একসঙ্গে কাজ করবে তুরস্ক-মালয়েশিয়া-পাকিস্তান

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তান একসঙ্গে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করার একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদের মধ্যে। আর একে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান।

সরকারি সফরে বর্তমানে তুরস্কে অবস্থানরত মাহাথির মোহাম্মাদ এরদোগানের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন ঘোষণা দেন। সেখানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, বিবৃতি দেয়া খুব সহজ। কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। তাই মুসলিম উম্মার স্বার্থে তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের একসাথে কাজ করা জরুরি।

এরদোগানের সাথে একমত হয়ে মাহাথির মোহাম্মাদ বলেন, মুসলিম উম্মাহকে অন্যদের অধীনস্ততা থেকে মুক্ত করতে হবে। এর জন্য মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। আর এর জন্য সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে এই তিনটি দেশকে (তুরস্ক, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়া)।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এ কারণেই আমি এই তিনটি মুসলিম দেশের পারস্পারিক ঐক্য ও সহযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছি। অন্তত এই তিনটি দেশ ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত যাতে আমরা প্রতিরক্ষাসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে জোর গলায় কথা বলতে পারি।

মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে তুরস্কের ভুমিকার প্রশংসা করে মাহাথির বলেন, আপনি যদি অতীতের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন তুরস্ক মুসলিম উম্মাহর ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যদিও বিভিন্ন কারণে বুঝতে পারছেন যে, মুসলিম বিশ্বে এখন এমন কোন একক শক্তি নেই যারা আমাদের রক্ষা করতে পারবে; কিন্তু আজীবন এমনটা থাকবে সেটি ভাবার কোন কারণ নেই।

এদিকে তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার এই চিন্তাকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের দ্য নিউজ অনলাইন জানিয়েছে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি টুইটারে মাহাথির ও এরদোগানের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। কোরেশি লিখেছেন, মুসলিম রেনেসাঁ ও মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদ ও প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও পাকিস্তানের এক সাথে কাজ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।

এ বছরের জানুয়ারিতে তুরস্ক সফর করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সে সময় দেশটির বিভিন্ন ইস্যুতে একসাথে কাজ করার বিষয়ে সমঝোতা হয়। এবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ে আলোচনায় এলো মুসলিম বিশ্বের এই তিনটি দেশের এক সাথে কাজ করার বিষয়টি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তারা মনে করছেন মুসলিম বিশ্বের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে দেশ তিনটি এক সাথে কাজ করলে তা হবে ঐতিহাসিক একটি পদক্ষেপ। আঙ্কারার মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হুসেইন বাগচি বলেন, ইসলামী বিশ্বের দরকার একটি রেনেসাঁ। প্রধানমন্ত্রী মাহাথির একটি সঠিক প্রস্তাব করেছেন এই তিন দেশের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিষয়ে। এর ফলে মুসলিম বিশ্ব বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষার মতো খাতগুলোতে এগিয়ে যেতে পারবে।

তিনি বলেন, এই তিনটি দেশই আরব বিশ্বের বাইরের। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মাহাথির মোহাম্মাদ মুসলিম বিশ্বকে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কোন আরব দেশের কথা উল্লেখ করেননি।

ইস্তাম্বুল ভিত্তিক সেন্টার ফর ইসলাম এন্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক প্রফেসর এ আল-আরিয়ান এই সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, এই তিন নেতাই অনেক দিন ধরে গণতন্ত্র ও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, বিশ্ব যখন অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে তখন মাহাথিরের তুরস্ক সফর ও এই প্রস্তাব কার্যকর কিছু পদক্ষেপের সূচনা করতে পারে।

চারদিনের সরকারি সফরে বর্তমানে তুরস্ক অবস্থান করছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মাহাথির মোহাম্মাদ। তার এই সফরকে কেন্দ্র করে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার হচ্ছে। সেই সাথে পাকিস্তানসহ এই তিনটি দেশ মুসলিম বিশ্বের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার উচিত বলে একমত হয়েছেন দুই রাষ্ট্র নেতা।

এর আগে স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় মাহাথির মোহাম্মাদ আঙ্কারা পৌছান। তাকে স্বাগত জানাতে এয়ারপোর্টে যান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। এয়ারপোর্টের ভিআইপি রুমে দুই নেতা ২০ মিনিটের একটি অনির্ধারিত বৈঠকে অংশ নেন। পরদিন শিডিউল অনুযায়ী তুরস্কের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে নির্ধারিত বৈঠকে অংশ নেন মাহাথির ও এরদোগান।

সূত্র: আনাদোলু, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, স্ট্রেইট টাইমস, ডেইলি সাবাহ।

পূর্ববর্তি সংবাদসিরাজগঞ্জে নদীতে মিলল নারীর মাথাবিহীন মরদেহ
পরবর্তি সংবাদএসকে সিনহার ভাইকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ