প্রয়োজন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিডিয়ার সমন্বিত ব্যবহার

সৈয়দ শামছুল হুদা ।।

ইসলামের অন্যতম আদর্শ হলো দাওয়াত। দাওয়াত মানেই হলো কোন কিছুর প্রচার ও প্রসার। কুরআন ও হাদীসের বাণীর পাশাপাশি সত্যের প্রচার, সৌন্দর্যের প্রসার ইসলামের মহান আদর্শ।  আর যখন সত্যকে প্রচার করা হবে, তখন কোথাও মিথ্যা, অসুন্দর মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে সেটাকে যে রুখে দিতে হবে, সেই বিষয়টাও উঠে আসবে। একটা সময় পর্যন্ত এই প্রচার ও প্রচারণার কৌশলে খুব সীমিত কিছু মাধ্যম ব্যবহার করা হতো। যে কারণে সত্যের বাণী সর্বত্র পৌঁছতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হতো। সময়ের পরিবর্তনে প্রচার ও প্রচারণার উপকরণে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এই মাধ্যমগুলোকে ভালো কাজের জন্য ব্যবহারে ইসলামের মূলনীতিমালার জায়গা থেকে কোনো প্রকার বাধা বা আপত্তি নেই। এতদসত্ত্বেও ইসলামের যারা ধারক-বাহক তাদের পক্ষে এই জায়গাটায় রয়ে গেছে কিছু দুর্বলতা। ফলে সর্বত্র মিথ্যার জয়গান। মানুষ বিভ্রান্ত। জনসমাজে সৃষ্টি হয়েছে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এক ধরণের ধুম্রজাল। মানুষকে এই জাল ছিন্ন করে বের করে নিয়ে আসতে হলে প্রচার ও প্রচারণার আধুনিক প্রযুক্তিগুলোকে সত্যানুসারীদের আয়ত্ব করতে হবে। ব্যবহার করা শিখতে হবে। অসত্যের কালোমেঘ নির্মূলে এগিয়ে আসতে হবে।

এটা সত্য যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমে কাজ করতে যে পরিমান জনবল, অর্থবল, প্রযুক্তিবল থাকা প্রয়োজন তার কোনোটাই আমাদের নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ আছে তারাও এই জায়গাটায় সহযোগিতার হাত বাড়াতে বড়ই কৃপন। সত্যকে সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার মধ্যেও যে কল্যাণ আছে, পুণ্য আছে, সওয়াব আছে এই জিনিসটা আমরা ভুলেই গেছি। সামর্থবানদের মধ্যে এই বোধ-ভাবনা তৈরিতেও আমরা পিছিয়ে আছি। ফলে অনেকে এর প্রয়োজনীয়তাটা অনুভব করলেও যেভাবে কাজটা করা প্রয়োজন তা করে উঠতে পারেন না। সাধ ও সাধ্যের বিরাট ব্যবধান তৈরি করেছে এক ধরণের অসহায়ত্ব।  তারপরও যারা সত্য ও সুন্দরকে আধুনিক ভাষায় সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়োজনের মাধ্যমে চেষ্টা করেন টিকে থাকতে।  এই ক্ষেত্রেও আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার অভাবে কিছুদিন চলার পর আর  টিকে থাকতে পারি না।

মিডিয়া অঙ্গনে বড় কিছু করা ইসলামপন্থীদের পক্ষে একটি বড় চ্যালেঞ্জই বটে। তারচেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিষ্ঠিত শক্তিগুলোর দাপট, তাদের কূটকৌশল। তাদের নিয়ন্ত্রনেই রয়েছে মিডিয়ার মূল চাবিকাঠি। এ দেয়াল ভাঙ্গা যে আরো বেশি কঠিন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই কথাটা আরো বেশি কঠিন বাস্তব। এই দেশে প্রতিষ্ঠিত যে সকল মিডিয়া আছে তার সমকক্ষ হওয়া তো অনেক দূরের কথা, মাঝারি মানের একটা মিডিয়া হাউজও ইসলামপন্থীদের নেই। আমাদের আয়োজনগুলো খুবই ক্ষুদ্র আকারের, সীমিত পরিসরের।  আমাদের যদি কিছু একটা করতে হয়, একচেটিয়া ইসলাম বিরোধী মিডিয়াগুলোর প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করতে হয়, তাহলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যে আয়োজনগুলো আছে তাদের সকলের মধ্যে এক ধরণের অঘোষিত সমঝোতা গড়ে তুলতে হবে।

সারা দেশে আমাদের লোক রয়েছে। একেবারেই ক্ষুদ্র, নাম সর্বস্ব যে মিডিয়াগুলো আছে, তাদেরকে যদি একটু সক্রিয় করা যায়, তাদের মাধ্যমে সারাদেশে একটি মিডিয়া চেইন তৈরি করা যায়, তাহলেও হয়তো কিছুটা কাজ হতে পারে। নিজস্ব উৎস থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা, যে কোনো ঘটনার তথ্যানুসন্ধান করা এবং সকলের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা যায় তাহলে আশা করা যায়, কিছুটা হলেও জনবলের ঘাটতি, সংবাদ সংগ্রহের প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। নিজস্ব উৎস থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা, আর প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া হাউজ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার মধ্যে অনেক পার্থক্য।

ইসলাম টাইমস ২৪ডটকম ইতিমধ্যেই নিজেদের একটি অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তারা যদি সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট প্রিন্ট মিডিয়ার দায়িত্বশীলদের একটু অভিভাবকত্ব গ্রহন করে, অসংখ্য অনলাইন আছে, যেগুলো সীমিত সামর্থ নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে, তাদেরকে দিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করা, তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করা, তাদের সকলকে নিয়ে বছরে একবার  একসাথে বসার কোনো আয়োজন করে, তাহলে আশা করা যায় সবগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিডিয়া মিলে একটি অঘোষিত শক্তি তৈরি হবে। আমার মনে হয়, সব রকম প্রয়াসকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে পারলে মিডিয়া অঙ্গনে আমাদের উপস্থিতির বর্তমান হতাশাজনক দৃশ্যপট কিছুটা হলেও পরিবর্তন হবে। যে যেভাবে আছে, তাকে সেখানেই রেখে তাদের থেকে প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে, মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে ভালোটা বের করে নিয়ে আসা, কাউকেই তুচ্ছ না ভাবা, সবাইকে প্রেরণা যোগানোর কাজটি ইসলাম টাইমস করতে পারে।

 

লেখক: গ্রন্থকার, সম্পাদক, নুরবিডি ডটকম

সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট

পূর্ববর্তি সংবাদবিশ্ব মানচিত্র থেকে ইসরায়েল রাষ্ট্রকে মুছে দেওয়ার হুমকি ইরানের
পরবর্তি সংবাদগান্ধী চরিত্রের বর্ণবাদ ও নারীবিদ্বেষের কথকতা