কোভিড-১৯ : মৃতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে, অসহায় ইতালি-স্পেনের ডাক্তাররা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণে ইউরোপের দেশ স্পেন ও ইতালিতে প্রতিদিনই বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। স্পেন, ইতালির চিকিৎসক-নার্সরা আগে কখনো এত লাশ, এত রোগী দেখেননি।

নাওয়া-খাওয়া, ঘুমানোর সময় পাচ্ছেন না তারা। করোনার কাছে নিজেদের অসহায় ও অক্ষম মনে করছেন ডাক্তাররা। অনেকে কাজের চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতোমধ্যে ইতালিতে ৪৫ ও স্পেনে ৩০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে মারা গেছেন।

আক্রান্ত হয়েছেন স্পেনে নয় হাজারের বেশি ও ইতালিতে ছয় হাজারের বেশি চিকিৎসাকর্মী। ভাইরাস চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুয়েসেপ্পে কন্তে।

চিকিৎসা সরঞ্জাম ঘাটতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ডাক্তার-নার্সরাও। নভেল করোনাভাইরাসে একদিনে ইতালিতে মারা গেছে ৯৬৯ জন আর স্পেনে ৮৩২ জন। এত মৃত্যু আগে কখনও দেখেনি এ দুই দেশ।

বিশ্বে কোভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইতালিতে রেকর্ড মৃত্যুর পরও দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের প্রধান সতর্ক করেছেন, এ ভাইরাস সংক্রমণ এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।

অথচ চিকিৎসকরা আক্রান্তদের বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। ইতালির মনস্তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ ইভান গিয়াকোমেল দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘ডাক্তার ও নার্সরা আগে কখনো এত রোগী ও লাশ দেখেননি। এতে অনেকেই ঘাবড়ে যাচ্ছেন।

নিজেদের অসহায় ও অক্ষম মনে করছেন কেউ কেউ।’ লম্বার্ডি শহরের হাসপাতালে কর্মরত এ বিশেষজ্ঞ জানান, ‘যখন আপনি যুদ্ধের ময়দানে থাকবেন তখন আপনি কি মনে করছেন সেটা মুখ্য বিষয় নয়। আপনাকে শুধু লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’

ইতালির ডাক্তার-নার্সদের কাজের চাপ অসম্ভব পরিমাণে বেড়েছে। অনেকের মনে করোনাভাইরাসে নিজে সংক্রমিত হওয়ার ভয়, পাশাপাশি কাজের চাপ মেনে নিতে পারছেন না। ফলে অনেকেই আত্মহত্যাও করছেন।

মার্চের মাঝামাঝিতে ইতালির মিলান শহরের মোনজা এলাকার ৩৪ বছর বয়সী এক নার্স আত্মহত্যা করেন। গত সপ্তাহে ভেনিস প্রদেশে ৪৯ বছর বয়সী নার্স আত্মহত্যা করেন।

জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, স্পেনে ৯ হাজার ৪৪৪ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত। দেশটিতে এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগ ধরা পড়েছে ৭২,২৪৮ জনের। স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত দেশের তালিকায় স্পেন শীর্ষে। যারা সুস্থ আছেন তারাও আছেন শঙ্কায়। অ্যাম্বুলেন্স টেকনিশিয়ান ভিক্টোরিয়া ইগুয়েরেস ও পাবলো রোহো সারাক্ষণ আতঙ্কে ভুগছেন।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে নিজেদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দুই স্বাস্থ্যকর্মী। মাস্ক, গ্লাভস ও গাউনের ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে রোহো বলেন, ‘মাঝেমধ্যে খুবই আতঙ্কে সময় কাটছে। ফোন ধরার সময় মনেই থাকছে না হাত পরিষ্কার করেছি কিনা কিংবা স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছি কিনা।’

করোনায় স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ায় দুশ্চিন্তা ভর করেছে স্পেন সরকারের মনে। শুক্রবার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকর্মী চেয়েছে তারা। আশা করা হচ্ছে শিগগিরই বিদেশ থেকে ২০০ ডাক্তার ও নার্স স্পেনে যাবেন। পাশাপাশি তাদের জরুরি অবস্থা ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দেশটিতে ১৪ মার্চ থেকে লকডাউন চলছে। এরই মধ্যে দেশটির সরকার নতুন নিয়ম চালু করেছে। মাদ্রিদ লা পাজ হাসপাতালের চিকিৎসক ড্যানিয়েল বার্নাবিউ জানান- বয়স্ক, যাদের বাঁচার সম্ভাবনা কম, তাদের বাদ দিয়ে কম বয়সী রোগীদের প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে।

ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। দেশটির স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের প্রধান সিলভিয়ো ব্লুসাফেরো বলেন, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা কমলেও মৃতের সংখ্যা কমছে না।

সবচেয়ে ভয়ের কারণ- ডাক্তার, নার্সরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। ইতালির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থার তথ্য মতে, করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৬৯ জনের মৃত্যুতে শুক্রবার রাত নাগাদ দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৩৪ জনে।

নতুন করে ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে চার হাজার ৪০১ জনের। মোট আক্রান্ত ৮৬ হাজার ৪৯৮ জন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের প্রধান কেন্দ্র নিউইয়র্ক। তবে নিউ অরলিন্স, শিকাগো ও ডেট্রোয়েটেও দ্রুত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট প্রবল হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে নিউইয়র্ক হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রিউ বলেন, ‘এটা সত্যিই খুবই ভয়ঙ্কর।

পূর্ববর্তি সংবাদআজ থেকে সীমিত সময়ের জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে
পরবর্তি সংবাদছিন্নমূল শিশু ও দুস্থ নাগরিকদের মধ্যে খাবার সরবরাহ করবে ডিএমপি