মায়ের কোলে মনীষীদের বেড়ে ওঠা

এনাম হাসান জুনাইদ ।।

শিশুর প্রথম শিক্ষালয় মায়ের কোল। ইতিহাসে স্মরণীয় বরণীয় বেশীর ভাগ মনীষীই এমন, যাদের বেড়ে ওঠার পেছনে তাদের মায়েদের রয়েছে অনেক প্রভাব। এমন কয়েক মনীষীর শৈশব কাহিনী নীচে দেওয়া হল-

ইমাম মালেকের আম্মা 

ইমাম মালেকের আম্মা শৈশবেই ইমাম মালেককে কুরআন হেফজের জন্যে পাঠিয়েছিলেন। তাই শৈশবেই ইমাম মালেক হেফজ সম্পন্ন করেন। তার মা তাকে আলেমদের মজলেসে পাঠাতেন। সুন্দর পোষাক পরিয়ে পাগড়ি পরিয়ে তার মা তাকে বলতেন, যাও, এবার আলেমদের মজলিসে গিয়ে ইলম শেখ।

তিনি শুধু তার বাহ্যিক বেশভূষার দিকেই খেয়াল করতেন না, বরং তাকে এটাও বলে দিতেন যে আলেমদের থেকে কী শেখবে। ইমাম মালেকের আম্মা ইমাম মালেককে বলতেন, যাও, রবীআর কাছে যাও। তবে তার থেকে ইলম নেওয়ার আগে তার আদব ও শিষ্টাচারগুলো আয়ত্ব করবে।

এভাবেই ইমাম মালেক হয়ে উঠেন শুধু মদীনাই নয়, জগদ্বিখ্যাত আলেম।

ইমাম শাফেয়ীর আম্মা

ইমাম শাফেয়ী রহ. এর জন্মের অল্প কিছু আগে তার আব্বা মারা যান। ইমাম শাফেয়ী রহ. এতীম হিসাবে বেড়ে উঠেন।

ইমাম শাফেয়ী রহ. আম্মা ছিলেন যেমন গভীর দ্বীনী প্রজ্ঞার অধিকারী, তেমনি প্রখর মেধাবী।

ইমাম শাফেয়ী রহ. যখন দুই বছর বয়স তখন গাজা থেকে তার আম্মা মককায় হিজরত করেন, যেখানে ইলম, আমল এবং আলেম ওলামাদের মজলিস সব সময় ভরপুর থাকত। তাছাড়া সেখানে শিশু শাফেয়ী বিশুদ্ধ আরবী ভাষা শিখতে পারবে সহজে।

মায়ের এই তরবিয়তের ফলে ইমাম শাফেয়ী রহ. একদিকে যেমন হয়েছিলেন বিখ্যাত আলেম ও মুজতাহিদ ইমাম, অপর দিকে হয়েছিলেন অনেক বড় ভাষাবিদ। এভাবে ইমাম শাফেয়ী রহ. এর ব্যক্তিত্ব গঠনে তার মায়ের অনেক অবদান রয়েছে।

ইমাম আহমদের আম্মা

ইমাম আহমদ রহ. এতীম অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মকাল থেকেই পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। এত কিছুর পরও তার আম্মা তাকে লালনপালন করেন।

ইমাম আহমদ বলেন, দশ বছর বয়সেই আম্মা  আমাকে কুরআন হেফজ শেষ করান।

ইমাম  আহমদ আরও বলেন, আম্মা আমাকে হেফজ করার জন্যে ঘুম থেকে উঠিয়ে জামা কাপড় পরাতেন।  ফজরের নামাজের আগে শীতের সময় গরম পানি করে দিতেন। এবং আমার সাথে তিনি বোরকা পরে মসজিদ পর্যন্ত যেতেন। কারণ মসজিদ তো ছিল অনেক দূরে।

ইমাম আহমদ বলেন, যখন আমার বয়স সতের বছর হল, তখন আম্মা আমাকে হাদীস শেখতে পাঠালেন। বললেন, হাদীস অন্বেষণ করতে বের হও। কারণ ইলম অর্জনের জন্যে সফর করা আল্লাহর নিকট হিজরত করার মর্যাদা রাখে।

তখন আম্মা আমাকে ১০টি রুটির টুকরা দিলেন। এবং এক পোটলা লবণ দিলেন তরকারি হিসাবে।

বিদায়ের সময় আম্মা বললেন, বাবা, আল্লাহর কাছ আমানত রাখলে তিনি সেটা কখনো নষ্ট করেন না। আমি তোমাকে আল্লাহর কাছে আমানত হিসাবে পেশ করলাম।

এভাবে ইমাম আহমদ রহ. জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস হয়ে ওঠেন।

ইমাম বুখারির আম্মা

শৈশবেই পিতাকে হারান ইমাম বুখারি রহ.। তাই শৈশবে মাকেই তার পুরোপুরি দেখাশোনা করতে হয়।

শৈশবে ইমাম বুখারি দৃষ্টিশক্তি হারান। তখন তার আম্মা স্বপ্নে দেখেন ইবরাহিম আ.কে। ইবরাহীম আ. তাকে বলছেন, ওহে, তুমি বেশী করে দোয়া কর। তোমার দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তোমার ছেলের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিবেন।

সকালে দেখা গেল, তার ছেলে ঠিকই দৃষ্টি শক্তি  ফিরে পেয়েছেন। ছেলের দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসাতে মা অনেক খুশী হলেন।

ইমাম বুখারীর আম্মাকে তার জন্যে অনেক দোয়া করতেন। তার জন্যে অনেক কাঁদতেন। তিনি তার ছেলেকে মসজিদে দিয়ে আসতেন। বড় আলেম ওলামাদের মজলিসে পাঠাতেন।

(তথ্য সংগ্রহ : সামাজিক মাধ্যম থেকে)

 

পূর্ববর্তি সংবাদছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে এক কলেজের শিক্ষার্থীকে পেটালেন আরেক কলেজের শিক্ষক
পরবর্তি সংবাদআর্থিক অনিয়মের দায়ে সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্টের জেল