দারুল মা’আরিফে সাহিত্যআসর : সাহিত্যচর্চার সাথে মৌলিক পড়াশোনাও ঠিক রাখতে হবে

আবদুল্লাহ মারুফ ।।

জামেয়া দারুল মা’আরিফের সাহিত্য আসরের কথা বলছি। গত বুধবার২৯ জানুয়ারী বাদ ইশা জামেয়ার লাইব্রেরী হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ‘সাপ্তাহিক সাহিত্য আসর’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত ছিলেন জামেয়ার  শীর্ষ-শিক্ষকবৃন্দ।

ছাত্রফোরাম ‘আন নাদী আস-সাক্বাফী’র মহাসচিব মাওলানা আফীফ ফুরকান মাদানির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট দাঈ মাওলানা এনামুল হক মাদানি। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন জামেয়ার প্রবীণ শিক্ষক, বহুগ্রন্থ প্রণেতা, মাওলানা মোহাম্মদ নূর আনোয়ারী ও মাওলানা মিসবাহ উদ্দীন মাদানি।

 

দীর্ঘ অনেক বছর পর সাহিত্য আসরের ছোঁয়ায় যেন জেগে উঠেছে জামেয়াপ্রাঙ্গণ, আবেগে উচ্ছ্বাসে, খুশিতে উচ্ছল প্রতিটি সাহিত্যমোদি প্রাণ। তারা প্রচণ্ড আগ্রহের সঙ্গে উপস্থিত হয় জামেয়ার লাইব্ররী হলরুমে। এরপর অনিমিখ তাকিয়ে থেকে পরম যত্ন নিয়ে অতিথিদের আলোচনা শোনে। এশার পরপরই ভরে উঠেছিল জামেয়ার লাইব্রেরী হলরুম।

মাওলানা এনামুল হক মাদানি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘নবীজির ভাষা ছিলো বিশুদ্ধ, তাই তিনি ‘আনা আফসাহুল আরব’ বলতে পেরেছেন। তোমাদেরকেও মাতৃভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে হবে, এবং এই ভাষার লাগাম টেনে ধরতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেই সাতসমুদ্র তেরো নদী পারি দিয়ে খ্রিস্টান মিশনারিগুলো আমাদের দেশে এসে বাঙলা শিখে তাদের মতবাদ প্রচার করছে, বই লিখছে। তারা তাদের কথাগুলো পৌঁছে দিতে বিদেশি একটি ভাষা, অর্থাৎ অ আ ক খ শিখে ভাষার শুরু থেকে শুরু করে সাহিত্যের উচ্চ শিখরে পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে, তারপর আমাদের ভাষা দিয়ে আমাদের ভাইদেরকেই বিপথগামী করছে। কবে ভাঙবে আমাদের ঘুম?’

মাওলানা মোহাম্মদ নূর আনোয়ারী সাহেবের কণ্ঠ উচ্চারিত হয়, ‘তবে, আমরা সাহিত্যচর্চা করবো, আমাদের সাহিত্যচর্চা আমাদের কবিতা যেন মুখে মুখে হয়; চুল দাঁড়িতে না হয়। নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে আমরা সাহিত্যচর্চা করবো; আদর্শ বিকিয়ে নয়।’

সবাই তো একটি ফর্মুলা পেলো, যদিও বা এই চেতনা পুঞ্জিভূত আগে থেকেই অনেকের হৃদয়ে, তবুও, ‘ওদের বই’ পড়ে পড়ে আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া চেতনায় একটুখানি ওম পেয়ে দৃঢ় হলো লক্ষ্য। কিন্তু শুধু তো লক্ষ্য ধারণ করেই বসে থাকলে হবে না, শিখতে হবে। সেই শেখাটা কীভাবে হবে, ঝিনুকের মুখ খুলে বসে থাকার ন্যায় উপস্থিত প্রতিটি হৃদয় কৌতূহলী হলো। তখন মাওলানা মিসবাহ উদ্দীন মাদানি দাঁড়িয়ে ভাষা শেখার প্রাথমিক দিকগুলো আলোচনা করে, সুখপাঠ্য লেখার কৌশলগুলো উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, ‘সাহিত্যচর্চার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চারণ শেখাও জরুরি, শ্রোতাদেন কান উৎকর্ণ করার যোগ্যতাও একজন লেখককে অর্জন করতে হবে।’

তিনি পরামর্শ দেন, ‘মক্তবের শিশুরা যেভাবে বর্ণ শিখে, আমাদেরকেও সেভাবে বাঙলাভাষার বর্ণগুলো ধরে ধরে উচ্চারণ শিখতে হবে। তার মতে, ‘যারা প্রাথমিক সাহিতের ছাত্র, তারা স্কুলের বাঙলা বইগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়বে, সেখানে বিশিষ্ট কবিসাহিত্যিকদের নির্বাচিত রচনা থাকে, কী পড়ব এসব ভেবে সময় নষ্ট না করে কেউ যদি সেগুলো যত্ন নিয়ে পড়ে, তাহলেও তার অনেক উপকার হবে।’

পাঠের বিকল্প নেই, পড়তে হবেই, কিন্তু সেই পড়া যেনো একাডেমিক পাঠের কোনও ক্ষতি না করে; সেজন্য সমাপ্তিবক্তব্যে অনুষ্ঠানের মূলস্পন্দন মাওলানা আফীফ ফুরকান মাদানি বলেনㅡ ‘জামেয়া দারুল মাআরিফের মূল ভিশন ভালো আলেম তৈরি করা, আরবিতে দক্ষ করা। এখান থেকে যদি একজন লেখকও না বেরোয় আমাদের প্রতি কেউ ভ্রুকুঞ্চন করবে না; কিন্তু ভালো আলেম যদি না হয়, তাহলে আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তাই, তোমরা সাহিত্যচর্চা করো মৌলিক পড়াশোনাগুলো ঠিক রেখে।’

পূর্ববর্তি সংবাদপল্লবীতে গভীর রাতে নির্বাচনী ক্যাম্পে মুখোশধারীদের হামলা
পরবর্তি সংবাদব্রেক্সিট কার্যকর : ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে গেল যুক্তরাজ্য