“হুজুরদের তো পেট নাই”

এনাম হাসান জুনাইদ ।।

“হুজুর, আমি অভিভূত। মুগ্ধতা প্রকাশের ভাষা আমার নেই। আমাদের পেছনে উস্তাদজী এত মেহনত করেন যে, বলে শেষ করা যাবে না” এভাবে অশ্রুসজল চোখে নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করছিলেন জনাব মাহফুজুর রহমান।

জনাব মাহফুজুর রহমান একজন সরকারি রিটায়ার্ড পারসন। ১৮ বছর আগে সরকারি জুট মিলের একজন ম্যানেজার হিসাবে  অবসর গ্রহণ করেছিলেন তিনি। একমাত্র ছেলে দেশের বাইরে থাকে। অবসর জীবনটা কাজে লাগানোর জন্যে মিরপুর ১২ নম্বরের বায়তুল জান্নাত মসজিদের বয়স্ক মাদরাসায় নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত শেখেন।

গত মঙ্গলবার(৩ডিসেম্বর) মসজিদে নতুন ছাত্রদের কায়দা নেয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এভাবেই তিনি অশ্রুসজল চোখে নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন।

সাদা দাড়ি ও সাদা জামা পাজামায় সুশোভিত বৃদ্ধকে ভরা মজলিসে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, শিক্ষকদের কোন জিনিসটা আপনার খুব ভালো লেগেছে?

তিনি বললেন, তারা একেকটা অক্ষর পড়ানোর জন্যে আমাদের পেছনে এত শ্রম দেন যে আমার খুব মায়া হয়। আমরা তো বুড়া হয়ে গেছি। উচ্চারণ করতে  চাইলে পারি না। কিন্তু তারা একটুও বিরক্ত হন না। আশা ছাড়েন না। ক্লান্তি প্রকাশ করেন না। হাসিমুখে আবার উচ্চারণ করেন। তাদের এই নিরলস পরিশ্রম আমাকে মুগ্ধ করেছে।

“কিন্তু বাস্তবতা হল, তাদের এই পরিশ্রমের বিনিময়ে তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু আমরা দেই না। সম্মান বলতে কী আমরা বুঝিই না।” যোগ করেন ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ।

“যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা থাকত যেমন আমাদের আছে তাহলে একটা কথা ছিল। খবর না নিলেও চলত। কিন্তু তাদের সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার আমরা কোনো খোঁজ  নেই না। ভাবখানা যেন এই যে, আমাদের হুজুরদের পেটই নাই।” দু:খ করে বলছিলেন জনাব মাহফুজ।

অনুষ্ঠানে নতুন ছাত্রদের কায়দার সবক উদ্বোধন করার পাশাপাশি নিয়মিত মাসিক উপস্থিতির জন্যে বয়স্ক ছাত্রদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেছেন মসজিদের খতীব, মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকার উস্তায মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া। পুরস্কার পেয়েছেন নানা বয়সের এবং নানা পেশার প্রায়  ৩০জন।

লাগাতার তিন মাস উপস্থিত থাকার জন্যে যিনি পুরস্কার পেয়েছেন তাকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, তিনি কলা বিক্রি করেন। তার কায়দা পড়া শেষ পর্যায়ে। তিনি শীঘ্রই কুরআন শরীফ নিবেন।

বয়স্ক মাদরাসার সিলেবাস সম্পর্কে মাওলানা ইয়াহইয়া বলেন, এই মাদরাসার সিলেবাস শুধু কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করা নয়। এ মাদরাসার সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত কুরআন তেলাওয়াত শেখার পাশপাশি সহীহ শুদ্ধভাবে নামাজ শেখা, নামাজের দোয়া দুরুদ শেখা, দৈনন্দিন জীবনের সুন্নত শেখা, চলতে ফিরতে প্রয়োজনীয় দোয়া শেখা, দৈনন্দিন জীবনের মাসআলা শেখাও আমাদের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। মোট কথা- দ্বীন শেখা আমাদের উদ্দেশ্য।

পূর্ববর্তি সংবাদনোয়াখালীতে ট্রাকচাপায় সিএনজির দুই যাত্রী নিহত
পরবর্তি সংবাদবৃটেনে নির্বাচন ২০১৯: ধর্ম এবার প্রচারণার ইস্যু