প্রাচীন যুগের সীরাত রচনা-৪ : যাদুল মাআদ

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব ।।

কিতাবটির পুরো নাম, যাদুল মাআদ ফী হাদই খাইরিল ইবাদ।

লেখক, শামসুদ্দীন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আবু বকর ইবনে আইয়ুব ইবনে কায়্যিমিল জাওযিয়্যা রহ.। সংক্ষেপে ‘ইবনুল কায়্যিম’ বা ‘ইবনু কায়্যিমিল জাওযিয়্যাহ’ নামেই তিনি প্রসিদ্ধ। মূলত ‘জাওযিয়্যাহ’ (আল-মাদরাসাতুল জাওযিয়্যাহ) একটি মাদরাসার নাম। তাঁর বাবা সেই মাদরাসার ‘কায়্যিম’ বা দায়িত্বশীল ছিলেন। সে হিসেবেই তাঁকে ইবনু কায়্যিমিল জাওযিয়্যা বা ‘জাওযিয়্যা মাদরাসার দায়িত্বশীলের ছেলে’ বলা হত।

৬৯১ হিজরীতে তিনি দামেস্কের একটি বনেদি ইলমী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা বাবার কাছে সমাপ্ত করার পর হাদীসের পাঠ গ্রহণ করেন শিহাব আন-নাবুলুসি রহ.-এর কাছে। এরপর ৭১২ হিজরীতে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর সান্নিধ্যে গমন করেন এবং ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় ১৬ বছর তাঁর সান্নিধ্যে থাকেন। এরমধ্যে তাঁর সঙ্গে জেলজীবনও বরণ করেন। দামেস্কে একটি দুর্গে প্রায় দুই বছর উস্তায ছাত্র বন্দি থাকেন। এরপর ৭২৮ হিজরীতে হযরত ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর ইন্তেকালের পর সেখান থেকে মুক্তি পান। তারপর ৭৫১ হিজরীর ১৩ রজব তিনি ইন্তেকাল করেন।

তাঁর বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী রহ. ও মুফাসসির ইবনে কাসীর রহ. প্রমুখ পৃথিবীখ্যাত মনীষীগণ।

তাঁর অর্ধশতাধিক গ্রন্থের মাঝে ‘যাদুল মাআদ’ গ্রন্থটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এতে তিনি স্বতন্ত্র ধারায় হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী সংকলন করেছেন। সীরাতের প্রসিদ্ধ অধ্যায় ও পরিচ্ছেদ বিন্যাসের পরিবর্তে মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মপদ্ধতি ও নীতি নির্দেশনার বিবরণ দিয়েছেন। সুবিস্তৃত এই কিতাবের শুরুতে সংক্ষেপে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম, বংশ, নবুওত, দাওয়াত, হিজরত এবং পরিবার বৃত্তান্ত ও ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে সারগর্ভপূর্ণ আলোচনা করেছেন। এরপর শুরু করেছেন ইবাদত অধ্যায়। এবং ধারাবাহিকভাবে অনেকটা ফিকহী অধ্যায়-বিন্যাসে সুবিস্তৃত ও নির্ভরযোগ্য আলোচনা করেছেন। আদাব, মুআমালাত, মুআশারাত, দাম্পত্য জীবন, এমনকি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়েও চমৎকার আলোচনা করেছেন।

নিঃসন্দেহে কিতাবটি ইসলামী কুতুবখানায় অপূর্ব অনুপম সংযোজন। এই কিতাব সম্পর্কে বিখ্যাত মনীষী সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেন, “কিতাবটি আমার সফরসঙ্গী এবং আমার উস্তাদ ও মুরব্বী। দ্বীনী কুতুবখানার এত ভালো প্রতিনিধিত্ব এক কিতাবে পাওয়া দুষ্কর। যদি কখনো আমাকে সকল ইলমী ও দ্বীনী কিতাবপত্র থেকে মাহরূম করে কেবল দুইটি কিতাব সঙ্গে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে আমি কোরআন মাজীদ ও যাদুল মাআদ সঙ্গে রাখব। এই কিতাব আমাকে নামায শিখিয়েছে, দুআ ও যিকির মুখস্থ করিয়েছে, সফরের আদব শুনিয়েছে, দিনযাপনের মাসনূন পদ্ধতি শিখিয়েছে এবং সুন্নতের প্রয়োজনীয় জ্ঞান দান করেছে।”- মেরে ইলমী আওর মুতালাআতে যিন্দেগী’র বরাতে ‘তালিবানে ইলম : পথ ও পাথেয়’, পৃষ্ঠা : ১৮৯-১৯০।

সবশেষে মনে রাখতে হবে, লেখক ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। তাই মাসায়েল বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি সেই মাযহাবকেই অবলম্বন করেছেন। আর বিদগ্ধজনদের মন্তব্য হলো, “মতানৈক্যপূর্ণ মাসায়েলের আলোচনায় কিতাবটির কোথাও কোথাও ইনসাফের সাথে সমাধানে পৌঁছা সম্ভব হয়নি”।

কিতাবটি আরবের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘মুআসসাসাতুর রিসালা’ থেকে শায়খ শুয়াইব আল-আরনাউত ও শায়খ আবদুল কাদের আল-আরনাউত রহ.-এর তাহকীকে চার খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।

 

পূর্ববর্তি সংবাদবিদেশে নারী শ্রমিক প্রেরণ: সংসদে তোপের মুখে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদশিল্পমন্ত্রী বললেন, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে