প্রাচীন যুগের সীরাত রচনা-৩ : সীরাতে ইবনে হিশাম

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব ।।

সীরাতে ইবনে হিশাম মূলত সীরাতে ইবনে ইসহাকেরই সংক্ষিপ্ত, সম্পাদিত ও পরিমার্জিত রূপ।

ইবনে হিশাম রহ.-এর পুরো নাম, আবু মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ইবনে হিশাম ইবনে আইয়ূব আল-হিমইয়ারী। তাঁর জন্ম তৎকালীন বিদ্যানগরী বসরায়। তবে পরবর্তীতে তিনি মিসরে গিয়ে ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর সাথে মিলিত হন এবং উভয়ে একত্রে আরবী ভাষা, সাহিত্য ও কবিতা চর্চা করেন।

মূলত ইবনে হিশাম রহ. ছিলেন ঐতিহাসিক এবং আরবী ভাষা, ব্যকরণ ও সাহিত্যের বিদগ্ধ পণ্ডিত। সীরাতে ইবনে ইসহাকের সংক্ষিপ্ত সংলকন ছাড়াও তাঁর রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে হিমইয়ার গোত্রের রাজন্যবর্গ ও বংশাবলী সম্পর্কিত কিতাব ‘আত-তীজান ফী মুলূকি হিময়ার’। সীরাত সম্পর্কিত দুর্লভ কবিতাসমূহের ব্যাখ্যায় ‘শরহু মা ওয়াকাআ ফী আশআরিস সিয়ারি মিনাল গারীব’। এবং কবিতার কিতাব ‘আল-কাসাইদুল হিমইয়ারিয়্যাহ’। ২১৮ হিজরীর ১৩ রবিউল আউয়াল তিনি মিসরের ‘ফুসতাত’ শহরে ইনতিকাল করেন।

তিনি ইবনে ইসহাকের শাগরেদ হযরত যিয়াদ আল-বাক্কায়ী (মৃত্যু ১৮৩ হি.) রহ.-এর সূত্রে ‘আস-সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ’ গ্রন্থটি বর্ণনা করেন। অর্থাৎ ইবনে ইসহাকের রচনার অর্ধ শতাব্দিকালের মধ্যেই তিনি কিতাবটির কাজ করেন।

এতে তাঁর প্রধান কাজ ছিলো সংক্ষেপণ। সেজন্য প্রথমে সৃষ্টির শুরু থেকে নবী হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামের আগ পর্যন্ত ইতিহাস বাদ দেন। এমনিভাবে হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশধরদের ইতিহাস এবং অন্যান্য যেসব কাহিনীর সাথে সীরাতের কোনো সম্পর্ক নেই সেগুলোও বাদ দেন। তাছাড়া আদ, সামূদ ও অন্যান্য জাতির সেইসব কবিতাও বাদ দেন যেগুলোর বর্ণনা-বিশুদ্ধতার বিষয়ে তাঁর সন্দেহ রয়েছে।

কিতাবটির কোথাও কোথাও তিনি কিছু সংযোজন সংযুক্তিও করেন। সেক্ষেত্রে—قال ابن هشام ‘ইবনে হিশাম বলেন’ বাক্যের মাধমে কথা শুরু করেন।

সাধারণত সংযুক্তি হয়েছে ইবনে ইসহাকের বর্ণনার কোনো ত্রুটি তুলে ধরা কিংবা কোনো দুর্বোধ্য বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়া অথবা উল্লেখিত বর্ণনার বিপরীত কোনো বর্ণনা পেশ করার ক্ষেত্রে।

গবেষক ঐতিহাসিকদের কাছে পরবর্তীতে হযরত ইবনে হিশাম রহ.-এর সংকলনটিই সীরাতে ইবনে ইসহাক নামে পরিচিতি লাভ করে। এই কিতাবটিই প্রাচীনকাল থেকে সীরাত পাঠক ও গ্রন্থকারদের জন্য প্রধান প্রামাণ্য গ্রন্থরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে। ফলে তার বেশ কিছু শরহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও টিকাগ্রন্থ রচিত হয়েছে। তন্মধ্যে আবুল কাসেম আবদুর রহমান আস-সুহাইলী (মৃত ৫৮১ হি.) রহ.-এর ‘আর-রওযুল উনুফ’ ব্যাখ্যাগ্রন্থটি বিস্তারিত এবং সুন্দর। বিখ্যাত হাদীস ব্যাখ্যাতা আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (মৃত্যু ৮৫৫ হি.) রহ.ও ‘কাশফুল লিসাম ফী শরহে সীরাতে ইবনে হিশাম’ নামে তার একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেন। এছাড়া এই সীরাতে ইবনে হিশামকে পদ্যে রূপ দিয়েও কিতাব রচিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কিতাব হলো ‘নযমু সীরাতি ইবনে হিশাম’। এটি রচনা করেন হিজরী সপ্তম শতকের মনীষী ফাতাহ ইবনে মূসা আল-মাগরিবী (৬৬৩) রহ.।

মূল সীরাতে ইবনে হিশাম আরবের বহু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্নজনের তাহকীকে প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাভাষায়ও কিতাবটির অনুবাদ হয়েছে।  হযরত মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম সাহেবসহ মোট চারজন অনুবাদক কিতাবটি অনুবাদ করেন। যা ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে চার খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তার শেষ দুই খণ্ড সম্পাদনা করেছেন হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুম।

পূর্ববর্তি সংবাদজাবি ভিসির দুর্নীতির প্রমাণ শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে
পরবর্তি সংবাদসন্ধ্যায় সুন্দরবন দিয়ে খুলনা অতিক্রম করতে পারে ‘বুলবুল’