ইফায় ধর্মীয় বই ছাপানোর নামে ১৭ কোটি টাকা লোপাট

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা) ধর্মীয় বই ছাপানোর নামে ১৭ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে সিভিল অডিট অধিদফতরের বিশেষ নিরীক্ষায়।

পবিত্র কুরআনুল কারীমের কপি কম ছাপিয়ে, আরবি ভাষা শিক্ষার টিচার্স গাইড না ছাপিয়ে ইফার মহাপরিচালক (ডিজি) লিখিত বইয়ের রয়্যালিটির নামে এই টাকা তছরুপ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ কপি কুরআন শরিফ কম ছাপিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় প্রায় দুই কোটি টাকা।

ইফার ২০০৯-২০১৮ অর্থ বছরের ১০ বছরের এই নিরীক্ষায় ৯৬টি খাতে সর্বমোট ৭৯৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে। তার মধ্যে কুরআন শরিফ মুদ্রণসহ পাঁচটি খাতে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।

প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারিক কর্মকর্তা সামীম মোহাম্মাদ আফজল ২০০৯ সাল থেকে ইফার ডিজির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর তার সর্বশেষ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবে।

গত ৯ জুলাই ’১৯ থেকে ১০ অক্টোবর ’১৯ পরিচালিত এই নিরীক্ষার খসড়া রিপোর্টটি গত ২৪ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে এগ্রিড মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং অডিট সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিভিল অডিট অধিদফতরের উপ-পরিচালক এম এম নিয়ামুল পারভেজের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের টিম এই নিরীক্ষা পরিচালনা করে। এতে ইফার ১২টি কার্যালয়ের ২০০৯-১৮ সালের বরাদ্দ ও ব্যয় খতিয়ে দেখা হয়।

অডিট টিমের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইফার বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগের সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। তবে ফেরত দেওয়া অর্থ সমন্বয় করা হয়েছে। আরো কিছু ফেরত পেলে তাও সমন্বয় করা হবে। ইতোমধ্যেই এগ্রিড মিটিং হয়ে গেছে। ওখানেই খসড়া রিপোর্টটিই চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ছোটখাট কিছু পরিবর্তন করে চূড়ান্ত রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া প্রক্রিয়াধীন।

রিপোর্টে অনিয়মের পুরো টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত প্রদান এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

নিরীক্ষার প্রাথমিক প্রতিবেদনে ইফার ১৩৪টি খাতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে ইফার জবাব চাওয়া হয়। এরপর ইফা ডিজির পক্ষ থেকে কয়েক দফায় প্রায় ৮২ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়াসহ জবাব দেয়। জবাবগুলো আবার খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইফার কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসে অডিট টিম এবং সেটি চূড়ান্ত করা হয়। এতে অনিয়মের খাতের সংখ্যা কমে আসলেও অনিয়মের টাকার অংকে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।

২০১৭-১৮ আর্থিক সালে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮০ কপি কুরআন সরবরাহের জন্য ইফার প্রেসকে সরাসরি কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রেস থেকে ৫ লাখ কপি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮০ কপি মুদ্রণের বিল বাবদ ১১ কোটি ৬০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধ করা হয়। এতে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। এই আত্মসাতের বিষয়ে ইফা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় নিরীক্ষার সুপারিশে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং আত্মসাতের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে।

পূর্ববর্তি সংবাদ`শুক্রবারের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে যমুনা টিভির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন’
পরবর্তি সংবাদঈদগাহের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় মসজিদ নির্মাণ কি বৈধ?