সামাজিক ইস্যু নিয়ে আলেমদের দেশব্যাপী সেমিনার ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে

শরীফ মুহাম্মদ ।।

১৮ আগস্ট লালমনিরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে যে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে তার উদ্যোগ নিয়েছিল জেলা ওলামা পরিষদ। এটা ছিল একান্তই তাদের উদ্যোগ। কিন্তু তারা বিষয় নির্ধারণ করেছিলেন খুব সুন্দর। সময় ও সমাজ উপযোগী। ‘সামাজিক অবক্ষয় রোধে আলেম সমাজের চিন্তাধারা’। কেন এ কথাগুলো বলছি, একটু খুলে বলি।

সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করলেন বন্ধুবর মাওলানা ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী। প্রবন্ধ পাঠ শেষ হওয়ার আগেই আমার পাশে এসে বসলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন। তখনও তার সঙ্গে আমার কোনো কথাবার্তা হয়নি। এরপর ডাকা হল আমাকে কথা বলার জন্য। আমি কিছু কথা বললাম। তারপর প্রধান আলোচকের বক্তব্য শুরু করলেন মাওলানা প্রফেসর ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব কামরুজ্জামান আমাকে বললেন, ‘আপনারা কি সারা দেশে এমন অনুষ্ঠান করছেন? দেশের সবগুলো জেলা -উপজেলায় যাচ্ছেন? সব জায়গায় এমন কথা বলা দরকার। আমি খুব উপকৃত হচ্ছি। মানুষের মধ্যে ইসলামের সামাজিক উপকার ও কল্যাণের কথা তুলে ধরা দরকার।’

আমি তাকে বলতে পারলাম না, এটা আমাদের কোনো সিরিজ প্রোগ্রাম নয়। একান্তই এখানকার আলেমদের একটি জেলাভিত্তিক উদ্যোগ। আমরা শুধু মেহমান হিসেবে এসেছি। বরং স্বাভাবিকভাবে বললাম, দেশের অনেক জেলায়, অনেক জায়গায় আমাদের যেতে হয় কথা বলতে হয়। তিনি তখন বললেন, এজাতীয় প্রোগ্রাম দেশব্যাপী, জেলায় জেলায় করুন।

এরপর জোহরের নামাজের আগে আগে যখন তিনি বক্তব্য রাখতে দাঁড়ালেন, ঠিকই বললেন, আমি এখানে এসে উপকৃত হয়েছি। এজাতীয় প্রোগ্রামে সবার মনোযোগ দিয়ে অংশগ্রহণ করা দরকার।

আমি কিছুটা ভাবনায় পড়ে গেলাম। চলমান স্রোতের একজন রাজনীতিক তিনি। হঠাৎ করে তার এমন অনুভূতি বা বোধের উদয় কেন ঘটলো? এর অন্যতম কারণ মনে হলো, সেমিনারের বিষয় নির্ধারণ এবং সে আঙ্গিকে প্রবন্ধ উপস্থাপন ও আলোচকদের বিশ্লেষণী আলোকপাত। আরো কারণও থাকতে পারে।

তখন আমার কাছে মনে হলো, আসলেই ইসলামের সঙ্গে সমাজ ও জীবনের যেসব ইস্যু গভীরভাবে জড়িয়ে আছে, যেসব ইস্যু চলমান সময়ে জ্বলন্ত, সেসব বিষয় নিয়ে জেলায় জেলায় গোছানো সেমিনার হতে পারে। এর ফল অন্তত শিক্ষিত সাধারণ মানুষ এবং নানা পর্যায়ের রাজনীতিক ও পেশাজীবীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্ন জেলায় উদ্যোগী সংগঠন, সংস্থা ও নেতৃত্ব এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন।

না, এমন কথা বলছি না যে, আলোচক অল্প কয়জনের মধ্যে সীমিত রাখুন। বরং ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট রাজশাহী ও বিভিন্ন জেলা শহরের যোগ্য প্রতিভা সম্পন্ন আলোচকদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করে এ জাতীয় সেমিনার করা যায়। দেশে অন্তত শতাধিক কিংবা বলা যায়, কয়েক শত প্রতিভাসম্পন্ন, সপ্রতিভ আলোচক আলেমেদ্বীন রয়েছেন, যারা ইসলামের আলোকে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে সক্ষম। এসব সেমিনারে তাদের সাহায্য গ্রহণ করা যায়। নানা শ্রেণীর, নানা পেশার সাধারণ শিক্ষিত মানুষের মাঝে এর প্রভাব অনেক সুন্দর হবে বলে আমি আশা করছি।

আমার যদি কোনো সংস্থা এমন থাকতো যার সাহায্যে এ কাজগুলো করা যায়, ওই উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবের অভিব্যক্তি এবং সেমিনার শেষ হওয়ার পর আরো অনেকের অভিব্যক্তি ও মতামতের কারণে উদ্দীপ্ত হয়ে এজাতীয় প্রোগ্রাম আমি হাতে নিতাম। আমার নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার সে সামর্থ্য এখনও নেই। তাই আমি জেলা- উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট উদ্যোগী দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ।

এমনও হতে পারে কিছু সেমিনার হবে নিখাদ এলমি বিষয় নিয়ে। আর কিছু সেমিনার হবে সমাজ ও সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাধারণ ইস্যু নিয়ে।

এটা সেমিনারের প্রতিক্রিয়া থেকে আমার একটি প্রতিক্রিয়ামূলক ভাবনা ও প্রস্তাব। যারা ভাবার, তারা ভেবে দেখতে পারেন। এ ভাবনায় কোনোরকম সংযোজন-বিয়োজন নিয়েও নতুন প্রস্তাব দিতে পারেন।

লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া

পূর্ববর্তি সংবাদমিশরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১১ সন্দেহভাজন নিহত
পরবর্তি সংবাদসুনামগঞ্জে আল্লামা শায়খ গোলাম নবী রহ. স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নতুন কমিটি গঠন হলো