বৌ-শাশুড়ি সম্পর্ক : পরিবার যেখানে জান্নাতের উপমা

মাওলানা খলীলুর রহমান সাজ্জাদ নোমানী ।।

আরো অনেক দিন আগের কথা। লখনৌতে একটা পরিবার ছিল, যাদের গৃহকর্তা ছিলেন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা। সেনাবাহিনীতে যারা কাজ করেন, কেন জানি তাদের মধ্যে গান-বাদ্য, মদ্যপান, স্বেচ্ছাচারী জীবনযাপনের একটা অভ্যাস হয়ে যায়। তারাও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না।

হঠাৎ একদিন গৃহকর্তা মারা গেলেন। তখন তার পরিবারের মধ্যে এক আমূল পরিবর্তন এসে গেল। কর্ণেল সাহেবের স্ত্রীপুত্রের মধ্যে আল্লাহ তাআলার ভয় চলে এল। ইসলামি বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনার আগ্রহ চলে এলো।

ছেলে দেশে পড়াশোনা শেষ করে আমেরিকায় চলে গেল ‍ উচ্চতর পড়াশোনা করার জন্যে।  মা যেহেতু  খুবই দ্বীনদার হয়েছিলেন তাই তার মনের খুব ইচ্ছা হল, আল্লাহ যদি তার ছেলের জন্য কোন নেক্কার খোদাভীরু মেয়ে মিলিয়ে দিতেন! সেজন্য তিনি খুব দোয়া করতন। অন্যের মাধ্যমেও দোয়া করাতেন।

আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন। একদিন আশ্চর্যজনকভাবে তারা এক মেয়ের সন্ধান পান। অবশেষে সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক নেক্কার মেয়ের সাথে তার ছেলের বিবাহ হল। দশ দিন পরে যখন সব মেহমান বিদায় হয়ে গেলেন এবং বাড়ির পরিস্থিতি স্বাভাবিক গতিতে ফিরে এলো তখন একদিন শাশুড়ি নববধূকে ডাকলেন।

ফজরের পর কুরআন তিলাওয়াত করে শাশুড়ি জায়নামাজে বসেছিলেন। স্ত্রীকে ডেকে বললেন, মা, আমার তো বয়স হয়ে এসেছে। এখন আমার কবরের প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। আমি চাই, সকাল-বিকেল জায়নামাজে আরও কিছু সময় বসে থাকি। মা, এই নাও আমাদের আলমারির চাবি। আজ থেকে তুমি এই ঘরের গৃহকর্ত্রী। এখন থেকে তুমি  সংসার চালাবে। আমি তোমাকে সব দিক থেকে সহযোগিতা করবো। কিন্তু সংসার চালাবে তুমি।

স্ত্রী সবকিছু মনোযোগ দিয়ে শুনলেন তারপর বললেন, আম্মা চাবি আপনার কাছেই থাকবে এবং সংসার আপনার হুকুম মোতাবেক চলবে। আমি আপনার খেদমত করবো। আপনাকে কোন কাজ করতে হবে না। আমি আপনার দাসী হয়ে এসেছি। এই ঘরে আমি আপনাকে ইনশাআল্লাহ কোন অভিযোগের সুযোগ দিব না। কিন্তু চাবি আমি কবুল করতে পারবো না।

শাশুড়ি আবারও অনুরোধ করে বললেন, মা,  তুমি তো জানো না আমরা কি পরিমান গুনাহ এর মধ্যে জীবন কাটিয়েছি। আমাদের আমলনামা কী পরিমান কাল তা তোমার জানা নেই। এখন আমার জীবনের শেষ কয়টা দিন নিরিবিলি আল্লাহর স্মরণে কাটাতে চাই। জানি না, জীবনের আর কয়টা দিন, সপ্তাহ, মাস বাকী আছে?

নববধূ বললেন, আম্মা ১০-১২ বছর বয়স থেকে আমি দোয়া করছিলাম, আল্লাহ  যেন আমাকে  দ্বীনদার শ্বশুরালয় দান করেন। আল্লাহ  যেন আমাকে নেক্কার স্বামী দান করেন। দ্বীনদার ঘরে যদি আমার কোন একবেলা উপোস থাকতে হয় তাও সমস্যা নেই কিন্তু ঘর যেন হয় দ্বীনদার।

আম্মা, আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। আমার মনে হয়, আল্লাহ আমার  দোয়া কবুল করেছেন।  আল্লাহ আমাকে এমন ঘর দিয়েছেন যা আমি চিন্তাও করতে পারিনি। আমি যেমন দোয়া করেছিলাম আল্লাহ আমাকে তেমনি স্বামী দান করেছেন।

আপনার কাছে আমার আবেদন, যখন আপনি আপনার মামুলাত শেষ করে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করার জন্য হাত তুলবেন তখন আমার সংশোধন ও মাগফিরাতের জন্যও দোয়া করবেন।

শাশুড়ি খুশি হয়ে স্ত্রীকে নিজের কোলে নিয়ে নিলেন এবং বললেনঃ আল্লাহ সব পুরুষকেই যেন তোমার মত জীবনসঙ্গিনী দান করেন।

যেই ঘরে শাশুড়ি এবং পুত্রবধুর মাঝে এমন সম্পর্ক থাকে সেই ঘর  তো দুনিয়াতে জান্নাতের নমুনা।

সে ঘর দ্বীনদার সমঝদার ঘর নয়, যে ঘরে বাবাকে দেখলে সন্তান পালিয়ে যায়। যেখানে সব সময় ধমকা ধমকি চলতেই থাকে- নামাজ পড়ো। চিল্লা লাগাও। এটা করো। ওটা করো।

দ্বীনদার সমঝদার পরিবার সেটাই, যেখানে সন্তান ও বাবার মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকে। স্ত্রী  ও শাশুড়ির মধ্যে মুহব্বতের সম্পর্ক থাকে। যেখানে ননদ ও ভাবীর মধ্যে আন্তরিকতার সম্পর্ক থাকে। শশুর ও জামাই এর মধ্যে ভক্তি ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক থাকে।

যেখানে  একে অন্যের প্রতি খেয়াল রাখে। একে অন্যকে প্রাধান্য দেয়। একে অন্যের প্রতি ধৈর্য ধারণ করে। কেউ কারো উপর রাগ করে না। তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নেয় না।

যদি আমরা আমাদের স্বভাবকে এমন বানাতে পারি তাহলে আমাদের জীবনে নেমে আসবে জান্নাতের শান্তি।

 অনুলিখন : জুনাইদ

পূর্ববর্তি সংবাদগ্রেফতার আতঙ্ক : নেতাকর্মীদের নিয়ে কার্যালয়েই রাত কাটালেন যুবলীগ নেতা সম্রাট
পরবর্তি সংবাদকামরাঙ্গীচরে জাতীয় লেখক পরিষদের প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত