আসামে রোহিঙ্গাদের মতো আরেকটি গণহত্যা দেখতে চাই না: আল্লামা কাসেমী

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতীয় রাজ্য আসামের ক্ষমতাসীন বিজেপী সরকার গত ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত যে নাগরিকত্ব তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন ভারতীয় বাসিন্দা বাদ পড়েছে। যাদেরকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বাংলাদেশী বলে নাগরিক তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। আসামের পর বাংলাদেশের প্রতিবেশী অন্যান্য ভারতীয় রাজ্যেও একই রকম নাগরিক তালিকা তৈরির দাবি জোরদার করছে বিজেপি। গোটা ঘটনাপ্রবাহ ষড়যন্ত্রমূলক ও চরম অমানবিকই শুধু নয়, বরং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপরও মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে। বাংলাদেশ সরকারের কর্তব্য, বিজেপি’র মুসলিম ও বাংলাদেশ বিরোধী এমন আগ্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ করা।

গতককাল (১৪ সেপ্টেম্বর) শনিবার সংবাদপত্রে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব প্রবীণ আলেমে-দ্বীন শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত উৎকণ্ঠার সঙ্গে ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে ভারত থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করা, সেই দেশে বসবাসকারী মুসলমানদের উপর নিপীড়ন চালানো, কাশ্মীরে আগ্রাসন এবং ‘রামরাজ্য’ প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের এক শ্রেণির হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদদের তৎপরতা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করে আসছি। উচ্চবর্ণের হিন্দুর হাতে এই উপমহাদেশে দীর্ঘকাল ধরেই জৈন, বৌদ্ধ, শূদ্র, মুসলমান ও অন্যান্য গরীব ও মজলুমরা নিপীড়িত। বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে ভারতে, অথচ বৌদ্ধদেরকে ভারতের মাটিতে হত্যা ও নির্মূল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাতচল্লিশে উচ্চ বর্ণের জালিম হিন্দুরা দেশভাগ করে দোষ চাপিয়েছে মুসলমানদের ওপর। বাংলা ও পাঞ্জাব আজও তার খেসারত দিয়ে চলেছে। এখন আবার তারা ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে আইনের মারপ্যাঁচে আসাম থেকে ১৯ লক্ষ গরিব ও মজলুম অধিবাসীকে উৎখাত ও নির্মূল করবার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তারা চাচ্ছে, এতে ভারতীয় মুসলিমদেরকে বের করে দিতে এবং বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক গরীব হিন্দু অভিভাসী প্রবেশ করাতে। চূড়ান্ত তালিকায় মুসলমানদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক হিন্দুর নাম না থাকা এমন কিছুরই ইঙ্গিত দেয়। এটি আদতে মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও বিতাড়নের মতোই বিজেপির ‘রোহিঙ্গাকরণ’ প্রক্রিয়া।

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, নাগরিকপঞ্জির নামে পূর্ব পুরুষ থেকে স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাসকারী ১৯ লক্ষ মানুষকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নিজ দেশে পরবাসী করা এবং অভিবাসন ক্যাম্প তৈরি করে তাদেরকে সেখানে আবদ্ধ রাখার উদ্যোগ নিশ্চিত করছে, এটি আদতে বিজেপির মুসলিম গণহত্যার প্রস্তুতি। বিজেপির উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন নেতা এনআরসিতে বাদ পড়াদেরকে ‘বাংলাদেশি সেটলার’ আখ্যা দিয়ে তাদের নাগরিক অধিকার হরণসহ বাংলাদেশের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো নানা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আসামে কোন অবৈধ বাংলাদেশী নেই। যে ১৯ লাখ মানুষের ভারতীয় নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তারা পূর্ব পুরুষ থেকেই ভারতে বসবাস করে আসছে। এরা অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক। এদেরকে বাংলাদেশী বলে বহিষ্কারের উদ্যোগ মুসলিম ও বাংলাদেশ বিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তিনি বলেন, আসামের ঘটনাপ্রবাহে জোর সন্দেহ করা যাচ্ছে, ভারতে রোহিঙ্গাদের মতোই ভয়াবহ রক্তপাতের পরিস্থিতি আসন্ন। পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও এনআরসি প্রশ্নে রক্তগঙ্গা ও গৃহযুদ্ধ ঘটতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।

আল্লামা কাসেমী বলেন, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদিদের চরম উস্কানির মুখেও বাংলাদেশের জনগণ ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের নির্লিপ্ততা ও দায়সারা গোছের বক্তব্য আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক নীতিমালা ভঙ্গ করে ভারতীয় নাগরিকদের ‘বাংলাদেশী’ আখ্যা দিয়ে পুশব্যাক করবার প্রস্তুতি এবং স্বেচ্ছায় না গেলে গুলি করার হুমকির বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে অবশ্যই অবিলম্বে জোর প্রতিবাদ জানাতে হবে। রোহিঙ্গাদের মতো আরেকটি গণহত্যার করুণ পরিণতি আমরা দেখতে চাই না।

পূর্ববর্তি সংবাদনাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
পরবর্তি সংবাদছাত্রলীগের নেতৃত্বে নতুন মুখ