উইঘুর মুসলিম নারীদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করছে চীন

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: চীনে বসবাস করা মুসলিম সম্প্রদায়ের নাম উইঘুর। তারা চীনে বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এর আগে মুসলিম সম্প্রদায়টির সাধারণ মানুষের শরীর থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। আর এবার পাওয়া গেল আরো বড় এক অভিযোগ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে উইঘুর সম্প্রদায়ের বিবাহিত নারীদের যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হচ্ছে। একদিন নয়, প্রতিদিনই তাদের বাধ্য করা হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর সম্প্রদায়ের বিবাহিত নারীদের সরকারি কর্মকর্তাদের অফিসে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়। তাদের বাধ্য করা হয় কর্মকর্তাদের রুমে যেতে। আর ওই নারীরা যখন সরকারি কর্মকর্তাদের রুমে যান তখনই তাদের যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করা হয়। আর এই সময় তাদের স্বামীদের আটক রাখা হয় প্রদেশটির ডিটেনশন ক্যাম্পে।

চীনে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের কারণে চীনা সরকারের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। চীন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা বিপুল সংখ্যক উইঘুর মুসলিমকে কতোগুলো বন্দি শিবিরের ভেতরে আটকে রেখেছে। গত অগাস্ট মাসে জাতিসংঘের একটি কমিটি জানতে পেরেছে যে ১০ লাখের মতো উইঘুর মুসলিমকে পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং অঞ্চলে কয়েকটি শিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব ক্যাম্পে তাদেরকে ‘নতুন করে শিক্ষা’ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বেইজিং সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

চীনের পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত স্বর্ণ, তেল ও গ্যাসসম্পদে সমৃদ্ধ শিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা চীনা নয়, তুর্কি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত উইঘুর ভাষায় কথা বলেন।

বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এসব শিবিরে বন্দিদের মান্দারিন ভাষা শিখতে বাধ্য করা হয়। কমিউনিস্ট পার্টির প্রশংসার কথা বলা এবং তাদের সঠিক আচরণ পরিচালনার নিয়মগুলো কঠোরভাবে মনে রাখতে বাধ্য করা হয়। এ অভ্যাসগুলোর অংশ হিসেবে চীন সরকার সাংঘর্ষিকভাবে জিনজিয়াংয়ের উইঘুর সংস্কৃতি ও জাতিগত সত্তাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই শিক্ষাশিবিরের পাশাপাশি উইঘুর শিশুদের ক্যাম্প ও স্কুল রয়েছে, যেখানে তাদের পরিবার, ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি থেকে আলাদা করে ফেলা হয়।

আর এসব নির্যতানের মধ্যে নতুন যোগ হলো উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায় নারীদের ওপর নির্যাতন। তাদের সবাইকে বাধ্য করা হয় প্রদেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের রুমে গিয়ে তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেতে। এর আগে তাদের গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। এসময় কেউ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আবার কেউ যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। স্থানীয় মানবাধিকার গ্রুপ ও আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এগুলো সাধারণ ঘটনা। সরকার যে ব্যাপক নির্যাতন চালায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মুসলমান নারীদের সন্তান জন্মদান ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া।

সরকারি কর্মকর্তাদের রুমে গিয়ে তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি চীন। এর আগে তারা জানায়, ‘জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসীদের অপরাধমূলক তৎপরতা’ মোকাবেলা করছে চীন। জেনেভায় ২০১৮ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের এক অধিবেশনে চীনা কর্মকর্তা বলছেন, ১০ লাখ উইঘুরকে বন্দি শিবিরে আটকের রাখার খবর ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’। কিন্তু তারপরে চীনের একজন কর্মকর্তা লিও শিয়াওজুন বলেন, চীন সেখানে কিছু প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছে যেখানে লোকজনকে নানা ধরনের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তি সংবাদইফা ডিজি সামীম আফজালসহ ১০ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব তলব
পরবর্তি সংবাদ৮ বাংলাদেশিকে ভারতীয় জেলে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ