করোনাভাইরাস : নানা মাত্রিক শিক্ষার উপাদান

মুফতি আবদুল্লাহ আল মামুন ।। 

দাওয়াত ও তাবলীগের উসিলায় অনেক দেশের মত চীনের মুসলিমদেরকে দেখার সুযোগ হয়েছে। ঢাকায় আমার পরিচিত এক বাসায় চীনের এক মাস্তুরাত জামাত এসেছিলেন। একদিন এক চাইনিজ মহিলা বয়ানের পর হাউমাউ করে কান্না শুরু করলেন। অনেক চেষ্টা করেও তার কান্না থামানো যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে যখন কান্না থামল তিনি বললেন আজ আশপাশ থেকে বয়ান শোনার জন্যে যেসব মহিলা এসেছিলেন তাদের সাথে অল্প বয়সের দুটা মেয়ে যাদের উপর ফরয নয় এসেছিল এবং তারা ছিল সম্পূর্ণ বোরকা পরিহিত। আমাদের উপর পর্দা ফরয। কিন্তু আমরা দেশে পর্দা করতে পারি না। আর এই দুই মেয়ের উপর পর্দা ফরজ নয় কিন্তু তারা কী সুন্দর বোরকা পড়ে এসেছে। তাদের দেখে নিজের জন্য আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। এ হল চীনের এক মুসলিম নারীর পর্দা সম্পর্কে বুকফাটা অনুভূতি।
বর্তমানে চীনে চলছে ভয়াবহ মহামারি করোনা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গোটা চীন এখন অসহায় জীবন যাপন করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলোতে একের পর এক প্রকাশ পাচ্ছে হৃদয় বিদারক দৃশ্য! কিন্তু এ সব কিছুর পরও একথা স্বীকার করতেই হবে যে, চীন এমন একটি দেশ যেখানে পর্দা করা যায় না। যেখানে সুন্নতি পোশাক পরা যায় না। যেখানে যে কোন ধর্মীয় জীবন যাপন করতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। বিশেষত মুসলমানদেরকে হয়রানির শিকার হতে হয় সবচেয়ে বেশি।
বিভিন্ন গণমাধ্যম পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি থেকে  আমরা দেখতে পাই,  যারা মুসলমানদেরকে বোরকা পরতে দিত না, তারা কুদরতের সামনে অসাহায়  হয়ে  কী কঠিন ‘পর্দা’ ই না করছে। শরীরের প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঢাকা। এমনকি এমন খবরও এসেছে যে, পুরো শরীর পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। শুধু চোখের অংশটা দেখা যায় পরিমাণ খোলা। প্রযুক্তির গর্ব করে বর্তমান বিশ্ব, কিন্তু  আল্লাহ তাআলা দেখিয়ে দিলেন একটা ভাইরাসের সামনে গোটা দুনিয়া কত অসহায়।
 যারা উইঘুরের প্রায় ২০ লাখ মুসলিমকে জোরপূর্বক গৃহবন্দি করে রেখেছে আজ তাদের গোটা দেশ বন্দী হয়ে পড়েছে। এখন সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন। চীনের এই ভাইরাস থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে। সৌভাগ্যশালী সেই ব্যক্তি যে  অন্যের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। নিজে অন্যের শিক্ষার উপকরণ হয় না। এর আগেই অন্যের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। সতর্ক হয়।
আল্লাহ তাআলার অমোঘ বিধান, কেউ অপরাধ করতে থাকলে আল্লাহ তাআলা প্রথমবারেই পাকড়াও করেন না। যখন পাকড়াও করেন সমূলে বিনাশ করেন না।  সমূলে বিনাশ করবেন না এই মর্মে আল্লাহ তাআলার তাঁর রাসূলের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে মানুষকে সতর্ক করার জন্যে আল্লাহ তাআলা মাঝেমধ্যে বিভিন্ন আযাব পাঠান।  ভূমিকম্প, ভূমিধস, সুনামি ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি মানুষকে সতর্ক করেন যাতে তারা ফিরে আসে।
সূতরাং চীনে যে মহামারি চলছে এটা আমাদের জন্যে অনেক বড় সতর্ক সংকেত। চীনের এই মহামারির কুফল সারা বিশ্বকে বহন করতে হবে।  কোনো না কোনো ভাবে আমাদের ব্যক্তিজীবনও এর দ্বারা প্রভাবিত হবে।   এজন্য আমাদের সকলকে তওবা করা উচিত। উইঘুর মুসলিমদের উপর নিপীড়নে নীরব ভূমিকা পালন করায় গোটা  মুসলিম বিশ্বই অপরাধী। এসব অপরাধ থেকে আমাদেরকে তওবা করতে হবে।  আল্লাহ অনেক কিছু সহ্য করেন। কিন্তু জুলুম সহ্য করেন না। মযলুমের ‘আহ’ আল্লাহর দরবারে পৌঁছাতে সময় লাগে না।
অনুলিখন : এনাম হাসান জুনাইদ
পূর্ববর্তি সংবাদদক্ষিণ আফ্রিকায় প্লাস্টিক বোতল রিসাইক্লিং করে ৪শ’ মিটারের বেশি রাস্তা সংস্কার
পরবর্তি সংবাদআমার নাম জপলেই পালাবে করোনাভাইরাস : ভারতীয় ধর্মগুরু নিত্যানন্দ