এক্সক্লুসিভ : ধর্ষণ বন্ধে ক্রসফায়ার নিয়ে আলেমগণ কী বলেন?

এনাম হাসান জুনাইদ ।।

সাম্প্রতিক সময়ে  দেশে ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ধর্ষকদের শাস্তি হিসাবে যাবজ্জীবন কারদণ্ড রয়েছে। কিন্তু এটাকে যথেষ্ট মনে করছেন না দেশের নীতিনির্ধারণী মহলের অনেকে।

শিশু ও নারী ধর্ষণের শাস্তি কী হওয়া উচিত এনিয়ে জাতীয় সংসদ, হাইকোর্ট ও রাজনীতিকদের মধ্যে চলছে তুমুল বিতর্ক। গত মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারী সরকারী দলের এবং জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী কয়েকজন সদস্য ধর্ষকদের ক্রসফায়ারে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। গতকালও ১৯ জানুয়ারী শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এই বিতর্কের মধ্যেই ধর্ষকের জন্যে ইসলামের শাস্তি কী? এ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম বিশিষ্ট আলিম মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজিকে। তিনি জানালেন, ইসলাম চৌদ্দশত বছর আগেই ধর্ষণ-ব্যভিচারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে। যদি কোনো বিবাহিত পুরুষ ধর্ষণ করে তাহলে তাকে পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আর যদি অবিবাহিত পুরুষ ব্যভিচার করে তাহলে তাকে ১০০টি বেত্রাঘাত করা হবে।  যদি অবিবাহিত পুরুষ ধর্ষণ করে তাহলে একশটি বেত্রাঘাতের সাথেসাথে তাকে বিচারক আরও কঠিন শাস্তিও দিতে পারেন-  যোগ করেন মুফতি সাখাওয়াত।

এদিকে ইসলাম টাইমসের সম্পাদক শরীফ মুহাম্মদ বলেছেন, অবশ্যই ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। প্রয়োজনে তাদেরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা উচিত। কিন্তু এসব হতে হবে বিচার প্রক্রিয়ার অধীনে। প্রথমে প্রমাণিত হতে হবে সে ধর্ষক।

বিচার প্রক্রিয়ার নামে বিলম্ব করা হলে ধর্ষক পার পেয়ে যায় এ প্রশ্নের জবাবে মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ বলেন, এটা একটা ভিন্ন সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া অযথা দীর্ঘায়িত না হয়, সেজন্য বিশেষ বিচার প্রক্রিয়া, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া, সংক্ষিপ্ত বিচার প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু তাই বলে বিচার ছাড়াই কাউকে মেরে ফেলার বৈধতা দেওয়া যায় না।

দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন কিভাবে বন্ধ করা যায় এ বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন বিশিষ্ট গবেষক আলেম মাওলানা আবদুর রহমান। মাওলানা আবদুর রহমান বলেছেন, ধর্ষকদের মেরে ফেলা উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য ধর্ষণ বন্ধ করা। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর এর জন্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ক্রসফায়ার করা ইত্যাদি কখনোই যথেষ্ট হতে পারে না, যা পার্শ্ববর্তী দেশে ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে ধর্ষণের শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখেও ধর্ষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না।

ধর্ষণ বন্ধ করার জন্যে একই সাথে কয়েকটা পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন মাওলানা আবদুর রহমান। তিনি জানান, ধর্ষণ বন্ধ করার জন্যে প্রথম কাজ হবে মানুষের ভেতরে মূল্যবোধ সৃষ্টি করা, আল্লাহর ভয় ও আখেরাতের ভয় তাদের অন্তরে বদ্ধমূল করা। সেই সাথে নারীদেরকে অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়া, প্রয়োজনে বের হলে ভদ্র ও শালীন পোষাকে ঘর থেকে বের হওয়া। যদি শাস্তির পাশাপাশি এসব পদক্ষেপও নেওয়া হয়, তাহলে ধর্ষণ সমাজ থেকে অনেক কমে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই আলেম।

এসব পদক্ষেপ না নিয়ে ধর্ষণ বন্ধ করার প্রক্রিয়া অনেকটা নদীর মাঝখানে ফেলে দিয়ে কাপড় না ভেজানোর নির্দেশের মত কিংবা বিড়ালের সামনে শুটকি দিয়ে শুটকি না খাওয়ার উপদেশ দেওয়ার মত বলেও মত দিয়েছেন অনেক আলেম।

 

পূর্ববর্তি সংবাদশাহ আমানতে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ৫২ স্বর্ণের বার উদ্ধার
পরবর্তি সংবাদভারতে হিন্দু মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন মসজিদ কমিটি