ধানমন্ডিতে জোড়া খুন, কারণ নিয়ে যা বলল আসামী

ইসলাম টাইমস ডেস্ক : রাজধানীর ধানমণ্ডিতে জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া গৃহকর্মী সুরভী আক্তার নাহিদা জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করেছে তবে কারণ হিসাবে সে যা বলছে   তা পুলিশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সুরভী পুলিশকে বলেছে, বাসা থেকে বের হতে না দেয়ায় সে গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগম (৬৫) এবং তার অপর গৃহকর্মী দিতিকে (১৮) গলা কেটে হত্যা করে। তবে এই কারণে খুনের ঘটনা ঘটেছে- এটা বিশ্বাসে নারাজ পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বিষয়টি আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখছেন। এদিকে জোড়া খুনের ঘটনাটি রোববার রাতেই ধানমণ্ডি থানা পুলিশ থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্থানান্তর হয়েছে।

পুলিশের ধানমণ্ডি জোনের এডিসি আবদুল্লাহেল কাফি বলেন, ‘সুরভী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জোড়া খুনের কথা স্বীকার করেছে। মামলাটি এখন গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।’

শুক্রবার রাতে ধানমণ্ডির ২৮ নম্বর (নতুন ১৫) রোডের এক ভবনের পঞ্চম তলা থেকে গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান টিমটেক্স গ্র“পের এমডি ও ক্রিয়েটিভ গ্র“পের ডিএমডি কাজী মনির উদ্দিন তারিমের শাশুড়ি আফরোজা বেগম (৬৫) এবং তার গৃহকর্মী দিতির (১৮) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের দু’জনকেই গলা কেটে হত্যা করা হয়। শুরু থেকেই সন্দেহ করা হচ্ছিল গৃহকর্মী সুরভীর হাতেই তারা খুন হন। ঘটনার দিনই ধানমণ্ডির পানের দোকানদার আতিকুল হক বাচ্চুর মাধ্যমে কাজে যোগ দিয়েছিল সুরভী। হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর রোববার সন্ধ্যায় আগারগাঁও বস্তি থেকে গৃহকর্মী সুরভী আক্তার নাহিদাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সুরভী দাবি করেছে, বাচ্চুর মাধ্যমে শুক্রবার ওই বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেয় সে। বাচ্চু বাসা থেকে বের হওয়ার পর সুরভীও চলে যেতে চায়। ওই সময় বাসার পুরনো গৃহকর্মী দিতি বাধা দিলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন সুরভী রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে দিতির গলা, পিঠ আর বুকে আঘাত করে।

এরপর সুরভী বাসার অপর কক্ষে গিয়ে আফরোজাকে বলে, সে এই বাসায় কাজ করবে না। চলে যাবে। আফরোজা তখন তার কাছে জানতে চায়, অন্য ঘরে দিতি চিৎকার করল কেন। সুরভী তখন আফরোজাকে জানায়, সে চলে যেতে চাওয়ায় দিতি বাধা দিয়েছে। এ নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। এ সময় আফরোজাও তাকে বলেন, বাচ্চু তোকে এখানে রেখে গেছে। সে বলেছে তোকে যেতে না দিতে। এখন তুই যেতে পারবি না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আফরোজার গলায়, ঘাড়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে সুরভী। এই ঘটনার পর সে যখন বাসা থেকে বের হয়ে আসছিল, তখনও আফরোজা বেঁচে ছিলেন।

কর্মকর্তারা আরও জানান, বাসা থেকে বের হতে বাধা দেয়ার কারণে জোড়া খুন করা হয়েছে- সুরভীর এই দাবি তাদের কাছে পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। সে মানসিক ভারসাম্যহীনও হতে পারে। মানসিক ভারসাম্যহীন লোকজন এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। তবে এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না বা এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না- বিষয়টি এখনও পুরোপুরি খোলাসা হয়নি।

আফরোজার জামাতা কাজী মনির উদ্দিন তারিমের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডের সময় তার শাশুড়ির বাসা তছনছ করা হয়েছে। টাকা, তিনটি ফোন, সঞ্চয়পত্র, সোনাসহ অনেক মূল্যবান জিনিস খোয়া গেছে। মামলাতেও মালামাল খোয়া যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ হয়েছে।

তবে সুরভীর কাছ থেকে পুলিশ কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। সুরভী পুলিশের কাছে দাবি করেছে, ওই বাসা থেকে একটা আইফোন সে নিয়েছিল। চার হাজার টাকায় সেটি বিক্রি করে দিয়েছে সে। সেই টাকার অধিকাংশই সে খরচ করে ফেলেছে।

পূর্ববর্তি সংবাদবাউফলে পরীক্ষায় নকল করা শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করে লাঞ্ছিত শিক্ষক
পরবর্তি সংবাদখোকার লাশ আসবে বৃহস্পতিবার