অন্যায় রোধে দুটি গুণ : হিম্মত ও হেকমত

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব ।।

আমরা আমাদের সমাজে প্রতিদিন বহু ভালো কাজের সাথে সাথে ছোট বড় কিছু অন্যায়-অপরাধও ঘটতে দেখি। তুচ্ছ বিষয়ে দেখি নিজেদের মধ্যেও অনেকে মজলুম হয়। অহেতুক নিন্দা তিরস্কারের কবলে পড়ে। অযথাই ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্র হয়।

এসময় তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেবল দর্শকের ভূমিকা পালন করি। কখনো নিজেও জড়িয়ে যাই সেই অন্যায়ে। নীরবতায়, সমর্থনে কিংবা সামান্য মুচকি হেসে।

অথচ ব্যক্তিবিশেষে সামান্য তিরস্কারেও অনেকে অনেক কষ্ট পায়। আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি এমন আচরণে খুবই অপমান বোধ করে। সে সময় ঠাট্টাকারীর প্রতি উপস্থিত কারো একটু হাসি ঠাট্টাকৃত ব্যক্তিকে আরো বেশি কষ্ট দেয়। মর্মাহত করে।

কেবল অন্যরাই যে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তা নয়। নিজেরাও মুখোমুখি হই। তখন তৃতীয়পক্ষ কারো একটু হাসিমুখ আমাদেরকেও তেমনি কষ্ট দেয়। মর্মাহত করে।

অথচ একজন মুমিনের মর্যাদা ও আত্মসম্মান খুবই মূল্যবান। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে-

وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ

তোমাদের সম্মান নষ্ট করা হারাম।–সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ১৭৩৯

আমাদের চোখের সামনে কারো সম্পদ বা সম্মান হরণ হলে আমাদের করণীয় কী, সেকথাও বর্ণিত হয়েছে হাদীস শরীফে। হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ

তোমাদের কেউ কোন অন্যায় দেখলে যেন নিজ হাতে প্রতিরোধ করে। সম্ভব না হলে যেন মুখে প্রতিবাদ করে। তাও সম্ভব না হলে যেন অন্তত মন থেকে ঘৃণা করে। এটা দুর্বলতম ঈমানের আলামত।–সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৭৯

আমরা একটু ভেবে দেখলেই বুঝব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের এর এই ছোট্ট একটি টুকরো আমাদের সমাজে কত অপরাধ মিটিয়ে দিতে পারে। কত অপরাধীকে অন্যায় জুলুম থেকে বাঁচাতে পারে। কত মজলুমকে নিরাপত্তা দিতে পারে। এত সহজ সুন্দর বলিষ্ঠ নির্দেশনা কে কবে দিতে পেরেছে এই পৃথিবীকে?

আমরা ভাবলে এটাও দেখব যে এই হাদীসের উপর আমল না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ সদিচ্ছার অভাব এবং নিছক অবহেলা। শক্তি সামর্থ্য প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকা সত্ত্বেও আমরা কেবল সামান্য সদিচ্ছার অভাবে এই হাদীস অনুযায়ী আমল করতে পারিনা। সামান্য সৎ সাহসের অভাবে সমাজ সংশোধনের এই পদক্ষেপে অংশগ্রহণ করতে পারিনা। সামান্য অবহেলায় নীরবতায় আমাদের সাথী সঙ্গীরাও আমাদের সামনে ছোট বড় অন্যায় করে প্রশ্রয় পায়। সামান্য অবহেলা সমাজে অপরাধ প্রবণতাকে উৎসাহিত করে। সেজন্য প্রয়োজন হাদীস শরীফের এই নির্দেশনাকে মনে রাখা। সে অনুযায়ী আমলের নিয়ত করা। এরপর হিম্মত করা এবং পরিস্থিতি উপযোগী অবস্থান গ্রহণ করা।

কোন পরিবেশে আমি কী করবো সেই কথাও বুাঝা যায় হাদীস শরীফের উপস্থাপন থেকে। আপনজনদের মাঝে কিংবা নিজের আয়ত্তাধীন ক্ষেত্রে নিজ হাতে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা। একটু দূরের ক্ষেত্রে মুখে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করা। এই দুইটি যেখানে অসম্ভব সেখানে অন্তত মন থেকে বিষয়টাকে ঘৃণা করা। অন্যায়কারীর প্রতি হাসিমুখ প্রদর্শন না করা। এইটুকু কাজ সত্যিই কঠিন কিছু নয়। প্রয়োজন শুধু হিম্মত ও সামান্য হেকমত। তাতে আমাদের সমাজ আরও সুন্দর হবে। অন্যায় মানসিকতা থেকে ভালো কাজের উৎসাহ উদ্দীপনা বাড়বে। আল্লাহ তায়ালা এইসব আমাদেরকে দান করুন। আমীন।

পূর্ববর্তি সংবাদ৬ দিনেও ফেসবুক নিশ্চিত করতে পারল না, বিপ্লবের আইডি কে হ্যাক করেছিল
পরবর্তি সংবাদচিকিৎসার জন্য জামিন পেয়েছেন নওয়াজ শরীফ, অবস্থা গুরুতর