আমিরাত ও বাহরাইন শাসক উম্মাহ চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে: আল্লামা কাসেমী

ইসলাম টাইমস ডেস্ক:  জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি যে সময়ে কাশ্মীরে ইতিহাসের বর্বরতম নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে, অধিকার ও মর্যাদা কেড়ে নিয়ে কাশ্মীরী মজলুম মুসলমানদের কলিজায় সেল বিধঁছে, ঠিক সে সময়ে এই খুনি খলনায়ককে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মানা দিয়ে আমিরাত ও বাহরাইনের শাসকরা ইসলামের উম্মাহ চেতনাবোধ ও মানবাধিকার চিন্তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

আজ (২৭ আগস্ট) মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আরব শাসকরা ক্ষমতা ও ভোগবাদে এতটা অন্ধ হয়ে পড়েছেন যে, বছরের পর বছর দেশের জনগণের বাকস্বাধীনতা ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার হরণ করে জুলুমের স্ট্রিম রোলার চালাচ্ছেন। তারা নিজেরাই শুধু ইসলাম ও উম্মাহ চিন্তার বিপরীতে চলছেন তা নয়, বরং দেশের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতাকেও অনেক ক্ষেত্রে কেড়ে নেন। বাণিজ্য ও ভোগবাদের বিপরীতে এসব শাসকের কাছে উম্মাহ চেতনা, মানবতাবোধ ও মানবাধিকার হাস্যকর বিষয়।

বিবৃতিতে জমিয়ত মহাসচিব আরো বলেছেন, ধর্মহীনতা, মানবাধিকার হরণ এবং অমানবিকতায় বর্তমান আরব শাসকরা মুসলিম উম্মাহর কলঙ্ক। এদের মুসলিম স্বার্থবিরোধী কর্মতৎপরতা অনেক ক্ষেত্রে ইসলামবিদ্বেষী কুফরী শক্তিকেও হার মানায়। তিনি বলেন, কাশ্মীর সংকটে মুসলিম উম্মাহ’র মাঝে ইহুদীবাদী ইসরাইল ও পাশ্চাত্যের গোপন ইন্ধন থাকার জোরালো সন্দেহ বিরাজমান থাকলেও এসব দেশ কাশ্মীরে ভারতের নিপীড়ন ও মানবাধিকার প্রশ্নে সৌজন্যতার জায়গা থেকে হয় কৌশলী কথা বলে অথবা নীরব থাকে। কিন্তু বর্তমান আরব শাসকদের এই সৌজন্যতাবোধ বা মানবিক শিষ্টাচারও অবশিষ্ট নেই। কী করে আরব আমিরাত কাশ্মীরে ভারতীয় নিপীড়নকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানাতে পারল, ভেবে কুল পাই না।

কাশ্মীর নিয়ে যে মুহুর্তে বিশ্বব্যাপী উম্মাহ’র অন্তরে ক্ষরণ হচ্ছে এবং প্রতিবাদের আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে, ঠিক এমন নাজুক সময়ে কী করে আমিরাত ও বাহরান গুজরাটের কসাই খ্যাত কাশ্মীরে নিপীড়নকারী মোদিকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিতে পারল, ভাবা যায় না।

জমিয়ত মহাসচিব বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিসরের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শহীদ মুহাম্মদ মুরসীকে ক্ষমতাচ্যুত করা ও পরে কৌশলী হত্যা করা এবং মিসরীয় জনগণের উপর ব্যাপক দমন-পীড়ন ও গণহত্যার মতো নিষ্ঠুরতায় স্বৈরাচার সিসিকে অস্ত্র, অর্থ ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে সহযোগিতা করছে এই আরব শাসকরা। আরব বিশ্বের মুসলমানদের জানমাল, ইজ্জত-আব্রু কেড়ে নেওয়া, নাগরিক জীবনে ভীতি তৈরি, জীবনকে অনিরাপদ করে তোলা এবং বিশ্বব্যাপী উম্মাহ চেতনা, ঐক্য ও সংহতিকে তছনছ করার জন্য বর্তমান এই আরব শাসকরাই বহুলাংশে দায়ী।

পাশ্চাত্যের কূটচাল ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের মাধ্যমে ইরাক, মিসর, লিবিয়া, সুদান, সিরিয়া, আফগানিস্তান তছনছে এসব আরব শাসকরাই সহযোগীর ভূমিকা পালন করে চলেছে। তিনি বলেন, ইসলামী চেতনাবোধ থেকে সরে পড়া আরব শাসকদের মানবাধিকার, ইনসাফ ও উম্মাহ’র স্বার্থবিরোধী তৎপরতার ইতিহাস অনেক পুরনো। শায়খুল হিন্দ ভারত বর্ষকে ইংরেজদের গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্ত করতে আন্তঃদেশীয় লড়াইয়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে আরব গিয়েছিলেন। তখন তৎকালীন আদর্শচ্যুত আরব শাসক শরীফ হোসাইন শায়খুল হিন্দকে গ্রেফতার করে ইংরেজদের হাতে তুলে দিয়ে মুসলিম জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। আরব শাসকদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং ভারতীয় বেঈমানদের কারণেই তখন শায়খুল হিন্দের সেই পরিকল্পনা সফল হতে পারেনি। শায়খুল হিন্দের সেই পরিকল্পনা সফল হতে পারলে ভারতীয় এই উপমহাদেশ থেকে ইংরেজরা বহু আগেই বিতাড়িত হতে বাধ্য হতো। তিনি বলেন, আদর্শচ্যুত এসব নিষ্ঠুর শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এখন ঈমানী দায়িত্ব হয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তি সংবাদমোদির ইংরেজি জ্ঞান নিয়ে আবারও মজা করলেন ট্রাম্প
পরবর্তি সংবাদডিসি আহমেদ কবীরকে ‘নির্দোষ’ বলে গেলেন সেই অফিস সহায়িকা