করোনাভাইরাস : ইসলামের দৃষ্টিতে আমাদের কী করণীয়

এনাম হাসান জুনাইদ।।

আমাদের নিকট প্রতিবেশী দেশ চীন। সেখানে  করোনা ভাইরাস নামে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ মহামারি। গণ মাধ্যমে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০৬ দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ১৯৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বলা বাহুল্য, এ জাতীয় খবর গণমাধ্যমে যতটুকু প্রকাশ হয়, প্রকৃত অবস্থা আরও ভয়াবহ থাকে, যা কোনো সরকারই প্রকাশ করতে চায় না।

কিভাবে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ল? কেন করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করল? এসকল মহামারীর বিভিন্ন সাইন্টিফিক কারণ থাকতে পারে যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা  ইতিমধ্যে  কিছু জানতে পেরেছি। কেউ কেউ বলছেন, চীনারা ইঁদুর, বাদুড়, কুুকুর, বিড়াল জাতীয় বন্যপ্রাণী খাওয়ার কারণে এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে। ডাক্তারি কারণ যাই হোক, আমাদের সেটা দেখার বিষয় নয়। হাদীসে  এসকল মহামারির যে কারণ বলা হয়েছে, তা হচ্ছে, অশ্লীলতার ভয়াবহ সয়লাব। খুল্লাম খোলা অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া কোনো সম্প্রদায়ে মহামারি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসাবে বলা হয়েছে হাদীস শরীফে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন কওমের মধ্যে অশ্লীলতা বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়বে তখন তাদের মধ্যে এমন এমন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে যা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। (ইবনে মাজাহ ৪০১৯) । এ সকল মহামারীর সময় মুসলমান হিসেবে আমাদের কি করা উচিত? এ বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা অনেক স্পষ্ট।এসকল অবস্থায় আমাদের সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে, আল্লাহর তাকদীরের উপর খুশী থাকা। সাওয়াবের আশা নিয়ে ধৈর্য ধারণ করা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম সর্বপ্রথম আমাদেরকে এসব অবস্থায় সান্ত্বনা দিয়েছেন। হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, মহামারি আল্লাহ তাআলার একটি শাস্তি। তবে তা মুসলমানদের জন্য আল্লাহর রহমত। (বোখারী ৩৪৭৪)  যারা আল্লাহ তাআলার উপর বিশ্বাস রাখে তাদের পায়ে যদি কোনো কাটাও ফুটে, আল্লাহর কাছে এরও বিনিময়  পাওয়া যাবে। সুতরাং এ অবস্থায় যারা ধৈর্য্য ধারণ করে তাদের জন্য এটি মহামারি নয়। এদের জন্য আল্লাহর রহমত। এর মাধ্যমে তাদের গুনাহ মাফ হয়। এসকল মহামারির সময় যারা সাওয়াবের নিয়তে ধৈর্য ধারণ করে, এবং আক্রান্ত  এলাকা থেকে পালিয়ে যায় না হাদীস শরীফে এসেছে তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।

এ সকল বিধান হচ্ছে সে সকল মুসলমানদের জন্য যারা চীনের সেসকল আক্রান্ত এলাকায় বসবাস করছেন।
কিন্তু বাইরের কোন মুসলমানের কি  অবস্থায় চীনে সফরের জন্য পর্যটনের জন্য যাওয়া উচিত হবে?
এ ব্যাপারে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়ে তখন যদি তোমরা সেখানে থাকো তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর যদি তোমরা বাইরে থাকো তাহলে তোমরা সেই আক্রান্ত এলাকায় যাবে না। প্রশ্ন হতে পারে, ইসলাম কেন যারা সেখানে অবস্থান করছেন তাদের সেখান থেকে পলায়ন এর অনুমতি দেয় না? এ বিষয়ে প্রথম কথা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ মানার জন্য কোনো মুসলমানের কারণ জানার প্রয়োজন নেই। আমরা তো কেবল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশ মানার জন্য নির্দেশিত।
তারপরও এ প্রশ্নের জবাবে আলেমগণ লিখেছেন, ইসলাম সব বিষয়ই মধ্যপন্থা শিক্ষা দেয়। মহামারির ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা তাই যা ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে। যদি আক্রান্ত এলাকার লোকজন পলায়ন করে তাহলে যে সকল লোক আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সেবা-শুশ্রূষা কে করবেন? তাছাড়া দেখা যাবে ধনীরা পালিয়ে যেতে পেরেছে দরিদ্ররা পলাতে পারেনি।
চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে জানা যায়, আক্রান্ত এলাকার লোকজনের অনেকে  এমন থাকে যারা মনে করেন তাদের মধ্যে সেই রোগ নেই। অথচ সেই রোগের জীবাণু তাদের মধ্যে রয়েছে। তারা যদি সেখান থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও যান তাহলে সেই রোগ আরো অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।এসকল কারণ আমাদেরকে হাদিসে বলা হয়নি । আর হাদীস মানার জন্যে আমাদেরকে কারণ জানারও প্রয়োজন নেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মত কেবলই যুদ্ধ ও মহামারীতে ধ্বংস হবে। যে এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়বে সেখানে অবস্থান করে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে শহীদ বলে আখ্যায়িত হবে। আর উপদ্রুত এলাকা থেকে যে পালিয়ে আসবে তাকে জিহাদ থেকে পলায়নকারীর মতোই গণ্য করা হবে। যুদ্ধের ময়দান থেকে নিজেদের সঙ্গীসাথীদের সহযোগিতা না করে পলায়ন করাকে হাদীসে কবীরা গোনাহ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তেমনি কুরআন মাজিদে জিহাদ থেকে পলায়নকারীকে আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত হওয়ার ধমকি শোনানো হয়েছে। আর আক্রান্ত এলাকা থেকে পলায়ন করা জেহাদ থেকে পলায়ন করার মতই।
যে সকল মুসলমান এসকল আক্রান্ত এলাকায় রয়েছেন তাদের উচিত সেখানে অবস্থান করা। সেখান থেকে না আসা । আর আশপাশের দেশগুলোর উচিত, আপাতত সে সব এলাকায় না যাওয়া। সেসব এলাকার সফর মুলতবি করা। এবং ওই সব এলাকা থেকে যারা এসেছেন বা আসবেন তাদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেশে ঢুকানো। আল্লাহ না করুন, এরপরও  যদি আশপাশের দেশগুলোতেও তা ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ধৈর্যধারণ করা, সওয়াবের আশা করা। তাকদীর যা আছে তাই হবে। যদি আমরা ধৈর্য ধরি তাহলেও তাই ঘটবে। আমরা সওয়াব পেয়ে যাব। আর যদি হায় হুতাশ করি, তাহলেও তাকদীরে যা আছে তাই হবে কিন্তু আমরা সওয়াব থেকে মাহরুম হব।
(পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেম মুফতি তারেক মাসুদ এর বয়ান অবলম্বনে)
পূর্ববর্তি সংবাদ“ইফার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে আকৃষ্ট করতে সচেষ্ট হব”
পরবর্তি সংবাদআজহারীর কাছে ইসলাম গ্রহণ করা সেই ১১ জনকে ভারতে ফেরত