সফল শিক্ষকের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য

 মুহাম্মদ আব্দুস সালাম ।। মিসর থেকে 

গত ৩০ জানুয়ারি “ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অফ মুসলিম ইউথ” এর মিশর ইসমাইলিয়া শাখার ষষ্ঠতম সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারের আলোচ্য বিষয় ছিল, “ইয়ুথ এন্ড ইনিশেটিভ” তথা “তারুণ্য ও উদ্যোগ”। সেখানে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ হুসাইন আল মেহরাসাভী “সফল শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য” শীর্ষক আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, শিক্ষকতা ও পাঠদান একটি মর্যাদাপূর্ণ অভিজাত পেশা। এটি খোদ নবী রাসুলদের পেশা ছিল। এই মহান দায়িত্ব পালনে তারাই এগিয়ে আসেন, যারা ইলম ও জ্ঞানকে ভীষণ ভালবাসেন এবং ভালোবাসেন তা অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে।

পাঠদান জাতি, সভ্যতা ও সংস্কৃতি নির্মাণের অন্যতম ভিত্তি মূল। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্বে সফল হওয়ার জন্য আবশ্যক হল, সঠিক ও সুচিন্তিত ভাবে পাঠদানের লক্ষ্য উদ্দেশ্য স্থির করা। অতপর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সকল জ্ঞান ও কৌশল রপ্ত করা।

সফল শিক্ষক কাকে বলে। এর জন্য কি গুণ-বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়, তা আমাদের জানতে হবে। একজন সফল শিক্ষক হওয়ার জন্য আবশ্যক হল, আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায়, পাঠদানের সুবিন্যাস ও সুন্দর পরিকল্পনা। আর প্রয়োজন অনন্যসাধারণ প্রতিভা। কারণ শিক্ষকের দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্রকে তার পাঠদানে ও তার জ্ঞান সরোবরে পরিতৃপ্ত করা। এখন যদি শিক্ষকের মধ্যে সেই প্রতিভাই না থাকে, তাহলে কখনো তিনি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না। চাই স্বীয় শাস্ত্রে তিনি যত বড় বিদ্বান হোন না কেন। এজন্য পাঠদান হতে হবে সুনিপুনভাবে এবং শিক্ষককে পাঠদানের সঠিক, সর্বাধিক উপকারি ও অত্যাধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে  অবগত থাকতে হবে।

আরো কিছু গুণ বিশেষণ আছে যা একজন সফল শিক্ষকের মধ্যে থাকা জরুরি। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, অনেকেই তার প্রতি গুরুত্ব দেয় না। এই যেমন , একটু রসিকতা, একটু বিনোদন ও আনন্দ দান। পাঠের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করণে এবং পাঠে আনন্দ ও মনোযোগ সৃষ্টিতে এর বড় ভূমিকা থাকে।

তিনি বলেন অন্যের মাঝে জ্ঞান ও চিন্তা বিতরণের মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। তাই একজন শিক্ষককে অবশ্যই সহজ, সঠিক ও সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে হবে।

একজন শিক্ষককে যেমন পাঠদানের বিষয়গত ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে, তেমনি গুরুত্ব দিতে হবে তার বাহ্যিক বেশভূষা, পোশাক আশাক ও পরিপাটি হওয়ার ব্যাপারে। সাথে সাথে শিক্ষককে হতে হবে বিনয়ি ও সত্যবাদি। একইভাবে আবশ্যক হল, এমন সব আচরণ, উচ্চারণ ও মনোভাব থেকে বিরত থাকা যা তাকে ছাত্রের চোখে ছোট করে দেখায়।

ছাত্রদের সাথে সুসম্পর্ক ও তাদের প্রতি নির্মোহ ভালোবাসাও অপরিহার্য।

ডক্টর মেহরাসাভী বলেন, আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হল, শিক্ষকের ছাত্রদেরকে শাস্তির ভয় দেখানো, তিরস্কার করা ও পরীক্ষার প্রাপ্য নম্বর থেকে বঞ্চিত করা ইত্যাকার সংকীর্ণমনা কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ছাত্রদের মাঝে সব ধরনের সমতা বজায় রাখতে হবে। যেমন, তাদের দিকে তাকানো, তাদের পড়া শোনা ও তাদের প্রশ্ন করা ইত্যাদি বিষয়ে।

সর্বোপরি শিক্ষককে মনে পুষতে হবে ইখলাস ও নিষ্ঠা। এই মহান দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং দেশ, জাতি ও তরুণ প্রজন্মের সুনির্মাণে ইতিবাচক ভূমিকায় অংশগ্রহণ।

শিক্ষকমন্ডলী কে সম্বোধন করে সবশেষে তিনি বলেন, ছাত্রদের সামনে যা ব্যাখ্যা করা হবে, যা উপস্থাপন করা হবে তা যেন হয় সঠিক, প্রমাণসিদ্ধ ও উদ্ধৃতি নির্ভর। বর্তমানে এটি বড় অবহেলিত। বিশেষ করে মিডিয়া পাড়ায়। তাই আমাদের এ বিষয়ে যত্নবান ও সতর্ক হওয়া উচিত।

লেখক : শিক্ষার্থী, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় 

পূর্ববর্তি সংবাদবিমানবন্দর সড়কে সড়ক দুর্ঘটনা : নিহত ১, আহত ১৪ 
পরবর্তি সংবাদআকাশসীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে ইসরাইলকে সতর্ক করল সিরিয়া