মদ নিষিদ্ধের একশ বছর: মদীনা কেন পেরেছিল, আমেরিকা কেন পারেনি?

এনাম হাসান জুনাইদ।।

কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে মদ নিষিদ্ধ হওয়ার এক শত বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯২০ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানের ১৮ তম সংশোধনীর মাধ্যমে মদ তৈরি, বিপনন, আমদানি এবং পরিবহন পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল । যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়কালকে ‘প্রহিবিশন যুগ’ বলে বর্ণনা করা হয়।

এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্যে আমেরিকার সরকার প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ তখনকার প্রচলিত সব গণমাধ্যমে এর প্রচারণা চালিয়েছিল। এক পরিসংখ্যান মতে, প্রচারণায় সরকারের ব্যয় হয়েছিল তখন ৬৫ মিলিয়ন ডলার। তিন হাজার মিলিয়ন পৃষ্ঠা লেখা হয়েছিলি মদের ক্ষতি, পরিণাম সম্পর্কে। এবং আরও ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল এই আইন প্রয়োগের পেছনে। নিষেধাজ্ঞার এই তের বছরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নিহত হয়েছিল প্রায় ২০০ মানুষ, বন্দী হয়েছিলেন ৫০লাখ।

কিন্তু যে উদ্দেশ্যে সরকার এই কাজ করেছিল, কার্যত ফল হয়েছিল তার উল্টো । নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর  দেখা গেছে, অ্যালকোহলের উৎপাদন, বিপনন, বিক্রি আরও বেড়ে গেছে। ১৯৩৩ সালে মাত্র ১৩ বছরের মাথায় এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে মদ নিষিদ্ধ করার সেই উদ্যোগ এমনিই বিফল হয় যে ওই ঘটনার পর আজ পর্যন্ত কোনো প্রধান রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী মদ নিষিদ্ধ করার দাবি তোলারও সাহসও করেনি।

বিপরীতে আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগে আরবদের কথা কল্পনা করুন। আরবদের কাছে তখন মদ পান খারাপ কিছু ছিল না। বাড়িতে পানি যেভাবে সংরক্ষণ করা হত, তেমনি মদের মটকাও সংরক্ষণ করা হত। কিন্তু যখন ইসলামের আগমন ঘটল, আল্লাহ তাআলা মদ নিষিদ্ধ করে আয়াত নাযিল করলেন, হে ইমানদার গণ, এই যে মদ  জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ এসব শায়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক।

এ “বেঁচে থাক”- একয়েকটি শব্দের মধ্যে ছিল এমন শক্তি যা কোনো পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও নেই। কিতাবাদি থেকে জানা যায়, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর সাহাবাগণ তাদের বাড়িতে সংরক্ষিত মদের মটকা রাস্তায় এনে ঢেলে দিয়েছিলেন। সেই মদের মটকাগুলো পর্যন্ত তারা লাঠি দিযে পিটিয়ে ভেঙ্গেছিলেন। নিজদেরকে মদ পান না করা উপর এমন অভ্যস্ত করেছিলেন যেন তারা মদ কী জিনিস চিনতেনই না। কোনো দিন মদ খেয়েও দেখেননি। সেই যে মদ হারাম হয়েছিল, আজ চৌদ্দশ বছর পার হয়েছে, কেউ মদ হালাল হওয়ার কথা ইসলামে কল্পনাও করতে পারে না। মদ হারাম এমন স্বতসিদ্ধ বিষয়ে পরিণত হয়েছে -এটা অস্বীকার করলে কারো ঈমানই থাকবে না।

কেন এমন পার্থক্য হল

আমেরিকার সরকারের মদ নিষেধাজ্ঞা এবং পরের ব্যর্থতা এবং ইসলামে মদের নিষেধাজ্ঞা এবং এর সফল বাস্তবায়ন এদুয়ের মধ্যে কেন এমন পার্থক্য হল? আমেরিকার লোকদের চেয়েও তো আরবের লোকদের মদের আসক্তি ছিল বেশী।

যারা তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন, তারা মনে করেন, এই আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পার্থক্য সেই একটি মাত্র শব্দই- “বিরত থাক।” যা কুরআনের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এই আয়াত আরবদের সামনে ছিল। এই নির্দেশ আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাই এই শব্দটি আরবদের অন্তরে এমন প্রভাব বিস্তার করেছিল যে কোনো ধরণের প্রচারাভিযান, সেনা অভিযান, তল্লাশি অভিযান ছাড়াই তারা ঈমান ও আল্লাহর উপর বিশ্বাসের শক্তিতে এই আইন বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন। এটা ছিল তাদের ভেতরের শক্তি, যা আমেরিকার লোকদের মাঝে অনুপস্থিত। এই আইন আল্লাহর পক্ষ থেকে – এ বিশ্বাস কোনো আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে শক্তি যোগায়, তা কোনো মানব রচিত আইনের ক্ষেত্রে কল্পনাও করা যায় না।

পূর্ববর্তি সংবাদখুব কম মানুষই আছেন যারা যথেষ্ট হাঁটেন
পরবর্তি সংবাদচীনে ভাইরাস : দুই দিনে আক্রান্ত ২০০ জনের বেশি