পোরশা মাদরাসা: উত্তরবঙ্গে ইলমি ঐতিহ্যের অনন্য প্রতিষ্ঠান

তারিক মুজিব ।।

আল জামিয়া আল আল আরাবিয়া দারুল হিদায়া পোরশা মাদরাসা। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে ইসলামি আদর্শ ও ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তারে যে সকল মাদরাসার অবদান সবচেয়ে বেশি পোরশা মাদরাসা তার অন্যতম। মনোরম অবকাঠামোর এ মাদরাসাটি দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রাচীনতম দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী বিভাগ অন্তর্গত নওগাঁ জেলার পোরশা থানাধীন পোরশা গ্রামে প্রায় ৯ বিঘা জমির উপর অবস্থিত জামিয়া আরাবিয়া পোরশা মাদরাসা।

মরহুম আবদুল হাই শাহ ছিলেন পোরশা থানার প্রভাবশালী ব্যক্তি। নিজস্ব অর্থায়নে তিনি অনেক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান চালাতেন। পোরশা গ্রামে তার অর্থায়নে ‘হাই মাদরাসা’ নামে একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু ছিল। কিন্তু বৃটিশ সরকার মাদরাসাটিকে রাষ্ট্রায়াত্ত করে হাইস্কুলে পরিণত করে।

১৯৪৬ সাল। ‘হাই মাদরাসার’ সেক্রেটারি তার বন্ধু মৌলভি জাফর সাহেবকে নিয়ে আবদুল হাই শাহের কাছে গেলেন। মাদরাসার চিত্র তুলে পরবর্তী প্রজন্মের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য নতুন একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তার সাথে কথা বললেন ‘হাই মাদরাসা’র সেক্রেটারি ও তার বন্ধু। আবদুল হাই সাহেব তাদের প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেন এবং বিশাল জায়গা লিখে দিয়ে নতুন মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি নিতে বললেন।

সেবছর রমযানে হাটহাজারি মাদরাসার সাবেক শায়খুল হাদিস মরহুম ইয়াকুব সাহেব পোরশা গ্রামে গেলেন মাদরাসার কালেকশনের জন্য। মৌলভি জাফর সাহেব এবং তার বন্ধু হযরতের সাথে সাক্ষাত করে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন। মরহুম ইয়াকুব সাহেব তাদেরকে হাটহাজারির তদানীং মুহতামিম মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব রহ.-এর সাথে যোগাযোগ করতে বললেন।

মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব সাহেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাওলানা সালেহ আহমদ সাহেবকে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে নওগাঁ জেলার পোরশা গ্রামে পাঠান। মাওলানা সালেহ আহমদ আবদুল হাই শাহ সাহেবের ওয়াকফকৃত জায়গার উপর মরহুম জিল্লুর রহমানের অর্থায়নে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করেন।

মাদরাসা মসজিদ

তখন থেকেই ঐতিহ্যবাহি পোরশা মাদরাসার প্রাতিষ্ঠানিক সূচনা। নোয়াখালীর মাওলানা সাঈদ আহমদ অল্প কয়েকজন ছাত্র নিয়ে মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। দিনে দিনে মাদরাসার পরিধি বিস্তৃত হয়। দেশময় ছড়িয়ে পড়ে এ মাদরাসার নাম।

১৯৫৯ সালে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার বার বা তের বছরের মাথায় দাওরায়ে হাদীস বিভাগ খোলা হয়। উত্তরাঞ্চলে সর্বপ্রথম দাওরায়ে হাদীস এ মাদরাসায়ই চালু করা হয়। মাদরাসার প্রথম শায়খুল হাদীস ছিলেন চট্টগ্রামের আবদুল হক ইসলামাবাদী রহ.। তার পর মাদরাসার শায়খুল হাদীস নিযুক্ত হন মুফতি রেজাউল হক রহ.। ২০১২ সালে ইনতিকালের আগ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ বছর তিনি বুখারী শরিফের দরস প্রদান করেন।

অল্প কয়েকজন নিয়ে মাদরাসার সূচনা হলেও বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের এ বৃহত মাদরাসাটিতে প্রায় পনেরশো ছাত্র দ্বীনী শিক্ষা লাভ করছে। তাফসির, আদব, ফিকহ, উলুমুল হাদীসসহ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত দ্বীনী শিক্ষার প্রায় সবক’টি বিভাগই এ মাদরাসায় চালু আছে।

ইত্তেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া কওমিয়া নওগাঁ বাংলাদেশ নামে এ মাদরাসার অধীনে পরিচালিত একটি আঞ্চলিক শিক্ষাবোর্ডও রয়েছে।

মাদরাসার বর্তমান মুহতামিম মাওলানা শরিফুদ্দীন সাহেবের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

মাওলানা শরিফুদ্দীন বলেন, ‘পোরশা মাদরাসাটি উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। দরসে নিযামি প্রক্রিয়ায় হাদিসের পাঠদান উত্তরবঙ্গের এ মাদরাসায়ই প্রথম হয়। মুরুব্বীরা আমাকে মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। আকাবির এবং উস্তাযদের অর্পিত দায়িত্বই আমি পালন করছি’।

পূর্ববর্তি সংবাদতেজগাঁওয়ের ফু-ওয়াং ক্লাবে অভিযান চালাল পুলিশ
পরবর্তি সংবাদজব্দ করা হল খালেদ মাহমুদ ও জি কে শামীমের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট