‘করোনা আতঙ্কে জুমা এবং জামাত স্থগিত করা উচিত নয়’

তারিক মুজিব ।।

করোনভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ৭০ টিরও বেশি দেশে। আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহত হয়েছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ। সব দেশের মানুষের মাঝেই এ ভাইরাস নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় আতঙ্কের মাত্রা বেশি। তবে লোকজনকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনা প্রতিরোধে মানুষের সংশ্রব এড়িয়ে চলতে অতি সতর্কতাবশত মসজিদে এসে জামাতে শামিল হওয়া এবং জুমা স্থগিত করা হয়েছে কোনো কোনো দেশে। তাজিকিস্তান, ইরানে রাষ্ট্রীয়ভাবে জুমা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আরব আমিরাতে ১০ মিনিটে খুতবাসহ জুমার নামায শেষ করতে নোটিশ জারি করা হয়েছে।

তবে উলামায়ে কেরাম করোনা আতঙ্কে জুমার নামায স্থগিতের বিষয়টিকে সঠিক মনে করছেন না। অবশ্য তারা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার যাবতীয় সতর্কতা গ্রহণ করতে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে পানাহ চাইতে বলছেন। এ বিষয়ে মারকাযুদ্দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার ইফতা বিভাগের উস্তায মুফতি মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া ইসলাম টাইমসকে বলেন, আক্রান্ত দেশ বা এলাকায় ব্যক্তিগতভাবে কেউ চাইলে সতর্কতা বা আতঙ্কে জুমআর নামাযে শরিক না হতে পারে। তবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জুমা স্থগিত করে দেওয়া কখনোই উচিত হবে না।

মুফতি মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আরও বলেন, মসজিদে এসে জামাতে নামাজ পড়তে মানা করা এবং জুমার নামাজ স্থগিত করার মানে হলো মুসলমানের আশ্রয়ের স্থান মসজিদকেই এড়িয়ে যাওয়া। এটা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।

মারকাযুদ্দাওয়ার এ উস্তায বলেন, যুগে যুগে দুর্যোগ কবলিত হলে মুমিনরা তো মসজিদেই আশ্রয় নিয়েছেন। মসজিদই তো আল্লাহর কাছে আশ্রয় ও ক্ষমা প্রার্থনার সর্বোত্তম জায়গা। হ্যা, করোনা ভাইরাস যেহেতু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায় তাই বাহ্যিক সমস্ত সতর্কতাই গ্রহণ করতে হবে। ইসলামের শিক্ষাও এটাই। তবে মসজিদে গমন এবং জুমা স্থগিত করা যাবে না।

মুফতি মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া উদাহরণ দেখিয়ে বলেন, মসজিদ ছাড়া বাজার মার্কেট, অন্যসব পাবলিক প্লেস তো বন্ধ নেই। মানুষ তো নিজেদের প্রয়োজন পূরণে বাস, ট্রেন গণপরিবহনে চড়ছে, বাজারে যাচ্ছে। তাহলে মসজিদে যাতায়াত কেন বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ভাইরাস সংক্রমণের ভয় তো নিজের ঘরেও আছে। বাড়িতে তো মানুষ একা বাস করে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মানুষের সংশ্রব এড়িয়ে চলতে গেলে প্রত্যেককে একটা একটা করে বাড়িতে অবস্থান নিতে হবে। কোথাও বের হওয়া যাবে না। কবরের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যাবে।

মুফতি মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া বলেন, বিপদাপদ বালা মসিবত থেকে মুমিন সতর্ক ও সচেতন থাকবে। তবে এ পরিমাণ সচেতনতা নয় যে আল্লাহর সাথে দূরত্ব তৈরি হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। মুমিনদের তো এই আক্বিদা মজবুত করা উচিত, আল্লাহ বিপদ দিলে সব সতর্কতার মাঝেই দিতে পারেন। আর আল্লাহই প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে বান্দাকে রক্ষা করেন।

পূর্ববর্তি সংবাদদিল্লিতে মুসলিম হত্যা: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩
পরবর্তি সংবাদপিরোজপুরের আদালতকাণ্ডের ঘটনায় আসকের উদ্বেগ