আবুল হাসান আলী নাদভী : প্রেরণার স্বপ্নপুরুষ

 মাওলানা মহিউদ্দীন ফারুকী ।।

আবুল হাসান আলী নাদভী রহ.। দাওয়া ইলাল্লাহ এবং আরবী ভাষা নিয়ে কাজের পেছনে আমার প্রেরণার স্বপ্নপুরুষ। তিনি ১৯১৩সালে ভারতের রায়বেরলীতে জন্মগ্রহন করেন। বাবা ছিলেন প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ। যাকে বলা হতো ”মুআররিখুল হিন্দ” বা ভারতের ইতিহাসবিদ। নুজহাতুল খাওয়াতের রচনার মাধ্যমে তিনি ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসকে এক মলাটে নিয়ে এসেছেন।

শায়খ নাদভী রহ. ছোট থেকেই ইলমী পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। ছোট সময়েই কোরআনে কারীম, উর্দু ও ফারসি ভাষা আত্মস্থ করেন। শায়েখ খলীল আনসারী রহ. এর নিকট তার আরবীর হাতেখড়ি হয়। ড, তাকিউদ্দীন হেলালী রহ. এর নিকট এবিষয়ে আরও অধ্যয়ন করেন। চেষ্টা, সাধনা আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আরবীতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।

তার শুরুর সময়ের রচনা “মাযা খাছিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমীন” তাকে জগৎজোড়া খ্যাতি এনে দেয়। আলেম, গবেষক, চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদদের নিকট তার শক্ত আসন তৈরী হয়। সাহিত্যিকরা তার রচনাশৈলীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে বিভিন্নভাবে দাওয়াত দিতে থাকে। অনেক ভাষাগবেষণা প্রতিষ্ঠানের তিনি সদস্য নির্বাচিত হন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উসতায যায়ের বা ভিজিটর প্রফেসর হিসেবে দরস প্রদান করেন।

তিনি শিশুশিক্ষা, শিক্ষাসংস্কার, দাওয়াহ কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখেন। আবেগ আর ভালোবাসা দিয়ে তিনি আরব আজমকে সঠিক দ্বীন পালনের দিকে আহ্বান করেন। মুসলিম উম্মাহকে পাশ্চাত্যের সকল ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সচেতন ও হুশিয়ার করেন। সকলের ঈমানকে জাগিয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। দাওয়াতের সব শাখাতেই খুব বিচক্ষণতার সাথে অবদান রাখতে সচেষ্ট হয়েছেন। এই মহান কাজে তিনি কোনো প্রতিপক্ষ সৃষ্টি করে নয় বরং মমতার পরশ বুলিয়ে সকলকে আপন করে নিতে চেষ্টা করেছেন।

বিংশ শতাব্দিতে তার মত এমন প্রভাবক দাঈ আর দেখা যায়নি। তার কথায়, ভাষায়, আচরণে এবং উচ্চারণে ছিল মমতা আর মুসলিম জাতির জন্য ভালবাসা। এর মাধ্যমে তিনি সকলের হৃদয়ে একটি শক্ত আসন করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি দাওয়াহ কার্যক্রমে যেমন একটি মহান মানহাজ বা ধারা প্রবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। তেমনি আরবী ভাষা ও সাহিত্যের জগতে ইসলামী ভাবধারার প্রবর্তন করেছেন। সাহিত্যের ইসলামিকরণ ধারণা প্রদানের মাধ্যমে আরবের সাহিত্যিকদের চিন্তায় নাড়া দিয়েছেন।

তার আহ্বানে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক আরবী সাহিত্য সংস্থা। দাওয়াহ, শিক্ষা, ভাষা-সাহিত্য সর্বক্ষেত্রেই তিনি কালজয়ী সব গ্রন্থ রচনা করে যান। তার রচনা আজ আমাদেরকে দাওয়াহ ও আরবী ভাষার অঙ্গনে কাজ করতে পথ প্রদর্শন করছে। তার মহান দাওয়াতি কাজ আর আরবীর খেদমতের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেছেন আমাদের প্রেরণার স্বপ্নপুরুষ। এই মহান মনিষী ১৯৯৯ সাথে ৩১ ডিসেম্বর তার জন্মস্থানেই ইন্তিকাল করেন। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের উচু মর্যাদা দান করেন ।আমীন।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ

পূর্ববর্তি সংবাদবন্ধ হোক আতশবাজির এই আগুন সংস্কৃতি
পরবর্তি সংবাদমুক্তি পেলেন কাশ্মীরের পাঁচ নেতা, এখনো আটক সাবেক ৩ মুখ্যমন্ত্রী