বিশ্বস্ততার বিরল দৃষ্টান্ত : কুড়িয়ে পাওয়া ১১ লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন সেন্টু

ইসলাম টাইমস ডেস্ক : আমানতদারির অভাবের এই যুগে ঘটনাটি অনেকের মনে আশা জাগিয়ে দিতে পারে। গত ১২ ডিসেম্বর, রাত আনুমানিক ৭টার দিকে সেন্টু হোসেন রায়েরবাজার হাইস্কুলের সামনে রাস্তার উপর একটি শপিং ব্যাগ কুড়িয়ে পান। সেই ব্যাগের ভেতর ৫০০ টাকার ২৩টি বান্ডিলে মোট সাড়ে ১১ লাখ টাকা দেখে সেন্টু সঙ্গে সঙ্গে নিউমার্কেট থানায় ওসির কাছে জমা দেন।পরে সেই টাকার আসল মালিকের খোঁজ নিতে শুরু করে থানা পুলিশ। নিউমার্কেট থানার ওসি এসএম কাইয়ুম টাকার প্রকৃত মালিকের সন্ধানে ডিএমপির সকল থানায় বেতার বার্তা দেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন লোকজনদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন।

এক পর্যায়ে সেই মালিকের সন্ধান মেলে। আজ (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান ও নিউ মার্কেট জোনের এডিসি মোহাম্মাদ শাহেদ মিয়া উপস্থিতিতে প্রকৃত মালিক হারুন অর রশিদকে কুঁড়িয়ে পাওয়া সেই ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেয় নিউমার্কেট থানা পুলিশ।

নিউমার্কেট থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যোগাযোগের একপর্যায়ে জানা যায়, হারুন অর রশিদ নামে এক ব্যবসায়ী গত ১২ ডিসেম্বর ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে গেছে মর্মে হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর জিডি সূত্রে তার সাথে যোগাযোগ ও কথা বলার পর প্রকৃত মালিক হিসেবে প্রমাণ পাবার পর সেই টাকা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফিরিয়ে দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সেন্টু হোসেনের সততায় আমরা মুগ্ধ। তার মহানুভবতার পুরস্কার আর্থিক মুল্যমানে না হলেও আল্লাহর কাছে বড় কিছু পাবেন।

প্রকৃত মালিককে খুঁজে টাকা ফেরত দেয়া ছিল পুলিশের নৈতিক দায়িত্বের অংশ। কিন্তু সেটা তো সম্ভব হয়েছে সেন্টু হোসেনের মতো মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষের কারণে।

পুলিশের প্রতি মানুষকে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখনো পুলিশে ভালো মানুষ আছে, সেটা এখানে প্রমাণিত হয়েছে। মানুষ যেন আমাদের পুলিশের উপর আস্থা রাখেন।

টাকার প্রকৃত মালিক ব্যবসায়ী হারুন আর রশিদ জানান, ‘দোকান বন্ধ করে ওই দিনের লেনদেনের সাড়ে ১১ লাখ (২৩টি পাঁচশ টাকার বান্ডিল) ব্যাগে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ ব্যাগটি ছিড়ে রাস্তায় পড়ে যায়। বাড়ি গিয়ে দেখি মোটরসাইকেলে ব্যাগটি নেই। রাস্তায় অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। পরে নিউমার্কেট থানায় টাকাগুলো আছে জানতে পেরে এখানে আসি।’

তিনি বলেন, টাকাগুলো এভাবে ফিরে পাব ভাবিনি। আজ সেন্টুর মতো মানুষ আছে বলেই পুলিশের মাধ্যমে আমি ফিরে পেয়েছি। এজন্য পুলিশ ও টাকা কুঁড়িয়ে পাওয়ার পর থানায় জমা দেয়ায় সেন্টু হোসেনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

এ ব্যাপারে সেন্টু হোসেন বলেন, টাকার প্রকৃত মালিক আমি নই। ওই টাকা আমার জন্য হালালও নয়। বরং প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া ছিল আমার নৈতিক দায়িত্ব। ওসি আমার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় টাকাটা তার কাছে জমা দেই ও প্রকৃত মালিককে খোঁজ করে দিতে অনুরোধ জানাই। পুলিশ সেই কাজটি দ্রুতই করেছে। এজন্য ধন্যবাদ পুলিশেরই প্রাপ্য।

পূর্ববর্তি সংবাদভারত থেকে লাখ লাখ মুসলিম পালাতে পারে: ইমরান খান
পরবর্তি সংবাদভারতের নতুন সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নরবণে