সিটি কর্পোরেশনই জানে না ‘স্টপ ডেঙ্গু’ অ্যাপ কীভাবে কাজ করবে

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ডেঙ্গু নিধনে  ‘স্টপ ডেঙ্গু’ নামে একটি অ্যাপ উদ্বোধন করা হলেও মশা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে থাকা সিটি কর্পোরেশনই জানে না  অ্যাপ কীভাবে কাজ করবে ও কতটা কাজ করবে।

নাম প্রকাশ না করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে ‘স্টপ ডেঙ্গু’ অ্যাপের আইডিয়াটি ভালো মনে হয়েছে। আমরাও কিছু আইডিয়া তাদের দিয়েছিলাম। কিন্তু যেভাবে বলা হয়েছে, তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি অ্যাপটি। আমরা দেখলাম, অ্যাপে শুধু ছবি তুলে পাঠানো যায়। কিন্তু সেই ছবি কোথায় যাচ্ছে, বা কে সেটি নিয়ন্ত্রণ করছে, সে বিষয়ে কিছুই নেই। মূলত এ কারণেই আমাদের মেয়র সাহেব (সাঈদ খোকন) ওই অনুষ্ঠানে যাননি।

ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অ্যাপটি আমরা তৈরি করিনি, যারা তৈরি করেছে তারাই ভালো বলতে পারবে।’ ডিএসসিসি’র মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘স্টপ ডেঙ্গু অ্যাপের বিষয়ে আমি শুনেছি। তবে বিস্তারিত অবগত নই। আমরা এসবে বিশ্বাসী না। কাজ করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

গত ১৭ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ স্কাউটস, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কার্যালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় সরকার অধিদফতর, আইসিটি বিভাগের অধীনস্থ এটুআই প্রকল্প এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ নিয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে।

উত্তর সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, মশা নিধনসহ অন্যান্য নাগরিক সমস্যা সমাধানের জন্য ডিএনসিসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ‘নগর অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ চালু করেছিলেন। ওই অ্যাপের মাধ্যমে তিনি নাগরিকদের নানা অভিযোগের সমাধানও দিতেন। এডিস মশার লার্ভাসহ নাগরিকদের পাঠানো ছবির ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতেন। কিন্তু মেয়রের মৃত্যুর পর সেই অ্যাপটি বন্ধ করে দেয় ডিএনসিসি।

আতিকুল ইসলাম মেয়র হওয়ার আগে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছিলেন, মেয়র হলে তিনি সেই অ্যাপের মাধ্যমেই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নাগরিকদের সমস্যার সমাধান করবেন। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও আনিসুল হকের সেই অ্যাপটি চালু করতে পারেননি বর্তমান মেয়র। এরইমধ্যে ডেঙ্গু নিধনে নতুন অ্যাপ ‘স্টপ ডেঙ্গু’ উদ্বোধন করা হয়।

জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও নিজস্ব একটি অ্যাপ চালু করবে। সংস্থাটি জানিয়েছে,  তাদের অ্যাপ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাপটি নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এরপরও ভিন্ন একটি সংগঠনের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও দুই সিটি করপোরেশন কেন নতুন অ্যাপ ‘স্টপ ডেঙ্গু’  তৈরির চুক্তি করেছে, সে বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. তুহিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘যতদূর জানি আমাদের ‘নগর অ্যাপটি’ বন্ধ রয়েছে। আমি এখানে নতুন এসেছি। তাই এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।’’

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সিস্টেম অ্যানালিস্ট আবু তৈয়ব রোকন বলেন, ‘ওই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আমাদের মেয়র যাননি। আমরা যে অ্যাপটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি, সেটি শক্তিশালী করে চালুর জন্য কাজ করছি। আমাদের অ্যাপের কাজ চলমান রয়েছে। এর মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের বিভিন্ন অভিযোগ জানাতে পারবেন। এতে এডিস মশার লার্ভা বা প্রজননস্থলসহ যেকোনও বিষয়ে সরাসরি অভিযোগ করা যাবে।’

প্রসঙ্গত, গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় স্কাউট ভবনে ‘পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তি সই অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ, হেলথ সার্ভিস ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব জাকিয়া সুলতানা, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন, এটুআই প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.মহসিন ও বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

নতুন অ্যাপের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল অ্যাপটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানান, ‘স্টপ ডেঙ্গু’ অ্যাপ ব্যবহার করে যে কেউ সারাদেশের যেকোনও স্থানে মশার প্রজনন স্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারবেন। এর মাধ্যমে পুরো দেশের মশার প্রজনন স্থানের ম্যাপিং তৈরি করা হবে। ফলে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় খুব সহজেই কোন এলাকায় কতজন লোক নিয়োগ করতে হবে, তা মশার জন্মস্থানের ঘনত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে পারবে। মশা নিয়ন্ত্রণে কী পরিমাণ ওষুধ কিনতে হবে, বা ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়টিও জানা যাবে অ্যাপে। একইসঙ্গে পরবর্তী বছরের জন্য আগে থেকেই সতর্কতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু এই কাজগুলোর সঙ্গে সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কীভাবে যুক্ত হবে, সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি সংগঠনটি। সূত্র মতে, দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে ভালো করে কিছুই জানে না।

 

 

পূর্ববর্তি সংবাদসুনামগঞ্জে আল্লামা শায়খ গোলাম নবী রহ. স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নতুন কমিটি গঠন হলো
পরবর্তি সংবাদঋণের টাকায় ভারত থেকে অস্ত্র কিনতে বলে গেলেন জয়শঙ্কর