দরজায় দাঁড়ানো সম্পাদকের মুখ

আতাউর রহমান খসরু ।।

কিছুটা গ্লানিবোধ নিয়ে আর অনেকটা স্মৃতিকাতর হয়ে ইসলাম টাইমসের জন্য লিখতে বসা। কারণ, ইসলাম টাইমসের সঙ্গে আমার পথচলা ছিল রাজসিক আর বিদায় ছিল অসৌজন্যমূলক। আমার প্রতি ইসলাম টাইমস কর্তৃপক্ষের যে আস্থা, স্নেহ ও আন্তরিকতা ছিল সে অনুযায়ী আমি সৌজন্য রক্ষা করে সেখান থেকে আসিনি। বিশেষত সম্পাদক মাওলানা শরীফ মুহাম্মদের আস্থা, স্নেহ ও সযত্ন প্রতিপালনের এক প্রকার অবমূল্যায়নই আমার দ্বারা হয়েছে ভেবে আমার ভেতর প্রচণ্ড রকম গ্লানিবোধ কাজ করে।  ভালোবাসার আদালতে আমি নিজেকে একজন ‘মুজরিম’-ই মনে করি। তবুও তিনি আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন -এই প্রত্যাশা চিরদিনই থাকবে।

ইসলাম টাইমসে আমার কর্মকাল মাত্র সাত মাস।  সংক্ষিপ্ত সময়টুকু নানা কারণেই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। সম্ভবত কর্মী হিসেবে আমিই সবার আগে ইসলাম টাইমসের আগমনী বার্তা পেয়েছিলাম, শুরু দিনগুলোর আবেগ ও উচ্ছ্বাসের অংশিদার ছিলাম আমিও, পোর্টালের জন্য কিছু ভালো কাজ করার সুযোগও আল্লাহ আমাকে দিয়েছিলেন।  তার চেয়েও বড় কথা হলো, ইসলাম টাইমসের পরিচয়ে কিছুদিন সত্য, সুন্দর ও ইসলামের পক্ষে নিবেদিত হয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম আমি।  টঙ্গী ইজতেমার মাঠে সন্ত্রাসী হামলা, স্বীকৃতি পরবর্তী বহুল আলোচিত শুকরিয়া মাহফিল ও পঞ্চগড়ের কাদিয়ানি ইজতেমার সময় ইসলাম টাইমসের সাহসী, বরং দু:সাহসী ভূমিকা কখনো ভোলার নয়।  অস্তিত্বের হুমকি জেনেও এভাবে ইসলামের পক্ষে কাজ করা যায় -এ সময় ইসলাম টাইমসে না থাকলে হয়তো জানা হতো না। দ্বীনের জন্য একজন সম্পাদকের নি:স্বার্থ আবেগ, সাহসী উচ্চারণ, নি:সংকোচ নির্দেশ,  রাগ-ক্ষোভ-অভিমান আমাকে মুগ্ধ; এবং একই সঙ্গে বিস্মিত করতো।  তার দ্বিধাহীন ও বলিষ্ঠ অবস্থান আমাদের দ্বিধা ও সংকোচ দূর করে দিত।  আমরা সাহস খুঁজে পেতাম। পিছুপা হওয়ার চিন্তা ঝেড়ে ফেলতাম মাথা থেকে।  আমার মনে হয়, দ্বীনের জন্য এই মমত্ব ও ভালোবাসা, এই নিষ্ঠা ও নিবেদন ইসলাম টাইমসের মূল শক্তি ও বৈশিষ্ট্য।

এখন যদি আমাকে প্রশ্ন করা হয়, ইসলাম টাইমসের কোন বিষয়টি তুমি ফিরে পেতে চাও? আমি বলবো, সম্পাদক শরীফ মুহাম্মদের সাহচর্য ও সান্নিধ্য। তার সযত্ন প্রতিপালন।  তিনি আমাদের শব্দ-বাক্যের ব্যবহার থেকে শুরু করে সমকালীন সমাজ, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের যে পাঠ দিতেন, তা অতুলনীয়। তার বিশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ ভঙ্গি ছিল হৃদয়গ্রাহী।  কখনো দস্তরখানে বসে,  কখনো ভুল সংশোধনের জন্য আবার কখনো স্বগোক্তির মতো একেকটা বিষয় খুলে খুলে বোঝাতেন।  এ দেশের আকাবির হজরত,  রাজনৈতিক নেতা,  ইসলামী রাজনীতি,  দ্বীনি আন্দোলনের অনেক কথাই আমি তার কাছে নতুন শুনেছি, নতুন করে শুনেছি।  মনের ভেতর জমে থাকা অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি, অনেক সংশয় দূর হয়েছে।  আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্থও হয়েছি।

কথা বলার একটি নিজস্ব মোহনীয় ভঙ্গি রয়েছে মাওলানা শরীফ মুহাম্মদের। তার কথায় আমরা শুধু সমৃদ্ধ হতাম না, আমাদের কর্মক্লান্তিও দূর হতো তাতে।  আমরা সান্ত্বনা পেতাম, আমাদের মনে স্বপ্ন জাগতো, মনে হতো প্রার্থিত দিন বুঝি খুব দূরে নয়।  হঠাৎ প্রশ্ন জাগতো মনে,  তিনি কীভাবে পারেন?  আমি এখনো দরজায় দাঁড়িয়ে কথা বলে যাওয়া প্রিয় সম্পাদককে মিস করি।  আমার মনে হয়, দীর্ঘকাল পর্যন্ত তা করবো।  আমার বিশ্বাস  ‘এই দরদি সম্পাদক সত্ত্বা’ ইসলাম টাইমসের মূল্যবান মূলধন।

ইসলাম টাইমসের প্রতি আমার একটি অনুযোগও আছে। নিজের মান, ভাবমূর্তি ও পাঠকের আস্থা ধরে রাখতে ইসলাম টাইমস কিছুটা  ‘সংরক্ষণশী ‘।  গণমাধ্যম ঠিক যতোটা ‘গণ’ হওয়া দরকার ইসলাম টাইমস ঠিক ততোটা নয়। যদিও ইসলাম টাইমসের পাঠকদের বড় একটি অংশ এই সংরক্ষণশীল অবস্থান পছন্দ করেন,  তবুও আমার মনে হয়,  এতে পোর্টালের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। নিউজের বাহক কমে যাচ্ছে। ইসলামের প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন মহল, শ্রেণি, দল, সংস্থা ও ব্যক্তির অংশগ্রহণ বাড়লে ইসলাম টাইমস-ই আপন আয়তনে বড় হবে।  ইসলাম টাইমসকে আল্লাহ দ্বীনের জন্য কবুল করে নিন। আমিন।

লেখক: আলেম-সাংবাদিক, সহ-সম্পাদক, কালেরকণ্ঠ

 

পূর্ববর্তি সংবাদইলিশ ধরা বন্ধ হচ্ছে ৯ অক্টোবর থেকে
পরবর্তি সংবাদকাশ্মীরের ১৪৪ বালককে আটকের কথা স্বীকার করল স্থানীয় প্রশাসন