এনাম হাসান জুনাইদ ।।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত শনিবার ষোল শতকের প্রাচীন বাবরি মসজিদকে মন্দিরে পরিণত করার জন্যে হিন্দুদের হাতে তুলে দিয়েছে। তবে পাকিস্তানের শিখ হিন্দুরা মনে করছেন, লাহোরের শহীদগঞ্জ গুরুদুয়ারা থেকে ভারতের আদালতের শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল।
বাবরি মসজিদ এবং লাহোর শহীদগঞ্জ গুরুদুয়ারার মাঝে অনেক মিল রয়েছে। দুটোর জন্যেই অনেক মামলা মোকদ্দমা করতে হয়েছে। তবে পার্থক্য যা হয়েছে সেটা মামলার রায়ের বেলায়।
শিখরা তাদের মসজিদ দখল করে বানানো গুরুদুয়ারা নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে। আর মুসলমানদের হাত থেকে গোড়া থেকেই মসজিদ হিসাবে নির্মিত বাবরি মসজিদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে ১৬৫৩ লাহোরের কোতোয়াল আবদুল্লাহ খানের হাতে নির্মিত হয় লাহোর শহীদগঞ্জ মসজিদ। ১৭৯৯ পর্যন্ত এটি মসজিদ হিসাবেই বহাল থাকে।
যখন রাজা রঞ্জিত সিংয়ের নেতৃত্বে শিখ সেনারা শহীদগঞ্জ দখল করে তখন তারা শহীদগঞ্জ মসজিদটিকে গুরুদুয়ারায় পরিণত করে। এবং মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়।
১৮৪৯ বৃটিশরা শিখদের পরাজিত করে লাহোর দখল করে। তখন মুসলমানরা শহীদগঞ্জ মসজিদ আগের অবস্থায় ফেরত দেয়ার আবেদন জানায় বৃটিশ আদালতে। কিন্তু বৃটিশরা মুসলমানদের আবেদন ৫১ বছর দেরি হওয়ার অজুহাতে প্রত্যাখ্যান করে।
১৯৪৭ সনে দেশ ভাগের সময় যখন শিখরা লাহোর ছেড়ে যেতে শুরু করে তখন হাতে গণা কয়েকজন শিখ শহীদগঞ্জ গুরুদুয়ারায় থেকে যায়। তখন যদি মুসলমানরা চাইতেন মসজিদ ভেঙ্গে নির্মিত গুরুদুয়ারাকে পুনরায় মসজিদ বানাবেন, তাহলে দুনিয়ার কোনো শক্তি ছিল না তাদেরকে বাধা দিবে। কিন্তু তারা সেটা করেন নি।
সেজন্যই বাবরি মসজিদ মামলার রায়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন শিখ নেতারা বলছেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, পাকিস্তানের কাছ থেকে ভারতের শেখা উচিত।
শুধু শহীদগঞ্জ গুরুদুয়ারাই নয়, ৫ বছর আগে পেশোয়ারে আরো একটি শিখ গুরুদুয়ারা পুনরায় উম্মুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় মুসলমানদের সহযোগিতায়। জানা গেছে, সম্প্রতি পাঞ্জাবেও আরও দুটি গুরুদুয়ারা উম্মুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় মুসলমানদের সহযোগিতায়।
এমন কি, যেদিন বাবরি মসজিদ মামলার রায় হল, ঠিক সেদিনই (শনিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে)ভারতের শিখ তীর্থযাত্রীদের পাকিস্তানে প্রবেশের জন্যে করতারপুর করিডোরের উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বাবরি মসজিদের রায়ে মুসলমানদের হেরে যাওয়ার পর একই দিনে শিখ তীর্থযাত্রীদের বিনা পাসপোর্টে ও বিনা মাসুলে কর্তারপুরে যেতে পারা এবং মোদি কর্তৃক কর্তারপুর করিডোর উদ্বোধন করা একদিকে মুসলমানদের জন্যে যেমন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত, তেমনি তা পাকিস্তানে বসবাসরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশেষত শিখ ধর্মাবলম্বীদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্যে হুমকি স্বরূপ।
সূত্র : আনাদুলু এজেন্সি