পরিচ্ছন্ন অবস্থান নির্মোহভাবে ধরে রেখেছে ইসলাম টাইমস

মুফতি এনায়েতুল্লাহ ।।

মিডিয়ার সঙ্গে ঘর-সংসার প্রায় বিশ বছরের। এ সময়টায় মিডিয়াকেন্দ্রিক অনেক স্বপ্ন ভাঙতে দেখেছি, আবার তিলে তিলে গড়ে উঠতে দেখেছি মিডিয়া হাউজ। যেগুলো এখন মিডিয়া মোড়লে পরিণত হয়েছে। তবে লয় ও ক্ষয়প্রাপ্তের সংখ্যাই বেশি। টেলিভিশন হাউজ, পত্রিকার অফিস থেকে শুরু করে অনলাইনের বিলীন হওয়ার ধারা দেখতে দেখতে বেশ হতাশ। আসলে সবগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তা নয়; কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নানাভাবে। আর কিছু বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ।

একেকটি মিডিয়া হাউজ একেকটি স্বপ্নের কারখানা। এখানে ঠিক কতজনের স্বপ্ন মিশে থাকে সেটা সংখ্যায় বলা মুশকিল। কিন্তু সম্পাদক থাকেন এর মূলে। সম্পাদক ধীরে ধীরে পরিকল্পনা করে অসামান্য শ্রম, মেধা খরচ, সৃজনশীলতা, সর্বোপরি জনকল্যাণ ও ঐকান্তিক দায়িত্ববোধের সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে একটি হাউজ দাঁড় করান। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা- মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও প্রয়োজনীয় কর্মীবাহিনী নিয়োগ দেওয়া থেকে সবকিছু সামাল দিতে হয়। নানা রূঢ় পরিস্থিতি, আশংকা, উদ্বেগ পায়ে ঠেলে, অনেক কিছু হজম করে স্বপ্ন বাস্তবায়নে একজন সম্পাদকের ত্যাগের কথা পাঠক কোনোভাবেই জানেন না।

পাঠক জানেন মন্তব্য করতে, কিংবা সমালোচনা করতে। অথচ ওই পাঠকের সামনে পরিবেশিত নিউজটি এ পর্যন্ত আসতে কী পরিমাণ ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে, সেটা তার অজানা। তারপরও এই পাঠকরাই কিন্তু পত্রিকার প্রাণ। তারা আছেন বলেই পত্রিকাগুলো টিকে আছে। সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ।

আগেই বলেছি যেকোনো পত্রিকার জন্য সম্পাদককে প্রাণভোমরা বলা চলে। তাকে হতে হয় গভীর স্বপ্নবিলাসী। তিনি নানাজনের মতকে একত্রিত করে জাগিয়ে তোলেন জনপদ, জনসমাজ, জনগোষ্ঠী এবং স্বদেশকে। সব ধরনের অহংবোধ ঝেরে, আত্মকেন্দ্রিকতাকে পেছনে ফেলে, স্বেচ্ছাচারিতা ভুলে জনমানসের সঙ্গে নিষ্কলুষ স্বচ্ছতা নিয়ে তাকে পথ চলতে হয়।  তার এই নির্মোহ অবিচল সংগ্রামের সমাহার ঘটে পত্রিকার পাতায় পাতায়। এভাবেই তার কীর্তিগুলো দেশ-কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় বিশ্ব সমাজে। তিনি হয়ে ওঠেন সবার কাছে অনুকরণীয়। অনুসরণীয় হয় তার প্রাগ্রসর চিন্তা-চেতনা, তার অনুধ্যান ও বিষয় বিশ্লেষণ। বরিত হন তিনি পাঠকের হৃদয়ে।

এমনই একজন প্রিয় মানুষ অগ্রজ শরীফ মুহাম্মদ। তাঁর স্বপ্ন, সাধনা আর চিন্তার মিশেলে গড়ে উঠেছে ইসলাম টাইমস। সংবাদের মানুষ হিসেবে ইসলাম টাইমসকে আমি শুরু থেকেই ফলো করি। এটা নিয়ে অল্পবিস্তর মতবিনিময়ও হয়েছে সম্পাদক শরীফ মুহাম্মদের সঙ্গে। তাঁর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছি, পোর্টালের প্রশংসা করেছি। এবার বলি প্রশংসার কারণ।

একটা কথা অনেকেই বলেন, কওমি ঘরানার মিডিয়া। আমি ইসলাম টাইমসকে সেভাবে দেখিনি। আমি এটাকে মূলধারার মিডিয়া হিসেবে দেখতে চেয়েছি। কিন্তু চরিত্রে থাকবে ভিন্নতা। না ধরুন, আনন্দবাজারের কথা। ওরা খবরের তলানিতে যেভাবে ঢুকে যায় তার ধারেকাছে নেই অন্যরা। আর এনডিটিভি ব্রেকিংয়ের উস্তাদ। এবার আপনি কোনটা রেখে কোনটা ফলো করবেন? আমি চেয়েছি ইসলাম টাইমসে এমনকিছু আয়োজন থাকুক যার আকর্ষণে পাঠক সেখানে আসবেই, এসেছেও।

এক বছর একটা মিডিয়াকে মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট সময় নয়। মূলধারার অনেক মিডিয়ার ইনভেস্টমেন্ট টাইম থাকে তিন থেকে পাঁচ বছর। সেক্ষেত্রে ইসলাম টাইমস এখনও ইনভেস্টমেন্ট পিরিয়ড অতিক্রম করছে বলা চলে। তারপরও পোর্টালটি বেশ পরিণত। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই ইসলাম টাইমস কওমি ঘারানার মিডিয়া। সেখানেও ইসলাম টাইমস তার পরিচ্ছন্ন অবস্থান নির্মোহভাবে ধরে রেখেছে।

আজকাল তো আমাদের চারপাশে অনেক পোর্টাল। বাহারি নাম, নানা আয়োজন। শুরুতেই তারা সাংবাদিকতা করা শুরু করে নিজেদের মধ্যে। নিজেদের ভেতরকার সংগঠন, দল ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা করেতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় আলোচনা, অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করে- যা হয়ে উঠে অস্বস্তির কারণ। এভাবে সমালোচকদের খাবার-খোরাক জুগিয়ে মাস তিনেক পর ফুরুৎ। কিন্তু নামের শুরুতে সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, উপদেষ্টা সম্পাদক লাগানোর হিড়িক চলতে থাকে, হতে থাকে ভিজিটিং কার্ডের ছড়াছড়ি। এসব কারণে অনেকে মিডিয়ায় ইনভেস্ট করতে সাহস পায় না। আবার নানা কটু কথাও শুনতে হয় মাঝে-মধ্যে।

এমন অস্থির মুহূর্তে ইসলাম টাইমস অন্তত নিজেদের ভেতরে সাংবাদিকতা দেখাতে আসেনি, নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য পোর্টালকে ব্যবহার করেনি। এটা অনেক বড় পাওনা। এটা ধরে রাখা জরুরি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এইক্ষণে ইসলাম টাইমসের কাছে এটাই প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে সবিশেষ ধন্যবাদ ইসলাম টাইমসের উদ্যোক্তাদের। আশা করি, তারা তাদের যুগচাহিদার সম্পূরক এমন ভাবনাকে হৃদয়ে জিইয়ে রাখবেন অনন্তকাল।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

পূর্ববর্তি সংবাদভিসির পদত্যাগের দাবি জানাল বুয়েট শিক্ষক সমিতি
পরবর্তি সংবাদ‘শিবিরের নাম দিয়ে মানুষ হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে’