বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ভারত, পুলিশের গুলিতে নিহত ৩

লখনউয়ে পর পর গাড়িতে আগুন বিক্ষোভকারীদের। বাদ যায়নি সংবাদ মাধ্যমের গাড়িও। ছবি: এপি

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: মুসলিম বিদ্বেষী আইনের বিরুদ্ধে উত্তাল ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ অন্তত দশটি রাজ্যের তেরোটি শহর। বিক্ষোভ থামাতে পুলিশ গুলি পর্যন্ত চালিয়েছে। মেঙ্গালুরুতে দু’জন, লক্ষ্ণৌয়ে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। কার্ফু জারি করা হয়েছে মেঙ্গালুরুতে।

সূত্রের খবর, মেঙ্গালুরুতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জলিল (৪৯) এবং নৌশিন (২৩)। পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীরা মেঙ্গালুরু নর্থ থানা দখল করতে এলে গুলি চালানো হয়। লক্ষ্ণৌয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মোহাম্মদ উকিল (২৫) নামে এক যুবক। পরিবারের অভিযোগ, সংঘর্ষের এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময়ে পুলিশ তাকে গুলি করে। যদিও ডিজি-র দাবি, এই মৃত্যুর সঙ্গে বিক্ষোভের আদৌ যোগাযোগ নেই।

বৃহস্পতিবার সবচেয়ে উত্তপ্ত ছিল লক্ষ্ণৌ। এখানকার অবস্থা কার্যত প্রশাসনের হাতের বাইরে চলে যায়। থানায় আগুন, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এমনকি সংবাদমাধ্যমের ওবি ভ্যানে আগুন লাগানোও বাদ যায়নি। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ, কাঁদানে গ্যাসের সেলও নিক্ষেপ করা হয়।

মেঙ্গালুরুতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাচ্ছে পুলিশ। ছবি: পিটিআই

পুরনো লক্ষ্ণৌর ডালিয়াগঞ্জ, হুসেনাবাদ, ছোটা ইমামবড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আন্দোলনকারীরা। শহরের পরিবর্তন চকে ২০টি মোটরবাইক, ১০টি গাড়ি, ৩টি বাসে আগুন লাগানো হয়। রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যমও। টিভি চ্যানেলের ৪টি ওবি ভ্যান পুড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। হাসানগঞ্জ ও ঠাকুরগঞ্জে থানায় আগুন লাগানো হয়। ভেঙে দেয়া হয় পুলিশের গাড়ি। জলকামানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ। হজরতগঞ্জে ডিএমের অফিসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আইনজীবীরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয়কুমার লাল্লুকে আটক করে পুলিশ।

সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে লক্ষ্ণৌয়ের বাইরেও। আক্রমণের মুখে পড়ে বারাণসীতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সম্ভলে সরকারি-বেসরকারি বাসে লাগানো হয় আগুন।

ভারতের সর্বত্রই এদিন ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভের আঁচ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ম্যাঙ্গালুরুতে শূন্যে গুলি চালায় পুলিশ। জারি হয়েছে কার্ফু। দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, পটনা, লখনউ, চণ্ডীগড়, আমেদাবাদে মিছিলে, বিক্ষোভে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সাধারণ মানুষ। আহমেদাবাদে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। হায়দরাবাদের চারমিনারের কাছে বহু বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। বাম ও কংগ্রেসের ডাকা বনধে বিহারের পটনা, দ্বারভাঙায় আটকে দেয়া হয় ট্রেন।

সাম্প্রদায়িকতাপূর্ণ নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে দিল্লিও। ১৪৪ ধারা জারি করে, ইন্টারনেট বন্ধ রেখেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেল পুলিশ। আটক করা হলো বাম-কংগ্রেস নেতাদের। আটক কয়েক শ’ ছাত্র। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ। জামিয়া মিলিয়া, আলিগড়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের নিন্দা। এদিন বেলা বারোটায় দিল্লিতে মিছিলের ডাক দেয় বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন। সামিল হয় অন্যরাও। কিন্তু কুয়াশা কাটার আগেই সকাল ন-টা থেকে লাল কেল্লা ও মাণ্ডি হাউসের সামনে শুরু হয়ে যায় ছাত্র-ছাত্রীদের জমায়েত। মিছিল আরম্ভ হওয়ার আগেই শুরু হয়ে যায় পুলিশের ধরপাকড়ও। নামানো হয় র‍্যাফ।

বিক্ষোভকারীদের ‍বেধরক মারধর করছে পুলিশ।

মাণ্ডি হাউস থেকে কনট প্লেস হয়ে যন্তরমন্তর যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয় পুলিশ। কিন্তু আন্দোলনকারীদের তুলনায়, পুলিসের বাস কম থাকায় সবাইকে আটক করা যায়নি। রাস্তার দু’পাশ দিয়ে এগোতে শুরু করেন অনেকে। কনট প্লেসের বদলে বারাখাম্বা রোড ধরে যন্তর মন্তরের দিকে এগোয় মিছিল। যন্তর মন্তরের কাছে ব্যারিকেড থাকায় সেখানেই বসে পড়েন ছাত্ররা। লাল কেল্লা থেকে যন্তর মন্তর যাওয়ার চেষ্টা করে আরেকটি মিছিল। সেইখানেও শুরুতেই ধরপাকড় শুরু করে দেয় পুলিশ।

লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারার মধ্যেই প্রতিবাদে সামিল হন ছাত্ররা। সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, ডি রাজা, সন্দীপ দীক্ষিত, যোগেন্দ্র যাদবকে আটক করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা কমাতে দিল্লির ১৩টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। বিক্ষোভের জেরে, দিল্লি-গুরুগ্রাম সীমানায়, প্রবল ট্র্যাফিক জ্যামে কর্মীরা আটকে পড়ায় বাতিল হয় একাধিক ফ্লাইট। মাণ্ডি হাউস, সিলমপুর, জাফরাবাদ, মুস্তাফাবাদ, জামিয়ানগর, শারিনবাগ, বাওয়ানা-সহ বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। দিল্লিতে ফ্রি ওয়াইফাই চালুর দিনই ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেজরিওয়ালের নিশানায় মোদি সরকার।

উত্তরপ্রদেশের সম্ভলেও আক্রান্ত হয়েছে থানা। জ্বালানো হয়েছে সরকারি বাস। বন্ধ হয়েছে ইন্টারনেট। বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘সিসিটিভি এবং ভিডিওতে এদের দেখা গিয়েছে। এর বদলা নেয়া হবে।’’ তার হুঁশিয়ারি, সরকারের ক্ষতি পূরণ করতে প্রয়োজনে বিক্ষোভকারীদের সম্পত্তি নিলাম হবে।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা/জি নিউজ

পূর্ববর্তি সংবাদ৪ মাস ১৫ দিন পর নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হল কাশ্মীরের ৬০০ বছরের প্রাচীন জামিয়া মসজিদ
পরবর্তি সংবাদসোনাগাজীতে ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত