মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী ।।
ইসলামে ইবাদতের পাশাপাশি আনন্দ-উৎসবের (শরিয়তসম্মত) দু’টি দিন হচ্ছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় এসে দেখেন, মদীনাবাসীরা নির্দিষ্ট দু’টি দিনে খেলাধুলা ও আনন্দ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এ দু’টি দিন কিসের? সকলেই বললো, জাহিলি যুগে আমরা এ দু’ দিন খেলাধুলা করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ তোমাদের এ দু’ দিনের পরিবর্তে উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন। তা হলো, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন। (সুনানু আবি দাউদ: ১১৩৪)
দু’ ঈদের দিন বান্দার জন্য আল্লাহর তায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষ নিয়ামত, আতিথ্য ও মর্যাদার। এ দু’ দিন শরিয়তসম্মত আনন্দ-উৎসবের পাশাপাশি ইবাদতের মূল্যবান সময়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাষায় ঈদুল আযহার দিন পশু কোরবানি আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ আমল বা ইবাদত। একাধিক দুর্বল হাদীসে দু’ ঈদের রাত জাগ্রত থেকে ইবাদতের ফযিলত সম্পর্কে কিয়ামতের দিন বিশেষ মর্যাদা লাভের কথা বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য মুহাদ্দিসগণের নিকট নফল ইবাদতের বেলায় দুর্বল হাদিস এর ওপর আমল স্বীকৃত।
এছাড়া মহিমান্বিত ঈদুল আযহা ও তৎসংশ্লিষ্ট আরো কিছু ওয়াজিব ও মুস্তাহাব আমল রয়েছে। যেমন-
# ৯ জিলহজ্জ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ্জ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাজ শেষ করার সাথে সাথে ইমাম-মুক্তাদি, পুরুষ-মহিলা, মুকিম-মুসাফির, একাকী নামাজ আদায়কারী সবার জন্য তাকবিরে তাশরিক- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ ১বার পড়া ওয়াজিব। পুরুষ মধ্যম উঁচু স্বরে এবং মহিলা নীচুস্বরে পড়বেন। এ দিনসমূহে নতুন-পুরাতন কাযা নামায আদায় করলেও তাকবির পড়তে হবে।
ঈদুল আযহার দিন মুস্তাহাব কাজসমূহ:
# ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগা।
# মিসওয়াক করা।
# গোসল করা।
# পবিত্র সুগন্ধি ব্যবহার করা।
# উত্তম কাপড় পরিধান করা।
# শরিয়তস্মমত সাজসজ্জা গ্রহন ও হাসিখুশি করা।
# ঈদগাহে পায়ে হেটে ও তাড়াতাড়ি যাওয়া।
# এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অপর রাস্তা দিয়ে আসা।
# যাওয়া-আসার সময় উচ্চস্বরে তাকবিরে তাশরিক পড়া।
# ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করা।
# কোরবানিকারী ব্যক্তি কোনোকিছু না খেয়ে কোরবানির গোশত দিয়ে পানাহার শুরু করা।
# কোরবানিকারী নিজ হাতে পশু জবেহ করা, সম্ভব না হলে জবেহকালে উপস্থিত থাকা।
# যেসব কোরবানিকারী জিলহজ্জের ১ম তারিখ থেকে চুল, নখ ইত্যাদি কাঁটা থেকে বিরত থেকেছেন, তারা কোরবানির পর তা কাঁটা।
উল্লেখ্য, খোতবা প্রদানকালে মনোযোগ সহকারে খোতবা শুনা ওয়াজিব। এ সময় টাকা সংগ্রহ করা, মুসল্লিরা খতিবের সাথে তাকবির পড়া, কথা বলা, গল্প করা ইত্যাদি কোনোকিছুই জায়েয নয়, বরং পাপ।