দাওয়াতি কাজের জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে দিলের  দরদ ও ব্যথা : মুফতি যুবায়ের আহমদ   

মাওলানা মুফতি যুবায়ের আহমদ। তারুণ্যদীপ্ত দায়ী আলেমেদ্বীন। দিলের দরদ নিয়ে অমুসলিমদের মাঝে দাওয়াতের কাজ করেন প্রায় একযুগ ধরে। দাওয়াহ বিষয়ক প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পরিচালনা করেন ‘ইসলামী দাওয়াহ ইনস্টিটিউট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি অমুসলিমদের মাঝে দাওয়াতের জন্য বর্তমান বিশ্বের কিংবদন্তিতুল্য আলেম ভারতের মাওলানা কালিম সিদ্দীকির ঘনিষ্ঠ শাগরিদ এবং খলিফা। দাওয়াহর বিভিন্ন বিষয়, কৌশল, সতর্কতা ও সংকট  নিয়ে ইসলাম টাইমসের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। ইসলাম টাইমসের পক্ষ থেকে তার মুখোমুখি হয়েছেন-আবু দারদা।

 

ইসলাম টাইমস: অমুসলিমদের মাঝে দাওয়াত নিয়ে কী কী মেহনত করছেন?  আপনাদের চিন্তা-ভাবনা ও কাজের বিষয়গুলো যদি শেয়ার করতেন আমরা উপকৃত হতাম৷

মুফতি যুবায়ের: আমাদের দাওয়াতের ফিকির হলো, কীভাবে প্রত্যেকটা মানুষ জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে পারে৷ রাসূল সা.-এর দরদ ছিলো, জ্বালা ছিলো এটাই৷ কীভাবে মানুষ জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে যায়৷ সেই সুন্নত হিসেবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে প্রত্যেকটা কাঁচা-পাকা ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে যায়৷ বিশেষ করে অমুসলিমদের মাঝে। তারা যদি ইসলাম গ্রহণ করে চিরস্থায়ী আগুন থেকে বাঁচতে পারে- এই জন্য বিভিন্ন জেলায় আমাদের দাওয়াতি প্রতিষ্ঠান থেকে আলেমরা একবছরের প্রশিক্ষণ নিয়ে দাওয়াতি কাজ করছে। বিভিন্ন জেলায় আলেম ও সাধারণ সাথীদের দাওয়াতের কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। দাওয়াতি সফর হচ্ছে। সবমিলিয়ে আমাদের কিছু মেহনত হচ্ছে যেন মানুষ আগ্রহী হয় এবং দায়ী তৈরী হয়। তারা যেন কাজের গুরুত্ব অনুভব করে৷ এজন্য কিছু খেদমত চলছে৷

দায়ী তৈরি করা ও দায়ী পাঠানো এবং তাদের মাধ্যমে সাধরণ মানুষদের মাঝে দাওয়াতের এই সচেতনতা সৃষ্টি করা যে তারা যেন অমুসলিম ভাইদেরকে চিরস্থায়ী আগুণ থেকে বাঁচানোর ফিকির করে৷ এই জন্য আমাদের বিভিন্ন জায়গায় ওালামায়ে কেরামের পরামর্শের মাধ্যমে দায়ীদের প্রশিক্ষণ হয়৷ আলেমদের প্রশিক্ষণ হয়৷ কীভাবে দাওয়াত দিবে। কোন কলাকৌশলে দাওয়াত দেয়া যায়, সেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ হয়৷ কিছু প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠছে আলহামদুলিল্লাহ।

 

ইসলাম টাইমস:  দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রশাসন বা অমুসলিম কোনো মহল কর্তৃক কোনো বাঁধা-নিষেধের সম্মুখীন হয়েছেন কি? বাঁধা-বিপত্তি আসলে সেগুলো কী ধরণের?

মুফতি যুবায়ের:  আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত প্রশাসন কর্তৃক কোনো বাঁধা-নিষেধের সম্মুখীন হইনি। কারণ আমরা যে কাজ করছি সেটা মানুষকে চিরস্থায়ী আগুন থেকে বাঁচানোর কাজ৷ কল্যাণমুখী কাজ৷ আমরা তাদের হাতে-পায়ে ধরেই তাদের বাঁচানোর ফিকির করছি৷

এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশ সংবিধানের ৪১, ১-এর ক  ধারায় আছে ‘প্রত্যেক নাগরিক তার নিজ নিজ ধর্ম প্রচার করতে পারবে। সেটা আমার রাষ্টীয়, নাগরিক ও মানবিক অধিকার যে, আমি আমার ধর্ম প্রচার করতে পারবো৷ অবশ্য এক- দুজায়গায় কিছু খ্রিস্টান ভাইয়েরা না জেনে, না বুঝে বিরোধিতা করার চেষ্টা করেছে। প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়েছে। আল্লাহ হেফাজতকারী হিসেবে হেফাজত করেছেন। তাদের ধোঁকা ও চক্রান্ত ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

এজাতীয় অভিযোগ কেউ দিলে প্রশাসন যখন তদন্ত করতে আসে তখন তাদের সাথে খোলামেলা বলি,  ‘আসলে অমুসলিমদের দাওয়াত দেয়া  আমাদের একার কাজ নয়৷ আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। তাদের বুঝিয়ে বলার পর তারা বলেন, এটা আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার। আপনারা অবশ্যই দাওয়াত দিতে পারেন। কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানাবেন৷

এছাড়া হিন্দু জনগোষ্ঠীর লোকেরা কেউ কেউ দূর থেকে অনেক কিছু ভাবে, কিন্তু যখন আমরা তাদের কাছে যাই, তাদের সাথে কথা বলি, তাদের সত্যটা বুঝানোর চেষ্টা করি, তখন তারা বুঝে আমরা তাদের দুশমন নই৷ বরং তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী ও কল্যাণকামী৷ তাদের চিরস্থায়ী আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। এটা যখন বুঝতে পারে তখন মন্দ কিছু বলে না৷

অপরদিকে সাধারণ অমুসলিমকে যখন দাওয়াত দিই, ইসলামের সত্যের কথা বলি, পিপাসার্ত মানুষকে পানি দিলে যেরকম খুশি হয় তারাও সেরকম খুশিই হয়৷ তবে, তাকে দাওয়াত দেয়ার পদ্ধতিটি ভুল হলে সে নারাজ হতে পারে৷ এজন্য দাওয়াতের কাজ ও কৌশল সম্পর্কে অবগত হয়ে কাজ করলে ফায়দা বেশি হয়।

 

ইসলাম টাইমস:  দাওয়াত ও তাবলীগের সাধারণ কাজের তুলনায় অমুসলিমদের মাঝে দাওয়াতী কার্যক্রমে আলেম ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ কম হওয়ার কারণ কী মনে করেন? আরও ব্যাপকভাবে আলেম ও সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ত করার জন্য আপনাদের কোনো ধরণের পদক্ষেপ আছে কিনা?

মুফতি যুবায়ের:   আসলে আমি অংশগ্রহণ কম মনে করি না৷ কারণ ওলামায়ে কেরামের উপর দ্বীনি অনেক দায়িত্ব। তারা মাদরাসা পরিচালনা করেন৷ ইমামতি করেন৷ এছাড়াও দ্বীনের অনেক কাজে জড়িত থাকেন৷ সেইসাথে সামাজিক অনেক দায়িত্বও থাকে তাদের ওপর। অন্যদিকে ফিকির বেশি হওয়ার কারণে এদিকে ফিকির সামান্য কম হচ্ছে৷ কিন্তু ওলামায়ে কেরামের ব্যথা ও জ্বলন যথেষ্ট আছে৷ তবুও ওলামায়ে কেরাম ও সাধারণ মানুষদের কাজের সাথে সম্পৃক্ত করতে এবং ফিকির বাড়াতে আমরা বিভিন্ন জেলায় কর্মশালা করি৷ তাদের সাথে পরামর্শ করে কাজ করি৷

আমাদের দাওয়াতি প্রশিক্ষণ ও কর্মশালাগুলোতে ওলামায়ে কেরামের অনেক সাড়া পাচ্ছি। তারা নিজের কাজ মনে করে যুক্ত হচ্ছেন। আমাদের অনেক সহযোগিতা করছেন। আলহামদুলিল্লাহ তাদের অনেক সাড়া আমরা উপলব্ধি করছি।

 

ইসলাম টাইমস:   একটা বিষয় আমরা খেয়াল করে আসছি যে, খ্রিস্টানদের কার্যবিবরণীর হিসাব গণমাধ্যমে একদম প্রচার হয় না বললেই চলে। যেমন, কোথায় তাদের মিশন চলছে, বছরে কজন মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয়েছে- ইত্যাদি কার্যাদি নিয়ে কোনো আলোচনা দেখা যায় না৷ কেমন যেন তাদের সব কাজ নীরবে হয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে একজন বা দুইজন অমুসলিম মুসলমান হলে নানান পত্র-পত্রিকায় নিউজ হতে দেখা যায়৷ খ্রিস্টানদের দর্মান্তরিত করার খবরাখবর প্রচার না করা  কি তাদের কাজের কোনো কৌশল? প্রচার করা বা না করার দিকটা আপনি কীভাবে দেখেন?

মুফতি যুবায়ের:    এটা তাদের কাজের একটা বড় কৌশল৷ তাদের কাজের ব্যাপারে ব্যাপকভাবে জানলে মানুষ বাঁধা দিবে। বিশেষ করে মুসলমানরা আবেগে আপ্লুত হবে। ফলে তারা তাদের মিশনে বাঁধাগ্রস্ত হবে। সম্প্রতি দেখেছেন, জামালপুরের মেলান্দহ থানায় ১৪ বছরের এক ছেলেকে জোরপূর্বক খিস্ট্রান বানিয়েছে৷ হাতের মধ্যে সিল লাগিয়ে দিয়েছে। লোভ দেখিয়েছে৷ এই ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম উদ্যোগী হয়ে ভালো কর্মসূচিও পালন করেছেন৷

নিউজ না হওয়ার ব্যাপারটা তারা তাদের কাজের কৌশল হিসেবে করে৷ তবে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে পুরো তথ্য দেয়া থাকে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অনেক সময় ওয়েবে বেশি করেও প্রকাশ করে৷ তবে আমাদেরও এটাও ঠিক না যে, কেউ মুসলমান হলে পত্রিকায় বা কোনো মিডিয়িায় আসা জরুরি। অবশ্য নিউজ হওয়ার পজেটিভ-নেগেটিভ দুটো দিক-ই রয়েছে। অনেক সময় একজন-দুজন মুসলমান হওয়ার সংবাদে অন্য অমুসলিমরাও উদ্বুদ্ধ হন দ্বীনের পথে আসতে৷

মূল কথা হলো, যারা মুসলমান হয় তারা সত্য জেনে এবং মেনেই মুসলমান হয়৷ আর যারা খ্রিস্টান হয় তাদের নানানভাবে প্ররোচনা ও লোভ দেখিয়ে অসত্য ও ভুল তথ্য দিয়ে,  কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা করে ‘দাওয়াত’ দিয়ে ধর্মান্তরিত করা হয়। এছাড়া খ্রিস্টানদের এমন কোনো নৈতিক ও আত্মিক শক্তি নাই যারা দ্বারা মানুষ আকৃষ্ট হতে পারে৷

তবুও কথা হলো, আমরা এসব বিষয়ে কিছুটা বেখেয়ালি। দেখা যায়, তারা প্রচার না করার কৌশল অবলম্বন গ্রহণ করে বহু মানুষকে খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলে, অথচ ওই এলাকার মানুষও জানে না তাদের এলাকায় কারা ধর্মান্তরিত হয়েছে, খ্রিস্টান হয়ে বসে আছে।

 

ইসলাম টাইমস:    উত্তরবঙ্গের দরিদ্র এলাকা ও পাহাড়ী অঞ্চলগুলোকে খ্রিস্টানরা টার্গেট করে কাজ করার কারণ কী? আপনি কীভাবে দেখেন?

মুফতি যুবায়ের:     আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, তিন কারণে তারা উত্তরবঙ্গ এলাকা ও পাহাড়ী অঞ্চলগুলোকে টার্গেট করে কাজ করে৷ ১. সরলতা  ২. দারিদ্র ৩. অজ্ঞতা- এই তিন জিনিসকে পুঁজি বানিয়ে তারা এসব এলাকার মানুষকে ধর্মান্তরিত করা হয়।  তাদের এ জাতীয় কাজের পরিধি নির্দিষ্ট এই দুটো অঞ্চল নয়। তবে এসব এলাকায় অল্প মেহনতে অধিক ‘লাভ’ হাতিয়ে নিতে পারে। তাই এসব এলাকায় তাদের মেহনত বেশি৷ দুনিয়ার সকল মানুষ চায় অল্প লাভে অধিক লাভবান হতে ৷

 

ইসলাম টাইমস: প্রখ্যাত দায়ী  মাওলানা কালিম সিদ্দিকী সাহেবের সাথে আপনার সাহচর্যের কোনো একটা স্মৃতি যদি তুলে ধরতেন?

মুফতি যুবায়ের:   আলহামদুলিল্লাহ হযরত কালিম সিদ্দিকী সাহেবের সাথে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে৷ ২০০৩/৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩/৪ টা প্রোগ্রাম ভিসা জটিলতায় বাদ পড়েছে। এছাড়া প্রতি বছর হজ ও ওমরার সফরে হযরতের সাথে থাকা হয়।  হযরতের সাথে অনেক স্মৃতির মাঝে যেই স্মৃতিটা প্রায়ই মনে পড়ে, তা হলো ২০১০ সালে হজের সফরে হযরতের সাথে হজ করা ও একসঙ্গে থাকার সৌভাগ্য হয়।

আমি হোটেলে ছিলাম। রাত বারোটায় হযরত বললেন, ‘চলো এখন মাতাফ খালি তাওয়াফ করে আসি। হযরতের সাথে গিয়ে তাওয়াফ করলাম৷ মুলতাজিমে যাওয়া খুব কঠিন ছিল। মানুষের ভীড়। হযরতকে দেখলাম খুব স্বাভাবিকভাবে আছেন৷ দুআ করছেন৷ এমনকি খুব কম সময়ে পৌঁছে গেলেন৷ আমিও হযরতের পিছন পিছন মুলতাজিম গেলাম৷ মুলতাজিমে গিয়ে আমি হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করে করলাম৷ হযরত আমাকে ইশারা দিয়ে বললেন, চুপ! পরে তিনি আমাকে বললেন, এটা আল্লাহ পাকের বড় শান, আমরা আল্লাহর দরবারে আসছি। এখানের কিছু আদব আছে। হযরত আমাকে কিছু আদব শেখালেন৷ এটা আমার জন্য স্মরণীয় একটা ঘটনা৷

আরেকবার হযরত বললেন, ‘তুমি জুলফিকার আহমেদ নকশেবন্দীকে চিনো?’ আমি বললাম, হযরত আমি ওনার ছবি দেখেছি। এমনি সরাসরি দেখে চেনার সুযোগ হয় নি। তো হযরত বললেন, এখন তিনি তাওয়াফ করছেন। তাওয়াফ শেষে অমুক জায়গায় তিনি নামাজ পড়বেন৷ তারপর আমি ও হযরত নামাজ পড়লাম৷ হযরত নকশেবন্দী সাহেবের সাথে দেখা করতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেন। তারপর হযরত বললেন, আমি যাচ্ছি আমার কাজ আছে। তুমি শায়খের সাথে দেখা করে আমার সালাম দিবা৷ তিনি যেখানে নামাজ পড়বেন বা বসবেন আমাকে সে জায়গা দেখালেন।

আমি শায়খের সাথে দেখা করতে পারছিলাম না৷ খাদেম সুযোগ দিচ্ছিলো না৷ পরে যখন হযরতের নাম বললাম এবং বললাম হযরতের পক্ষ থেকে সালাম, তখন তিনি হযরতের নাম শুনে দাঁড়িয়ে গেলেন৷ এবং আমাকে কথা বলার সুযোগ দিলেন৷ হযরত আমাকে বলেছিলেন, ‘ওনার সাথে দেখা করে তিনটা জিনিসের জন্য দুআ চাইবে৷’ ১. তোমাকে কাজের জন্য কবুল করানো।  ২. তোমার দেশের জন্য। ৩. দাওয়াতের কাজ যেন তোমার জন্য কবুল হয়।

এটা ছিল আমার অনেক বড় স্মৃতিময় ঘটনা৷ এছাড়াও আরও অনেক স্মৃতি রয়েছে৷ আল্লাহ পাকের তরফ থেকে আমার জন্য খোশ কিসমতি যে, তিনি আমাকে হযরতের সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন৷

 

ইসলাম টাইমস:  একজন অমুসলিমকে দাওয়াতে দেয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো লক্ষণীয়?  সামান্য ধারণা দেওয়া যায়!

মুফতি যুবায়ের:  দাওয়াতের জন্য প্রথম দরকার দরদ থাকা ৷ আমি যাকে দাওয়াত দিতে চাচ্ছি তার জন্য ফিকির, দরদ ও দোয়া করা লাগবে৷ যে লোকটা চিরস্থায়ী জাহান্নামে জ্বলবে তাদের ফিকির নিয়ে শেষরাতে তাহাজ্জুদ পড়ে যাকে দাওয়াত দিব তাকে টার্গেট করে নাম ধরে ধরে দোয়া করা৷

আপনি যাকে চান হেদায়েত দিতে পারবেন না৷ আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়েত দিবেন। এজন্য আল্লাহর কাছ থেকে হেদায়েত চেয়ে নেয়া৷ এরপর ব্যথা-দরদ ও মুহাব্বতের সাথে দাওয়াত দিতে যাওয়া। ওই ভাইয়ের সাথে কথা বলা৷ তার কল্যাণ নিয়ে কথা বলা, যেন লোকটা বুঝতে পারে  যে, আমি তার কল্যাণের জন্য এসেছি। তাকে বুঝানো। এইজন্য সবচেয়ে লক্ষণীয় জ্বালা, দরদ-ব্যথা। রাসূল সা.-এর সুন্নত তাহাজ্জুদে দোয়া, কান্নাকাটি করা। এবং এই ইয়াকীন করা এই লোক মারা যাওয়ার পর চিরস্থায়ী জাহান্নামে যাবে৷ কীভাবে তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো যায়৷ সে বুঝতে পারছে না তার যে কমতি আছে সে ফিকির তার নাই৷ সেই চিন্তা তার মধ্যে জাগ্রত করা৷

রাসূল সা.-এর একটি হারানো সুন্নত হলো, নবীজি অমুসলিমদের নাম ধরে ধরে দোয়া করতেন৷ হযরত ওমর রাযি. রাসূলের দোয়ার ফসলেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন৷ এমন অনেক সাহাবীর নাম ধরে ধরে দোয়া করেছেন নবীজী৷

 

ইসলাম টাইমস: যেসব তরুণ আলেম নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে থেকে দাওয়াতি মেহনত করতে চায় তাদের জন্য আপনার উপদেশ বা পরামর্শ কী?

মুফতি যুবায়ের: দাওয়াতী কাজ এমন এক কাজ যা সাহাবায়ে কেরাম রাযি. করতেন৷ তারা বিভিন্ন ব্যবসা করতেন৷ তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব কাজ ছিলো। তবুও তারা প্রত্যেকে দায়ী ছিলেন৷ যে যেখানে ছিলেন দাওয়াতের কাজ করেছেন৷ প্রত্যেকের মিশন ছিলো দাওয়াত দেওয়া। যেমনিভাবে খাবার খাওয়া আমাদের একটি কাজ তেমনি দাওয়াতকে নিজের কাজ বানিয়ে নেয়া চাই। যে যেই অবস্থায় থাকি সেভাবেই দাওয়াতের কাজ করা দরকার৷

এর খুব সহজ একটি পদ্ধতি হলো এই যে, যেই মহল্লায় থাকি সেখানকার অমুসলিমদের দাওয়াত দেয়া৷ দায়ীদের প্রশিক্ষণ দেয়া৷ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা৷ বিশেষ করে তরুণ আলেমরা যে যেই গণ্ডিতে আছে সেখান থেকে অনেক কাজ করা যায়৷ শুধু দরকার ইচ্ছে শক্তি। যদি সদিচ্ছা আর চেষ্টা থাকে অনেক কাজ করা যাবে৷ আল্লাহর কাছে দুআ ও কান্নাকাটি করে নিজের কাজ করে যাওয়া চাই৷

দাওয়াতের এই কাজ নির্দিষ্ট কোনো দলের কাজ নয়৷ বরং প্রত্যেক ব্যক্তির কাজ৷ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে রাসূল, আপনি বলে দিন এটা আমার কাজ৷ এটা আমার পথ৷ আমি আল্লাহর দিকে মানুষকে ডাকি বুঝেশুনে। এটা আমার কাজ এবং যারা আমার অনুসরণ করে তাদের কাজ৷’

আমরা রাসূলের অনুসরণ করি। সে হিসেবে দাওয়াত রাসূলের কাজ, তাই এটা আমাদেরও কাজ৷ আমি মনে করি আমরা আমাদের যে অবস্থানে আছি সেখান থেকেই দাওয়াত দেওয়া সম্ভব৷

অনেকসময় সহজ বিষয়কেও কলাকৌশল না জানার কারণে কঠিন মনে হয়৷ আসলে বড় কথা, হিম্মত ও দরদ-ব্যথার সাথে কাজ করলে সব সহজ হয়ে যাবে৷ নুসরত আসবে, ইনশাআল্লাহ।

আমার মুআদ্দাবানা অনুরোধ, আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকে রাসূলের ফিকির ও দরদ ব্যথা নিয়ে ঈমানের পিপাসায় তৃষ্ণার্ত মানুষগুলোর কাছে যাই৷ মানুষ ওৎ পেতে আছে ইসলাম কবুল করার জন্য৷

আমরা কদিন আগে সফরে গিয়ে যখন মানুষকে ধরার পর তারা বলল, এই কথাগুলো তো আমাদের কাছে কেউ বলে নাই৷

সত্য কথা বলা দরকার। আমরা অনেক সময় ভয় পাই৷ কি জানি হয়! আসলে কিচ্ছু হবে না৷ আল্লাহর জন্য সুন্দরভাবে মুহাব্বতের সাথে ভালো কৌশলে দাওয়াত দিলে অনভিপ্রেত কিছুই হবে না।  আমরা যেখানে আছি প্রত্যেকেই আশপাশে দাওয়াত দেই৷ থানা, জেলায়৷ নিজের কাজ মনে করে যদি দাওয়াতের কাজ করি তাহলে অনেক কাজ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী, ইনশাআল্লাহ।

 

ইসলাম টাইমস:  আমরা জেনেছি বছরের নানান সময় আপনার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় দাওয়াতী প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে৷ প্রশিক্ষণ কর্মশালার নির্দিষ্ট সময়গুলো কি দয়া করে জানাবেন?

মুফতি যুবায়ের:  আমাদের এক বছর ব্যাপী তাখাসসুস ফিদ দাওয়াত কোর্স রয়েছে৷ প্রতি রমজানে বিশদিনের কোর্স হয়। ১লা রমজান থেকে ২০ রমজান পর্যন্ত। বেফাক পরীক্ষার পর পাঁচদিনের কোর্স হয়। এছাড়া কওমি মাদরাসার বিভিন্ন বন্ধে ৩/৫ দিনের প্রশিক্ষণ হয়৷ এবং জিলকদের শুরু থেকে তিনমাস ব্যাপী প্রতি শুক্রবার সকাল ৯ থেকে ১২ টা পর্যন্ত কোর্স হয়। এটা সাধারণ সাথীসহ সবার জন্য। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় যারা দাওয়াত শিখতে চায় আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা খেদমত করার চেষ্টা করি৷#

পূর্ববর্তি সংবাদপ্রত্যাশা: ইসলাম টাইমস হয়ে উঠবে দেশের বিকল্প গণমাধ্যম
পরবর্তি সংবাদরাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের আগুন নিয়ন্ত্রণে