মুমিনের স্বপ্ন : বাইতুল্লাহর ছায়া আর সবুজ গম্বুজের হাতছানি

তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব ।।

মুমিনের স্বপ্নে আছে বাইতুল্লাহ আর সবুজ ছায়ার নববী মসজিদ। লাখো কোটি চোখের অসীম তৃষ্ণা এই দুটি স্বপ্নকে ঘিরে। আনমনে সে স্বপ্ন মুমিনের হৃদয়ে নাড়া দেয়। ভাবনা জাগায়। কল্পনার অথৈ সাগরে জোয়ার আনে। অনুভবে আনে পবিত্র পরশ। হজের মৌসুম এলে তার ব্যাকুলতা বেড়ে যায়। ঢেউ উঠে আবেদনে। প্রার্থনায়। চোখের কোণে জমা হয় বিন্দু বিন্দু জল। আনমনে সে চলে যায় সুদূরে। মরু মক্কায়। মসজিদে হারামে। স্বপ্নের শহরে। মদীনায়।

হাজীদের বিদায় দিতে গিয়ে সে যেন কেমন হয়ে যায়। কেমন এক দোলায় যেন দুলে উঠে। কী ভাব-আবেগে সে ভারী হয়ে যায়। কল্পনা তাকে আনমনা করে দেয় বারবার। তার চোখের সামনে তখন ভাসতে থাকে একের পর এক দূর-দৃশ্য। মনে হয় যেন না থেকেও সে আছে ওখানে। তার সামনেই ঘটছে সব। সে দেখতে পাচ্ছে গুঞ্জরিত মাতাফ। চারিদিকে তালবিয়া পাঠরত লাখো মানুষ। সাদা ধবধবে ইহরাম পরে আছে সবাই। তওয়াফ চলছে।

এখানে হাজরে আসওয়াদ। ওখানে মাকামে ইবরাহীম। সামনে মুলতাযাম। প্রার্থনা চলছে অনবরত। উচ্ছ্বাস নেই। উল্লাস নেই। কলরব কোলাহল কিছুই নেই। নেই নীরবতাও। শুধু মিনতি আর আকুতি। সম্বোধন আর আকুলতা। শান্ত আহাজারি আর উষ্ণ শ্বাস। এরই মধ্যে সে নিজেকে খুঁজে পায়। আর খুঁজে পায় তার বুকের ভেতরে লুকানো অশ্রুকে।

তার সামনে ভেসে উঠে মদীনা। নবীর শহর। যেখানে সীমাহীন আগ্রহ নিয়ে ভিড় করছে আশেকিন রওযাকে ঘিরে। যেখানে আছে এক টুকরো বেহেশতি জমিন। রওযাতুম মিন রিয়াযিল জান্নাহ!!

কল্পনায় ভেসে উঠে দুটি পর্বত। ভেসে উঠে স্বপ্নে, আবেগে, ভালোবাসায়। সাফা ও মারওয়া। মহান স্মৃতি বিজড়িত দুটি স্তম্ভ। ভেসে উঠে শিশু ইসমাঈলের পিপাসা কাতর ছটফটানি। মা হাজেরার ব্যকুলতা। একবার এই পাহাড়ে। আবার ঐ পাহাড়ে। অস্থির মনের আকুল প্রার্থনা- এক পেয়ালা পানি। পিপাসিত বুকের মানিক। তার শুকনো দুটি ঠোঁট। কল্পনার কাছে তো অতীত বর্তমানে তেমন কোনো ফারাক নেই। তাই সে বর্তমানকে যেভাবে অনুভব করে। তেমনি অনুভব করে হাদীসে পাকে বর্ণিত অতীতকে।

সে শুনতে পায় লাখো কণ্ঠের উচ্চারণ- লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারীকা লাক। এ যে আরাফা! এই ময়দানে উপস্থিতির স্মৃতি অসংখ্য। কত নবী রাসূল এসেছেন এখানে। কল্পনায় যেন ভেসে উঠে বাবা আদম আ. আর মা হাওয়া আ.। ভেসে উঠে ইবরাহীম এবং তার পুত্র ইসমাঈল আ.। ভেসে উঠে বিদায় হজের ভাষণ- আলা হাল বাল্লাগতু? ভেসে উঠে লক্ষ সাহাবীর একত্র স্বীকারোক্তি।

ঐ তো মীনা। কুরবানীর মীনা। মহান ত্যাগের শিক্ষা ওখানে। আরাফার তপ্ত অশ্রু বিসর্জনের পরই যেন বিসর্জন রক্তের। বাবা ইবরাহীমের স্বপ্ন। বালক ইসমাঈলের সমর্পণ। আর আসমান থেকে নেমে আসা দুম্বার স্মৃতি এখানে। এখানে আনুগত্যের উপমাহীন দৃষ্টান্ত। এই স্বপ্ন কবে বাস্তবতার মুখ দেখবে? কিংবা আদৌ কি দেখবে কখনো? এই গরিব মুমিনের নসীবে কি আসবে সেই পরম সৌভাগ্য?

পূর্ববর্তি সংবাদপ্রিয়া সাহাকে গ্রেপ্তারের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদইসকনের বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত