পণ্যের কৃত্রিম মজুদ ও সরবরাহ নিয়ে যা বললেন দুই ইসলামি চিন্তাবিদ

ওলিউর রহমান ।।

পেঁয়াজ বাংলাদেশের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। আমরা জীবন ধারণের জন্য সাধারণত যে খাবার গ্রহণ করি পেঁয়াজ তার অন্যতম উপাদান। অথচ পেঁয়াজের দাম বর্তমানে সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কালকে পর্যন্ত পাওয়া খবরে দেখা গেছে কোথাও কোথাও ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। এটা পেঁয়াজের যা স্বাভাবিক দর ৩০-৪০ টাকা তা থেকে প্রায় দশগুণ অতিরিক্ত।

মাসখানেক যাবত বাজারে পেঁয়াজের দাম চড়া। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে নানারকম আশ্বাস বাণী শোনানো হলেও দর কমার কোনো খবর নেই।

আমদানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দেশের উপর নির্ভরতা এবং দেশীয় অসাধু ব্যবসায়ীদের গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করাকে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়া এবং এই দরবৃদ্ধি অব্যাহত থাকার কারণ হিসেবে অনেকে উল্লেখ করছেন।

চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে ব্যবসায়ীদের ঘরে ঘরে পেঁয়াজের গুদাম থাকার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ই দেখা যায় দামবৃদ্ধির জন্য কাঁচা বা শুকনো পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে গুদামজাত করে রাখা হয়। মূল্যবৃদ্ধির জন্য দ্রব্য-পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা ধর্মীয় এবং মানবিক দিক থেকেই মারাত্মক অন্যায়।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মারকাযুদ্দাওয়া আল ইসলামিয়ার শিক্ষক মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, স্বাভাবিক যে গুদামজাতকরণ ইসলামে তার ক্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে মূল্যবৃদ্ধির জন্য যে পণ্য গুদামজাত করা হয় এটা মারাত্মক গোনাহের কাজ। হাদিসে কঠিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে এ ব্যাপারে। মুসলিম শরিফে আছে لا يحتكر الا خاطىٔ ‘গোনাহগার ব্যক্তিই কেবল গোদামজাত করতে পারে’।

মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ বলেন, আমরা হাদিসের কিতাবে দেখতে পাই, হযরত উমর রাযি. খলিফা থাকাকালে বাজার মনিটরিং করতেন। কোথায় এ ধরনের গুদামজাতকরণের খবর পেলে শক্তহাতে তা দমন করতেন। তাই প্রশাসনের দায়াত্বশীলদের উচিত স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা। হঠাৎ করে কোনো জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের জীন বিপণ্ন ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই ব্যবসায়ীদেরও উচিত হবে পরকালে শাস্তির ভয় অন্তরে জাগ্রত রেখে এ অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা।

এদিকে বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দেশের উপর নির্ভরতা দরবৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য কারণ। আমরা দেখেছি ভারত পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর মিশর, মিয়ানমার, তুরস্ক, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এই আমদানিটা যদি স্বাভাবিক অবস্থায়ও জারি থাকতো তাহলে এই সঙ্কট দেখা দিতো না। কিংবা যদি বাজারে প্রবাহ থাকা অবস্থায়ই বিকল্প চিন্তা করা হত তাহলেও এই সঙ্কট স্থায়ী হতো না। তাই সরকারের নীতি নির্ধারকদের কর্তব্য হবে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এক দেশের উপর নির্ভরতা পরিহার করেেএকাধিক দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া।

প্রত্যেকেই তার কর্মের ব্যাপারে দায়িত্বশীল উল্লেখ করে এই লেখক আলেম বলেন, হাদিসে বলা হয়েছে الا كلكم راع وكلكم مسؤول عن رعيته ‘প্রত্যেকেই তার কাজের বাপারে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যককেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে’। ‘সুতরাং প্রশাসনের দায়িত্বশীল এবং পুঁজিপতি ব্যবসায়ীরাও তাদের কর্ম বা সেবার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেন’ এটা মনে রেখেই সবার দায়িত্ব পালন করা উচিত, বলেন এই আলেম লেখক।

মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ বলেন, শুধু পেঁয়াজ নয় মাঝেমাঝেই বিভিন্ন কাঁচা ও শুকনা পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বেড়ে যেতে দেখা যায়। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব দেশের সর্বস্তরের মানুষের উপর পড়ে। ব্যবসা তো কেবল ব্যবসা না, ব্যবসা একটি সেবাও। তাই ব্যবসায়ীরা যদি সেবার মনোভাব রাখেন আর প্রশাসন যদি বাজারে পণ্যের প্রবাহ ধরে রাখতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় তাহলেই দেশের মানুষ স্বস্তি ও শান্তি পাবে।

পূর্ববর্তি সংবাদপেঁয়াজের উচ্চমূল্যের জন্য সরকারের ব্যর্থতাই দায়ী: আল্লামা কাসেমী
পরবর্তি সংবাদভারতের মুসলমানদের মধ্যে বাবরি মসজিদ রায় রিভিউর দাবি জোরালো হচ্ছে