عَلَيْهِ جُمْهُورُ الْعُلَمَاءِ وَيَتَعَيَّنُ الْمَصِيرُ إِلَيْهِ.(شرح النووي على مسلم ১৪/২১৩)

অর্থাৎ এ দু ধরনের হাদীসের মাঝে উলামায়ে কেরাম এভাবে সমন্বয় সাধন করেছেন যে, যে হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন সংক্রমন নেই’ তার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, জাহিলী যুগে যে বিশ্বাস ছিল -এসব রোগ তার নিজ ক্ষমতা বলে অন্যকে সংক্রমিত করে আল্লাহর ইচ্ছার কোন দখল নেই-তার খন্ডন করা। আর যে হাদীসে বলা হয়েছে, অসুস্থ উটকে যেন সুস্থ উটের কাছে না নিয়ে যায়’ তার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তায়ালার হুকুমে সাধারণত যে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে তা থেকে বেচে থাকা।….অবশেষে বলেন, এই দুই হাদীসের মাঝে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে এই ব্যাখ্যাই সঠিক। এবং এটাই নির্ধারিত। (শরহে নববী (১৪/২১৩)

এ পর্যন্তআমরা কয়েকজন মনিষীর বক্তব্যের মূলভাষ্য ও তার অনুবাদসহ উল্লেখ করেছি এ পর্যায়ে আমরা প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত করণের দিকে লক্ষ করে অন্যান্য মুহাদ্দিস ও ফকীহদের বক্তব্যের শুধু আরবী ভাষ্য উল্লেখ করব। যাতে গবেষক পাঠকগণ তা থেকে উপকৃত হতেপারেন।

পাঁচ. হাদীস ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্ধী, মাসাবিহুসসুন্নাহ’এর ব্যাখ্যাতা আল্লামা ফযলুল্লাহ তুরবেশতী (৬৬১হি.) বলেন,

حديث سعد بن أبي وقاس -رضي الله عنه- عن النبي – صلى الله عليه وسلم – (لا عدوى) الحديث. العدوى ههنا مجاوزة العلة من صاحبها إلى غيره. يقال: أعدى فلان فلاناً [142/ب] من خلقه أي: من علة به. وذلك على ما يذهب إليه المتطيبة في علل سبع: الجذام، والجرب، والجدري، والحصبة، والبخر، والرمد، والأمراض الوبائية.

وقد اختلف علماء الأمة في تأويل هذا الحديث فمنهم من يقول: إن المراد منه نفي ذلك وإبطاله على ما يدل عليه ظاهر الحديث، والقرائن المنسوقة على العدوى وهم الأكثرون، ومنهم من يرى أنه لم يرد إبطالها فقد قال – صلى الله عليه وسلم -: (وفر من المجذوم فرارك من الأسد) وقال: (لا يوردن ذو عاهة على مصح) وإنما أراد بذلك نفى ما كان يعتمده أصحاب الطبيعة، فإنهم كانوا يرون العلل المعدية مؤثرة لا محالة، فأعلمهم بقوله هنا أن الأمر ليس على ما يتوهمون، بل هو متعلق بالمشيئة، إن شاء كان، وإن لم يشأ لم يكن، ويشير إلى هذا المعنى قوله: (فمن أعدى الأول) أي: إن كنتم ترون أن السبب في ذلك العدوى لا غير، فمن أعدى الأول؟ وبين بقوله: (وفر من المجذوم) وبقوله: (لا بوردن ذو عاهة على مصح) أن مداناة ذلك من أسباب العلة فليتقه كما اتقاه من الجدار المائل، والسفينة المعيوبة. وقد رد الفرقة الأولى على الثانية في استدلالهمبالحديثين أن النهي فيهما إنما جاء شفقاً على من باشر الأمرين، فيصيبه علة في نفسه، أو عاهة في إيله، فيعتقد أن العدوى حق.

قلت: وأرى القول الثاني أولى التأويلين، لما فيه من التوفيق بين الأحاديث الواردة فيه، لأن القول الأول يفضي إلى تعطيل الأصول الطبية، ولم يرد الشرع بتعطيلها، بل بإثباته، والعبرة بها، على وجه لا يناقص أصول التوحيد، ولا يناقصه في القول بها على الوجه الذي ذكرناه، وأما استدلالهم بالقرائن المنسوقة عليها، فإنا قد وجدنا الشارع يجمع في النهي بين ما هو حرام وبين ما هو مكروه وبين ما ينهى عنه لمعنى وبين ما ينهي عنه لمعان  كثيرة، فيدل على صحة ما ذكرنا قوله – صلى الله عليه وسلم – للمجذوم المبايع: (قد بايعناك فارجع) في حديث الشريد بن سويد الثقفي، وهو مذكور فيما بعد هذا الباب. وقوله – صلى الله عليه وسلم – للمجذوم الذي أخذ بيده فوضعها معه في القصعة (كل ثقة بالله وتوكلاً عليه) ولا سبيل إلى التوفيق بين هذين الحديثين إلا من هذا الوجه تبين بالأول التعرض للأسباب وهو سنته، وبالتالي ترك الأسباب وهو حاله.(الميسر في شرح المصابيح 3/1010)

ছয়.ইমাম ইবনে তাইমিয়া (৭২৮হি.) রহ. এর ফতোয়া,

وَسُئِلَ:عَنْ رَجُلٍ مُبْتَلًى سَكَنَ فِي دَارٍ بَيْنَ قَوْمٍ أَصِحَّاءَ فَقَالَ بَعْضُهُمْ: لَا يُمْكِنُنَا مُجَاوَرَتُك وَلَا يَنْبَغِي أَنْ تُجَاوِرَ الْأَصِحَّاءَ فَهَلْ يَجُوزُ إخْرَاجُهُ؟ فَأَجَابَ: نَعَمْ لَهُمْ أَنْ يَمْنَعُوهُ مِنْ السَّكَنِ بَيْنَ الْأَصِحَّاءِ فَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: {لَا يُورَدُ مُمَرَّضٌ عَلَى مُصِحٍّ} فَنَهَى صَاحِبَ الْإِبِلِ الْمِرَاضِ أَنْ يُورِدَهَا عَلَى صَاحِبِ الْإِبِلِ الصِّحَاحِ مَعَ قَوْلِهِ: {لَا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةَ} . وَكَذَلِكَ رُوِيَ أَنَّهُ لَمَّا قَدِمَ مَجْذُومٌ لِيُبَايِعَهُ أَرْسَلَ إلَيْهِ بِالْبَيْعَةِ وَلَمْ يَأْذَنْ لَهُ فِي دُخُولِ الْمَدِينَةِ. (مجموع الفتاوى لابن تيمية ২৪/২৮৫)

সাত.হাফেয ইবনুল কায়্যিম (৭৫১হি.) রহ. বলেন,
قال الحافظ ابن القيم:وَعِنْدِي فِي الْحَدِيثين مَسْلَك آخر يتَضَمَّن إِثْبَات الْأَسْبَاب وَالْحكم وَنفى مَا كَانُوا عَلَيْهِ من الشّرك واعتقاد الْبَاطِل وَوُقُوع النَّفْي وَالْإِثْبَات على وَجهه فَإِن الْعَوام كَانُوا يثبتون الْعَدْوى على مَذْهَبهم من الشّرك الْبَاطِل كَمَا يَقُوله المنجمون من تَأْثِير الْكَوَاكِب فِي هَذَا الْعَالم وسعودها ونحوسها كَمَا تقدم الْكَلَام عَلَيْهِم وَلَو قَالُوا أَنَّهَا اسباب أَو اجزاء اسباب إِذْ شَاءَ الله صرف مقتضياتها بمشيئته وإرادته وحكمته وَأَنَّهَا مسخرة بأَمْره لما خلقت لَهُ وَأَنَّهَا فِي ذَلِك بِمَنْزِلَة سَائِر الْأَسْبَاب الَّتِي ربط بهَا مسبباتها وَجعل لَهَا أسبابا أخر تعارضها وتمانعها وتمنع اقتضاءها لما جعلت أسبابا لَهُ وَإِنَّهَا لَا تقضي مسبباتها إِلَّا بِإِذْنِهِ مَشِيئَته وإرادته لَيْسَ لَهَا من ذَاتهَا ضرّ وَلَا نفع وَلَا تَأْثِير الْبَتَّةَ إِن هِيَ إِلَّا خلق مسخر مصرف مربوب لَا تتحرك إِلَّا بِإِذن خَالِقهَا ومشيئته وغايتها أَنَّهَا جُزْء سَبَب لَيست سَببا تَاما فسببيتها من جنس سَبَبِيَّة وَطْء الْوَالِد فِي حُصُول الْوَلَد فَإِنَّهُ جُزْء وَاحِد من أَجزَاء كَثِيرَة من الْأَسْبَاب الَّتِي خلق الله بهَا الْجَنِين وكسببية شقّ الأَرْض وإلقاء الْبذر فَإِنَّهُ جُزْء يسير من جملَة الْأَسْبَاب الَّتِي يكون الله بهَا النَّبَات وَهَكَذَا جملَة أَسبَاب الْعَالم من الْغذَاء والرواء والعافية والسقم وَغير ذَلِك وَأَن الله سُبْحَانَهُ جعل من ذَلِك سَببا مَا يَشَاء وَيبْطل السَّبَبِيَّة عَمَّا يَشَاء ويخلق من الْأَسْبَاب الْمُعَارضَة لَهُ مَا يحول بَينه وَبَين مُقْتَضَاهُ فهم لَو أثبتوا الْعَدْوى على هَذَا الْوَجْه لما أنكر عَلَيْهِم كَمَا أَن ذَلِك ثَابت فِي الدَّاء والدواء وَقد تداوى النَّبِي وَأمر بالتداوي وَأخْبر أَنه مَا أنزل الله دَاء إِلَّا أنزل لَهُ دَوَاء إِلَّا الْهَرم فأعلمنا أَنه خَالق أَسبَاب الدَّاء وَأَسْبَاب الدَّوَاء الْمُعَارضَة المقاومة لَهَا وأمرنا بِدفع تِلْكَ الْأَسْبَاب الْمَكْرُوهَة بِهَذِهِ الْأَسْبَاب وعَلى هَذَا قيام مصَالح الدَّاريْنِ بل الْخلق وَالْأَمر مَبْنِيّ على هَذِه الْقَاعِدَة فَإِن تَعْطِيل الْأَسْبَاب وإخراجها عَن أَن تكون أسبابا تَعْطِيل للشَّرْع ومصالح الدُّنْيَا والإعتماد عَلَيْهَا والركون إِلَيْهَا واعتقاد أَن المسببات بهَا وَحدهَا وَأَنَّهَا أَسبَاب تَامَّة شرك بالخالق عز وَجل وَجَهل بِهِ وَخُرُوج عَن حَقِيقَة التَّوْحِيد وَإِثْبَات مسببيتها على الْوَجْه الَّذِي خلقهَا الله عَلَيْهِ وَجعلهَا لَهُ إِثْبَات لِلْخلقِ وَالْأَمر للشَّرْع وَالْقدر للسبب والمشيئة للتوحيد وَالْحكمَة. (مفتاح دار السعادة ২/২৬৯).

আট.হাফেয ইবনে রজব হাম্বলী(৭৯৫হি.) বলেন,
قال ابن رجب الحنبلي : و الصحيح الذي عليه جمهور العلماء : أنه لا نسخ في ذلك كله و لكن اختلفوا في معنى قوله : [ لا عدوى ] و أظهر ما قبل في ذلك : أنه نفي لما كان يعتقده أهل الجاهلية من أن هذه الأمراض تعدي بطبعها من غير اعتقاد تقدير الله لذلك و يدل على هذا قوله : [ فمن أعدى الأول ؟ ] يشير إلى أن الأول إنما جرب بقضاء الله و قدره فكذلك الثاني و ما بعده خرج الإمام أحمد و الترمذي [ من حديث ابن مسعود قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : لا يعدي شيئا قالها ثلاثا فقال أعرابي : يا رسول الله النقبة من الجرب تكون بمشفر البعير أو بذنبه في الإبل العظيمة فتجرب كلها ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : فما أجرب الأول لا عدوى و لا هامة و لا صفر خلق الله كل نفس و كتب حياتها و مصابها و رزقها ] فأخبر أن ذلك كله بقضاء الله و قدره كما دل عليه قوله تعالى : { ما أصاب من مصيبة في الأرض و لا في أنفسكم إلا في كتاب من قبل أن نبرأها } فأما نهيه صلى الله عليه و سلم عن إيراد الممرض على المصح و أمره بالفرار من المجذوم و نهيه عن الدخول إلى موضع الطاعون فإنه من باب اجتناب الأسباب التي خلقها الله تعالى و جعلها أسبابا للهلاك أو الأذى و العبد مأمور باتقاء أسباب البلاء إذا كان عافية منها فكما أنه يؤمر أن لا يلقي نفسه في الماء أو في النار أو يدخل تحت الهدم و نحوه مما جرت العادة بأنه يهلك أو يؤذى فكذلك اجتناب مقاربة المريض كالمجذوم أو القدوم على بلد الطاعون فإن هذه كلها أسباب للمرض و التلف و الله تعالى هو خالق الأسباب و مسبباتها لا خالق غيره و لا مقدر غيره. (لطائف المعارف ص ১৭৫)

নয়.মোল্লা আলী আলকারী(১০১৪হি.) রহ, বলেন,
ومعنى لا عدوى نفي ما كانوا عليه من أن المرض يعدي بطبعه لا بفعله سبحانه ، ولعل تخصيص المجذوم لأنه أشد تأثيراً من العلل المعدية.(مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح )

দশ.আল্লামা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (১৩২৩হি.) রহ. বলেন,
نفى العدوي في الأول نفي التأثير والاستقلال. (الكوكب الدري شرح جامع الترمذي২/৪২৪)

একাদশ.ইমাম আনওয়ার শাহ কাশমিরী(১৩৫২হি.) রহ. বলেন,
قوله: (لا عدوى) نفيٌ لاتباع الأوهام. والعدوى ثابتة في الأقوام كلها، غير أهل الإِسلام أما ملابسة المجذوم، فهو من التَّسبيُّبِ، وقد أجاب الحافظ عن تعارض الحديثين في نفي العدوى، والفرار من المجذوم، بالوجهين. ونقل جوابًا عن الشيخ عمرو بن الصلاح. قلت: والحق أحق أنْ يُتَّبع أنَّ الحافظ حافظٌ فنَّه، ولا ريب، أما إن السببية الطبعية، ماذا هي في الفلسفة؟ وماذا ارتباطها بالقدرة؟ وأنها هل يمكن اجتماعها مع القدرة أو لا؟ فتلك أمور لا يعرفها الحافظ، ولم أدر من تصنيف من تصانيفه أنه كانت له يد في الفلسفة، وهكذا لابن تيمية أيضًا. فإنَّه، وإن كان متبحرًا فيها، لكن كلامَه أيضًا منتشرٌ، ليس كالحاذِق في الفن، وقال الصفدي فيه: إن علمَه أكبرُ من عقله.(فيض الباري ৬/৬৩)
وقال أيضا: والأصوب ما ذكره ابن القيم في ্রزاد المعادগ্ধ: أن العدوى المنفى، هو اتباع الأوهامِ فقط، بدون تسبيبٍ في البَيْن، كما يزعمه هنود أهل الهند. وترجمته على حسب مراده، اركر بيمارى لك جانا فلا عدوى عند الشرع وأما قوله: ্রولا طِيرةগ্ধ، فلكونه غير مفيد، لا يجلب شيئًا، ولا يرد شيئًا. (فيض الباري )

দ্বাদশ.শায়খ খলীল আহমদ সাহারানপুরী(১৩৪৬হি.) রহ. বলেন,
وقال بعضهم: إن الأصل فيه هذان الحديثان، أي بأن الله سبحانه على جري عادته يعدي المرض من حيوان إلى آخر بسبب المخالطة، ونفي العدوى محمول على أنه لا عدوى بالذات، بل هو بجري عادة الله سبحانه وتعالى. قال الراقم: نقله فرضيه. (بذل المجهود شرح سنن أبي داود للسهارنفوري)

ত্রয়োদশ.শায়খ বিন বায(১৪২০হি.) রহ. বলেন,
والخلاصة: أن الأحاديث في هذا الباب تدل على أنه لا عدوى على ما يعتقده الجاهليون من كون الأمراض تعدي بطبعها، وإنما الأمر بيد الله سبحانه. إن شاء انتقل الداء من المريض إلى الصحيح وإن شاء سبحانه لم يقع ذلك. ولكن المسلمين مأمورون بأخذ الأسباب النافعة، وترك ما قد يفضي إلى الشر.(مجموع فتاوى ابن باز ২৫/৯০)

চতুর্দশ.শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ উছাইমিন(১৪২১হি.) রহ. বলেন,
وقوله صلى الله عليه وسلم: ((فر من المجذوم فرارك من الأسد)) (২) .
“الجذام”: مرض خبيث معد بسرعة ويتلف صاحبه، حتى قيل إنه الطاعون، فالأمر بالفرار لكي لا تقع العدوى، وفيه إثبات العدوى لتأثيرها، لكن تأثيرها ليس أمر حتمي بحيث تكون علة فاعلة، ولكن أمر النبي صلى الله عليه وسلم، بالفرار من المجذوم، وأن لا يورد ممرض على مصح، من باب تجنب الأسباب، لا من باب تأثير الأسباب بنفسها. (فتاوى أركان الإسلام للشيخ محمد بن صالح العثيمين ص১২৭)

এ ছাড়াও বহু মুহাদ্দিস ও ফকীহের মত পাওয়া যায় যা এই ব্যাখ্যাকেই প্রমাণ করে। অর্থাৎ রোগের সংক্রমন বাস্তব ও প্রমাণিত বিষয়। তবে তা সংক্রমিত হয় একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ও ফায়সালা অনুসারে। হাদীসে এ সংক্রমনকে অস্বীকার করা হয়নি।বরং অস্বীকার করা হয়েছে শুধুমাত্র রোগের ক্ষমতা নিজস্ব মনে করাকে।
উল্লেখ্য, এখানে যে ব্যাখ্যাটি তুলে ধরা হয়েছে তা মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামের কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য অগ্রগণ্য ব্যাখ্যা। যদিও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম থেকে এছাড়া আরো একাধিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু তা অগ্রগণ্য ও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের প্রতিটি বিষয়কে সালাফের নির্দেশিত পন্থায় যথাযথ অনুধাবন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক : উস্তায, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা, মুহাম্মদপুর ঢাকা

পূর্ববর্তি সংবাদসতর্কতার নামে পৈশাচিকতা : করোনা সন্দেহে নারীকে ঘর থেকে বের করে দিলেন স্বজনরা
পরবর্তি সংবাদকরোনা থেকে মুক্তি পেতে আজ দুপুর ২টায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বিশেষ দোয়া