দেশীয় সংস্কৃতির দোহাই ভুয়া কথা, চুলকানিই তাদের মূল কথা

ওয়ারিস রব্বানী।।

আগে যারা বলতো, এখনো যারা বলে- যে কোনো পোশাক পরার অধিকার মানুষের নিজস্ব, তারাই এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের ছাত্ররা কেন আরবীয় পোশাক পরে র‌্যাগ-ডে পালন করলো, সেজন্য গোস্বায়-ক্ষোভে উল্টাপাল্টা রাগ ঝেড়েছে। সেইসব ‘পোশাকী’ চেতনাধারীদের ঠেলায় খোদ ওই বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন পর্যন্ত ‘আরবীয় পোশাক’নিয়ে ‘বিব্রত’ হওয়ার কথা নোটিশ দিয়ে ছাত্রদের জানিয়েছে। এবং ভবিষ্যতে এ জাতীয় অনুষ্ঠানে পোশাক পরার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তিদের কাছে ‘মতামত’ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নোটিশে বলা হয়েছে- ‘নির্দিষ্ট’ এই পোশাকটি নাকি ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতি পরিপন্থি’।

ঘটনার সূত্রপাত গত ৩০ ডিসেম্বর। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)-এর কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৫ বর্ষের পুরুষ শিক্ষার্থীরা দলবেধেঁ তাদের র‌্যগ-ডেতে ঐতিহ্যবাহী আরবীয় পোশাক পরে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। ওই পোশাকের মধ্যে ছিল আরবীয় জুব্বা বা থোপ, মাথায় লালচেক রুমাল এবং রুমালের উপর কালো চাকতি বা ইগাল। এই পোশাক পরে ওই ব্যাচের প্রায় ৩০ জন ছাত্র তাদের ক্যাম্পাসে যে মহড়াটি দেয়- সেই ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতেই ক্ষেপে যায় একটি মহল। বিভিন্ন মিডিয়ায় তারা এ পোশাক পরা নিয়ে নানা রকম ‘আপাত্তি’ উত্থাপন করতে শুরু করে। কোনো কোনো টেলি-মিডিয়া রীতিমতো টকশো করে এমন পোশাক পরার ‘রহস্য’ উদ্ঘাটনে নানা জনের জবানবন্দি নেয়, নানা রকম বিশ্লেষণের অবতারণা করে। আপত্তি উঠে ভেতর থেকেও। ঘটনার দু’দিন পর ১ জানুয়ারি এমন পোশাক পরতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের প্রতি নোটিশ জারি করে। দেশীয় সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে ‘আরবীয় পোশাক’ নিয়ে তাদের চুলকানি উদাম করে দেয়। সহকারী রেজিস্টার হিসেবে ওই নোটিশে একটি স্বাক্ষর ছিল দেবাশীষ মণ্ডল নামের এক কর্মকর্তারও।

এই দেশে নানা রকম পশ্চিমা পোশাক, ভারতীয় কিংবা বাঙালি হিন্দুদের পোশাক, এমনকি অখ্যাত নানা রকম জাত-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ উদ্ভট পোশাক পরে ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় বের হলেও এতদিন কোনো আপত্তি উঠেনি ‘প্রগতিশীল’ মহল থেকে। হিন্দু ও হিন্দু সংস্কৃতি ঘেঁষা পণ্ডিতেরাও বলেনি কিছু।উল্টো তারা সুযোগ নিয়েছে, পোশাকের ‘উম্মুক্ত’ সংস্কৃতির পক্ষেই সরব থেকেছে। সেই তারাই এখন একদিনের একটি অনুষ্ঠানের জন্য মজা করে ছাত্রদের আরবীয় পোশাক পরা নিয়ে ‘বিব্রত’ হয়ে নোটিশ জারি করে বলছে- এটি ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতির পরিপন্থি’।

প্রশ্ন হচ্ছে, পোশাকের ক্ষেত্রে কোনটা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ? মুসলিম প্রধান একটি দেশে পোশাকের সংস্কৃতি কীসের ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে? পোশাকের সংস্কৃতি নিয়ে সতর্ক করার এই খেলার শেষটা তবে কী? জুব্বা পরা বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিরোধী হলে জিন্স পরাটা কোন দেশের সংস্কৃতি? ধূতি বা ধূতি-পায়জামা পরাটা কোন ধর্মের সংস্কৃতি?  ‘আরবীয় পোশাক’ নিয়ে বিব্রত হয়ে নোটিশ দেওয়ার ঘটনা কি স্পষ্টতই একটি ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক চুলকানির নমুনা নয়?

কুয়েটের ঘটনায় প্রতিবাদ হতে পারতো বরং উল্টো দিক থেকে। আরবীয় পোশাক-যার অনেকাংশই ইসলামী পোশাকের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ- পরে মজা করার জন্য ছেলেরা যা করেছে, এ জাতীয় পোশাক নিয়ে এমন মজার নামে যেন তাচ্ছিল্য করার নতুন রেওয়াজ তৈরি না হয়। এমন প্রতিবাদ বা সমালোচনা উঠলে সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া যেত। না, তর্ক বা প্রশ্ন নিয়ে সেদিকে যাওয়ার সুযোগই ঘটেনি। বরং মজা করে পরা এই পোশাকটিকেই অনেকে সহ্য করতে পারছে না। তাদের আপত্তির নির্যাসটা হলো, ধূতি না পরে ছাত্ররা জুব্বা পরলো কেন? ছেঁড়া জিন্স না পরে ইগাল পরলো কেন? এই আক্ষেপটাই এখন তাদের ভেতরে বিবিধ চুলকানি তৈরি করেছে। এই চুলকানি এতই দৃষ্টিকটূ হয়েছে য়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমও এখন এই চুলকানি নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে।

কুয়েটের পোশাক ঘটনায় আবারো সামনে এল, ইসলামের নাম-গন্ধ গায়ে জড়িয়ে কেউ যদি কোনো ‘মজা’ করতেও চেষ্টা করে- তাহলেও এদেশে চেতনাধারী ধূতিওয়ালাদের চুলকানি বেড়ে যায়, হীনমণ্য জিন্সওয়ালাদের মগজে ঘা লেগে যায় । এসব ক্ষেত্রে দেশীয় সংস্কৃতির দোহাই একটি ভুয়া কথা, চুলকানিই তাদের মূল কথা।   #

পূর্ববর্তি সংবাদশাপলা চত্বরে পুলিশি হামলার ভিডিও ইমরান খানের পোস্টে, চলছে বিতর্ক
পরবর্তি সংবাদছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, সিলেটে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১০