বিপদ আপদ: সংকট মোকাবেলায় আমাদের করণীয়

শিহাব সাকিব ।।

ইসলামি ফিকহ একাডেমি ইন্ডিয়ার জেনারেল সেক্রেটারি, কালজয়ী বহুগ্রন্থ প্রণেতা হযরত মাওলানা মুফতি উবাইদুল্লাহ আসআদি হাফিযাহুল্লাহ বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতি সব সময় এক রকম থাকে না। পরিবর্তন হতেই থাকে। কখনও অনুকূলে, আবার কখনও প্রতিকূলে। দুনিয়ার নেযাম আল্লাহ তাআলা এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মুমিন বান্দা কোন হালতেই বিচলিত হবে না। পেরেশান হবে না। কারণ বিপদ আপদ আল্লাহ তাআলা দেন পরীক্ষার জন্যে। আল্লাহ তাআলার যে যত নৈকট্য লাভ করে সে তত বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। সবচে বেশি বিপদ মসিবত ও সংকটের সম্মুখীন হয়েছিলেন নবী ও রাসূলগণ। এরপর তাদের পরের মর্তবায় যারা রয়েছেন তারা।

গত ৪ জুমাদাস সানি ১৪৪১ হিজরি বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ হুসাইনিয়া মাদরাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে কথাগুলো বলেন বরেণ্য এ আলেমে দীন। তিনি বলেন, ছোট বড় যে কোন সমস্যা ও সংকটে পড়লে কেউ যদি দুটি কাজ করে তাহলে তার জন্যে সব কিছু সহজ হয়ে যাবে।

এক. তাকদিরের উপর বিশ্বাস। ভাল মন্দ সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়। তিনি যা করেন বান্দার উপকারের জন্যেই করেন। কিন্তু আমরা বুঝি না। হায় হুতাশ করি।

দুই. দুআ। যে কোন বিপদে, সংকটে আল্লাহর কাছে চাওয়া। অন্য কারো কাছে নয়। সব ধরণের সমস্যা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাকেই ডাকা, তার সাহায্য কামনা করা, তার দরগাহে লুটিয়ে পড়া। প্রদীপ নিভে গেছে, বিদ্যুত চলে গেছে, পড়ুন ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। দুঃখ কষ্ট ও পেরেশানির হালতে পড়ুন ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। ডাকুন আল্লাহ তাআলাকে। এটি এমন নেআমত যা একমাত্র মুমিন বান্দাই লাভ করতে পারে।

আল্লাহ ওয়ালাদের সান্নিধ্য লাভ করার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, বুযুর্গদের থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। তাই আমাদের উচিৎ তাদের সোহবতে যাওয়া। তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা। আর এটা অবশ্যই ইখলাসের সাথে হতে হবে। দুনিয়াবি কোন উদ্দেশ্যে নয়। এটা বলার জন্যে নয় যে, অমুক বড় বুযুর্গের মুরিদ আমি! আল্লাহর অলিদের সুহবত আল্লাহর জন্যে হওয়া চাই।

মুফতি উবাইদুল্লাহ আসআদি আরও বলেন, বুযুর্গদের আলামত তিনটি।

এক. তাদের স্তুতি যেমন গাওয়া হবে, নিন্দুকেরও অভাব হবে না। দুই. তাদের পানাহার সম্পূর্ণ হালাল হবে। তিন. তারা এমন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবেন যা অন্যদের জন্যে সহ্য করা অসম্ভব। কিন্তু এটা কেউই টের পাবে না।

এক লোক জনৈক বযুর্গের দরবারে গিয়েছিল এই আলামত তিনটি পরীক্ষা করতে। প্রথম দুটি খুব সহজে পেয়ে গেলেও শেষের আলামত দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করেও পায়নি। অবশেষে ঐ বুযুর্গকে জিজ্ঞেস করল। তিনি বলতে রাজি হননি। প্রচণ্ড পীড়াপীড়ার এক পর্যায়ে সেই আলামতও তার সামনে উন্মোচিত করে দেখালেন। আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের সামনে নানা রকম কারামত ও অলৌকিক জিনিস প্রকাশিত হয়। কিন্তু তারা তা গোপন করে রাখেন। কখনও বলে বেড়ান না। এসব চর্চা হোক তারা পসন্দও করেন না। পূর্বসূরি কোন এক ব্যক্তি বলেছেন, অলিদের কারামত গোপন জিনিসের মতই গোপন রাখতে হয়।

সর্বশেষ তিনি দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সবাইকে মজবুত সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের সন্তানদের মাদরাসায় পাঠাবেন। সার্বিক সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন। উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বয়ানের সারাংশ অনুবাদ করেছেন হযরত মাওলানা তাহমীদুল মাওলা হাফিযাহুল্লাহ। উক্ত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জামিয়া রেঙ্গা সিলেটের মুহতামিম মাওলানা বুরহান, মাওলানা রশিদুর রহমান ফারুক প্রমুখ।

পূর্ববর্তি সংবাদসারা দেশে নারী বিদ্বেষী ওয়াজ বন্ধ করতে বললেন ইনু
পরবর্তি সংবাদকরোনাভাইরাস : চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬০, আক্রান্ত ১৪০০০