পশুর চামড়া যেভাবে ব্যবহারের উপযোগী করবেন

কে এম হাবীবুল্লাহ ।।

সাবধানে চামড়া ছাড়াবেন। যেন কেটে না যায়। ময়লা না লাগে মত পরিষ্কার স্থানে রাখুন। চামড়া ছাড়ানোর পর ৫/৬ ঘণ্টার মধ্যে লবণ লাগাবেন। লবণ লাগানোর আগে চামড়ার সাথে লেগে থাকা গোস্ত ও চর্বি ভাল মত কেটে কেটে তুলে ফেলবেন। খেয়াল রাখতে হবে চামড়ার সঙ্গে লেগে থাকা চর্বি ও গোস্ত যেন ভালভাবে অপসারিত হয়। তবে তা বিশেষ কায়দায় ধারালো ছুরি দিয়ে ধীরে ধীরে করতে হবে। এরপর চামড়া পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে, হালকা রোদে দিয়ে পানি শুকিয়ে নিতে হবে। বেশিক্ষণ রোদে রাখবেন না। রোদ পাওয়া না গেলে রোদে দেয়ার দরকার নাই। কিছুর সাথে আটকে রাখলে পানি ঝরে যাবে। চামড়া ছাড়ানোর পর ৪/৫ ঘণ্টার মধ্যে লবণ লাগাতে হবে।

এই খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি লবণ দিয়ে রোদে শুকানো।

লবণ পদ্ধতি: গরু বা মহিষের চামড়ার ক্ষেত্রে নাগরা সোল চামড়ায় তিন থেকে পাঁচ কেজি, ঢিলা চামড়ায় দুই থেকে চার কেজি এবং কুরুম চামড়ায় দেড় থেকে তিন কেজি লবণ লাগাতে হবে। ছাগল বা ভেড়ার চামড়ার ক্ষেত্রে স্টার চামড়ায় আধা কেজি, হেভি ও মেল চামড়ায় ২৫০ গ্রাম লবণ দিতে হবে। এভাবে লবণ মাখিয়ে চামড়াগুলো ভাঁজ করে একটির ওপর আরেকটি স্তূপাকারে রাখা হয়। যদি শুধু একটি চামড়া হয় তাহলে মাঝখানে ধরে ভাঁজ করে রাখবেন। অর্থাৎ লেজ আর মাথার দিকে ধরে উপরে উঠালে যেভাবে ভাঁজ হয় সেভাবে। দুই সপ্তাহ পর রোদে দেয়ার সময় খুলে দিবেন।

চিত্রে থাকতে পারে: এক বা আরও বেশি ব্যক্তি এবং আউটডোর

কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার প্রথম ধাপ হলো পরিমাণ মতো লবণ প্রয়োগ। তবে তার আগে চামড়া থেকে উচ্ছিষ্ট মাংস ভালোভাবে কেটে সরিয়ে ফেলতে হবে। একটি মাঝারি সাইজের গরুর চামড়ায় লবণ লাগে ৫ থেকে ৬ কেজি এবং বড় সাইজের গরুর চামড়ায় লবণ লাগে ৮ থেকে ১০ কেজি। ছাগলের চামড়ায় লবণ লাগে চার থেকে পাঁচ কেজি। আর মহিষের চামড়ায় লাগে ১০ থেকে ১৫ কেজি।

চামড়ায় সঠিক পরিমাণে দেশীয় লবণ ব্যবহার করা দরকার। ভারতীয় লবণে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম দ্রব্য মিশ্রিত থাকে। ফলে লবণের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে কাঁচা চামড়ায় ভারতীয় লবণ ব্যবহার না করাই শ্রেয়। কিন্তু দেশীয় লবণে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য না থাকায় তা চামড়া সংরক্ষণের জন্য খুবই কার্যকর।

এ বছর কোরবানি ঈদের সময় তাপমাত্রা ও বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকবে। তাই কাঁচা চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। এ কারণে পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়ানোর পর ৬ ঘণ্টার মধ্যে লবণ প্রয়োগ করতে হবে। আর কাঁচা চামড়া ১২ ঘণ্টার বেশি রাখার প্রয়োজন হলে তাতে আবারও লবণ দিতে হবে। তাহলেই চামড়ার গুণগত মান বজায় থাকবে।

দুই সপ্তাহ পর চামড়া রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। তাতে বসা যায় বা ঘুমানো যায়। জায়নামাজ বানিয়ে নামাজও পড়া যায়। যারা পরে বিক্রি করার জন্য আরো কিছু দিন রেখে দিতে চান, তারা ১০ থেকে ১৪ দিন পর পর লবন লাগাবেন।

সংযোজনী পরামর্শ: ঢাকাসহ প্রতিটি জেলাশহর ও উপজেলা সদরে চামড়ার ছোট – বড় আড়তে যারা কাজ করেন, তাদের সহযোগিতা নেওয়ার জন্য ঈদের আগে থেকেই যোগাযোগ করা যেতে পারে।

লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া।

পূর্ববর্তি সংবাদহজ্ব করতে গিয়ে আরও দুই বাংলাদেশির মৃত্যু
পরবর্তি সংবাদযুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে একজন বৃদ্ধ মুসলিমকে মারধর করেছে তিন উগ্রবাদী খৃস্টান