আমাদের অবস্থা একেকটা ছোট্ট দ্বীপের মতো হয়ে যাচ্ছে

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. ।।

পরস্পরের ঐক্য এবং একজন অপরজনকে নিজের সাথে মিলানো এবং কাছে টানার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বস্ত্ত দুনিয়াতে সৃষ্টি হয়নি। বরং ঐক্য ও ইত্তেবা এটা আল্লাহ পাকের খাছ তাওফিক ও বিশেষ পুরস্কার। যেমন : কুরআনে হাকীমে আল্লাহ তাআলা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বলেন,‘‘হে নবী! আপনি যদি পুরা দুনিয়ার সকল খাজানা খরচ করে দেন তাহলে ঐ সাহাবাদের অন্তরের ভালবাসা ও মহববত ঐক্য ও সম্প্রীতি তৈরি করতে পারবেন না। বরং আল্লাহ তাআলাই তার অনুগ্রহে তাদের অন্তরে ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন।’’-সূরা আনফাল : ৬৩

বাহ্যত ঐক্যের উপলক্ষ হতে পারে কেবল ভীতির অনুভূতি। যখন ক্ষয়ক্ষতি ও ভীতির অনুভূতি জেগে উঠে মানুষ আপনা-আপনিই ঐক্যবদ্ধ হয়। আমরা যারা হিন্দুস্তানে আছি, পরস্পরে বিক্ষিপ্ততার শিকার হয়ে একে অপরের মাঝে ভুল বুঝা-বুঝি সৃষ্টি করছি, এর কারণ হল বিপদের আশংকা আমাদের মাঝে নেই।

আল্লাহর শোকর স্বভাবগতভাবে আমি নিরাশ নই। এই কঠিন যুগেও, মানুষ যখন ইসলাম ও মুসলমানকে বিপদের সম্মুখীন মনে করছে এবং হিন্দুস্তানেও স্পেনের মতো অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছে, আমি এমন মুহূর্তেও নিরাশ হইনি। কিন্তু  পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ফলে আমার অনুভূতি এই যে, মুসলমানের অবস্থা শোচনীয় হতে চলেছে। অবস্থা তো এ পর্যায়ে চলে গেছে যে, যদি কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির বা কোনো সংগঠনের সাথে অপর সংগঠনের বিরোধিতার বাস্তব মাত্রা থাকে একভাগ তাহলে সে বিরোধিতাটাই প্রকাশিত হচ্ছে শতভাগ ক্ষেত্রে।

আমরা এমন এক জাতি, উত্তম চরিত্রের এক মহান ইতিহাস যাদের আছে। এরপরও বিরোধের এ অবস্থাটি খুবই দুঃখজনক।সামষ্টিকভাবে পরস্পরে সহযোগিতার যোগ্যতা মুসলমানদের থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে। কাউকে একটু এগিয়ে যেতে দেখলে তার বিরুদ্ধে পুরো শক্তি ব্যয় করা আমাদের স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে। এমনও নয় যে, নীতিগতভাবে কঠোর ইখতিলাফ ও বিরোধ রয়েছে। বরং দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধকে মূল বিরোধ বানিয়ে ফাসাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে। পরিবেশ থেকে চক্ষু বন্ধ করে ফেলা এবং পরিস্থিতিকে অনুকূল করার চেষ্টা না করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আমরা না অবস্থা বোঝার চেষ্টা করি, না দেশের দিকে খেয়াল করে কখনো একথা চিন্তা করি যে, দেশকে আমাদের কিছু দেওয়ার রয়েছে।

আমাদের অবস্থা একটি দ্বীপের মতো, বরং দ্বীপের মধ্যের ছোট্ট দ্বীপের মতো হয়ে গেছে। ইসলামী জাতি নিজেই একটি দ্বীপ। আবার এই দ্বীপের মধ্যে আরেকটি দ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান, প্রত্যেক দল, বরং প্রতিটি সংগঠন পৃথক পৃথক দ্বীপে পরিণত হয়েছে। আমার খুব ভয় হয়, এই দেশ ও দেশবাসীর কী হবে? এখন পর্যন্ত দিয়ানতদারী এবং নিষ্ঠার সাথে কোনো পক্ষ থেকে এ চেষ্টা করা হচ্ছে না, যাতে কোনো প্রতিষ্ঠান, জামাত, সংগঠন অথবা কোনো ব্যক্তির বাস্তব উপকারিতা ও তাদের গুণ ও মূল্য যথার্থ উপায়ে অনুধাবন করা যেতে পারে।

এখন পর্যন্ত এর কোনো চেষ্টাও করা হয়নি যে, বেশিরভাগ মানুষ বাস্তবিকভাবে আমাদেরকে বুঝতে পারে এবং আমাদের উপকারিতা ও প্রয়োজন অনুভব করতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পরস্পর মিলেমিশে দ্বীনের কাজ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

অনুবাদ : মুফতি যুবায়ের আহমদ 

পূর্ববর্তি সংবাদআসামি ছেড়ে ইয়াবা ভাগাভাগি, গ্রেপ্তার পাঁচ পুলিশ সদস্য
পরবর্তি সংবাদআংকারায় এরদোগান-রুহানির রুদ্ধদ্বার বৈঠক