রূপনগরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: রূপনগরে বেলুনে গ্যাস ভরার সময় বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে পৌঁছেছে। এ ঘটনায় আরও ২০ জন আহত হয়েছেন।  বুধবার বিকাল ৪টার দিকে মনিপুরের ১১ রোডের মাথায় এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী মোবারক জানান, সিলিন্ডারে নিজেই গ্যাস তৈরি করে সোহেল। ভেতর পানি এবং ক্যামিকেলের মিশ্রণ ঘটিয়ে গ্যাস তৈরি করে সে। পরে ওই গ্যাস বেলুনে ভরা হয়। ঘটনার ৫ মিনিট আগে আমি মনিপুর স্কুলে সামনে আসি। সিলিন্ডারের মুখ গিয়ে ধোয়া বের হচ্ছিল। এ সময় সোহেল সিলিন্ডারের মুখ খুলে ছাই এবং পানি ঢালে। পরে সেখানে লাঠি দিয়ে গুতু দেয়। এ সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের সময় সোহেলের শিশু সন্তানও ঘটনাস্থলে ছিল। তারা দুইজনই আহত হন। সোহলের ভুরি বের হয়ে যায়। এ সসময় পেটে হাত দিয়ে ধরে দ্রুত দৌড়ে রিকশা নিয়ে একাই স্থানীয় হাসপাতালে যায়।

অপর প্রত্যক্ষদর্শী সাকিব জানায়, আমরা ৩ বন্ধু রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এ সময় দেখি একজন লোককে (সোহেল) ঘিরে অনেকগুলো শিশু দাঁড়িয়ে আছে। কৌতুহলবশত সেখানে গিয়ে দেখি, একটি সিলিন্ডারের ভেতর পানি, ছাই এবং ক্যামিকেল দিয়ে গুতোগুতি করছে ওই লোক। তাকে মামা সম্ভোধন করে বলি, এটা তুমি কী করছো? সে কোনো উত্তর দেয় না। পাশ থেকে একজন উত্তর দেয় ওই লোক (সোহেল) বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করে। গ্যাস শেষ হয়ে গেছে। তাই সিলিন্ডারে গ্যাস তৈরি করছে। এ কথা শোনার পর আমার ৩ বন্ধু সেখান থেকে চলে যাই। এর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটে। দ্রুত এসে দেখি ঘটনাস্থলে হতাহত অবস্থায় ৭ জন পড়ে আছে। এর মধ্যে ৪ জনই মৃত।

একজন নারীর হাত ছিটকে এসে আমার সামনে পড়ে। ওই নারী ছিল অজ্ঞান অবস্থায়। একজন শিশু ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায় লাফাচ্ছিল। একজন মাদ্রাসাছাত্রকে নারী-ভুরি বের হওয়া অবস্থায় দেখি।

জয় নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রূপনগর ১১ নম্বর সড়কে দুই-তিন দিন পরপরই গ্যাস বেলুন বিক্রি করতে আসতেন এক ব্যক্তি। আসা মাত্রই তাকে ঘিরে ধরত ফজর মাতবরের বস্তির শিশুরা। বরাবরের মতো বুধবারও বেলুন বিক্রেতার গাড়িটিকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিল শিশুরা। সেটিই কাল হলো তাদের। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মুহূর্তেই ঝরে গেছে পাঁচ শিশুর তাজা প্রাণ।

জয় জানান, একটি ভ্যানগাড়িতে করে ওই ব্যক্তি মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গ্যাস বেলুন বিক্রি করতেন। বুধবার বিকেলে রূপনগর ১১ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় ফজর মাতবরের বস্তির সামনে বেলুন বিক্রি করতে আসেন তিনি। তাঁকে দেখামাত্রই বস্তির শিশুরা তাঁকে ঘিরে ধরে। এ সময় সিলিন্ডারে পাউডার জাতীয় কিছু একটা ভরছিলেন ওই বেলুন বিক্রেতা। এর পরপরই হঠাৎ বিকট শব্দে সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে থাকা ১০-১২ জন প্রায় ১৫ ফুটের মতো ছিটকে পড়েন। পেটে আঘাত পাওয়া আরেক শিশু দৌড়ে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরই সে লুটিয়ে পড়ে। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয় ঝালমুড়ি বিক্রেতা মো. হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের স্থান থেকে কিছুটা দূরে আমি ঝালমুড়ি বিক্রি করি। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ওই বেলুন বিক্রেতা ভ্যান নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালে আমি তাঁকে চলে যেতে বলি। এরপর একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে তিনি একটি টিনশেডের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই।

বিস্ফোরণে আহত নারী জান্নাত বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম বলেন, বিকেলে বাজার করে ফেরার সময় ১১ নম্বরের সড়কের মাথায় আসতেই বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে তাঁর স্ত্রীর ডান হাতের একটি অংশ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

পূর্ববর্তি সংবাদআগামীকাল ইসলামাবাদে প্রবেশ করবে পাকিস্তানের আযাদি মার্চ
পরবর্তি সংবাদউবারের বিরুদ্ধে বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের অভিযোগ