হজ্ব ও উমরা: পদ্ধতি ও মাসায়েল ( ০২)

[গত পর্বের পর]

মুফতি মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া  ।।

 

হজ্ব আদায়ের তিন পদ্ধতি

হজ্ব তিন প্রকার। ইফরাদ, কিরান ও তামাত্তু। এ তিন প্রকারের যেকোনোটি আদায় করলেই ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যাবে।

১. ইফরাদ

শুধু হজ্বের নিয়তে মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কায় পৌঁছে হজ্ব¡ সম্পাদন করা। বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৩৬; মানাসিক ৯৫

২. কিরান

হজ্বের মাসসমূহে (শাওয়াল, যিলকদ, যিলহজ্ব¡) একই সঙ্গে হজ্ব ও উমরার নিয়তে মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কায় পৌঁছে প্রথমে উমরাহ করা। মাথার চুল না মুণ্ডিয়ে বা না ছেঁটে ওই ইহরামেই হজ্ব করা এবং কুরবানি করা। রদ্দুল মুহতার ২/৫৩০-২

৩. তামাত্তু

হজ্বের মাসসমূহে মীকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে উমরাহ পালন করা এবং মাথা মুণ্ডিয়ে ইহরামমুক্ত হয়ে যাওয়া। এরপর এই সফরেই হজ্বের সময় হজ্বের নিয়তে নতুন করে  ইহরাম বেঁধে হজ্ব পালন করা এবং কুরবানী করা। রদ্দুল মুহতার ২/৫৩৫-৮

 

উমরাহ: উমরার নিয়তে মীকাত থেকে ইহরাম করে তাওয়াফ, সাঈ ও হলক করা।

 

উমরাহ ও হজ্বের ইহরামের প্রস্তুতি

ইহরামের প্রস্তুতি (বাড়ি থেকে এ প্রস্তুতি সম্পন্ন করুন)

* ইহরামের প্রস্তুতি হিসেবে মোচ, নখ এবং শরীরের অতিরিক্ত পশম কেটে নিন। আলকিরা ১৬২; মানাসিক, মোল্লা  আলী, পৃষ্ঠা : ৯১

* এরপর উত্তমরূপে গোসল করে নিন। ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত। গোসল সম্ভব না হলে শুধু অযু করলেও চলবে। জামে তিরমিযী, হাদীস : ৮৩০; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮০

* গোসলের পর পুরুষ মহিলা সকলে শরীরে আতর লাগাবেন। আতর শুধু শরীরে লাগানোই মুস্তাহাব। ইহরামের কাপড়ে আতর না লাগানোই ভালো। মানাসিক ৯৮; আলবাহরুল আমীক ২/৬৪৩; আলবাহরুর রায়েক ২/৩২১; আলমাজমূ ৭/২২৮

আর ইহরামের কাপড়ে এমন গাঢ় আতর লাগানো নিষেধ, যা ইহরামের পরও বাকি থাকে। সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৩৯; আলমাবসুত ৪/১২৩; মানাসিক ৩২১

* মহিলাগণও গোসলের পর শরীরে আতর লাগাতে পারবেন। তবে এত বেশি লাগাবেন না, যদ্দারা সুঘ্রাণ বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তারা কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবেন না। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৩০; আলমাসালিক ১/৩৩০

* ইহরামের কাপড় পরে নিন। একটি কাপড় লুঙ্গির মতো করে পরবেন। এটি সেলাইহীন হওয়া উত্তম। নিচের এ কাপড়টি লুঙ্গির মতো সেলাই করে পরা মাকরূহ। নীচের অংশটি সেলাইবিহীন পরলে সতর যেন খুলে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। অবশ্য যাদের সতর খুলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যেমন বৃদ্ধ বা লুঙ্গি পরার অভ্যাস নেই এমন লোকেরা সেলাইযুক্ত লুঙ্গি পরতে পারবেন। (আহকামে হজ্ব, মুফতী শফী রাহ. ৩৪; তরীকায়ে হজ্ব ও উমরা ১০৬)

অপরটি চাদর পরার মতো করে শরীরের উপরের অংশে পরবেন। উভয় কাঁধ ঢেকে চাদর পরুন। কেউ কেউ শুরু থেকেই ডান কাঁধ খোলা রেখে চাদর পরেন। এটি ঠিক নয়; বরং এটি শুধু তাওয়াফের ক্ষেত্রে করণীয়।

দুই ফিতা বিশিষ্ট চপ্পল বা পায়ের পাতার উঁচু অংশ খোলা থাকে এমন স্যান্ডেল পরে নিন। আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮১

আরও পড়ুন: হজ্ব ও উমরাহ: পদ্ধতি ও মাসায়েল

 

মহিলার ইহরামের প্রস্তুতি

মহিলারাও পুরুষের মতোই প্রস্তুতি নিবেন। তবে তারা স্বাভাবিক কাপড়, ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন। তাদের জন্য ইহরামের ভিন্ন পোশাক নেই। এমনকি সাদা কাপড় পরাও জরুরি বা মুস্তাহাব নয়। তারা জুতা-মোজাও পরতে পারবেন। আর ইহরাম অবস্থায়ও চেহারার পর্দা করা জরুরি। তবে মুখমণ্ডলে কাপড় লাগানো যাবে না। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৪১৯; ফাতহুল বারী ৩/৪৭৪; আলমাসালিক ১/৩৫৪; মানাসিক ১১৫

* মহিলাগণ অপবিত্র অবস্থায় ইহরাম করতে পারবেন তবে ইহরামের পূর্বে গোসল করে নেওয়া মুস্তাহাব। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৭৪০; মানাসিক ৯৭

* পুরুষের মতো মহিলার জন্যও ইহরামের পূর্বে শরীরে আতর লাগানো মুস্তাহাব। আর কাপড়ে না লাগানোই ভালো। সুনানে আবু দাউদ : ১৮৩০; আলবাহরুল আমীক ২/৬৩৭-৬৩৮; আলবেনায়া ৫/৩৮; আলমাজমূ ৭/২২৮

উপরোক্ত নিয়মে ইহরামের প্রস্তুতি নিন। সামনে ইহরাম করার নিয়ম বলা হবে।

সফর শুরু

* মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে বের হওয়ার আগে দু’রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে নিন। সফরে বের হওয়ার সময় দু’ রাকাত নামায পড়া সুন্নত। নামায শেষে সফরের কবুলিয়াত, কামিয়াবি, খায়ের-বরকত এবং নিজের ও পরিবার-পরিজনের জন্য আফিয়ত ও হেফাযতের দুআ করুন।

* ঢাকা থেকে আগে মক্কা যাবেন না মদীনায় তা জেনে নিন। সফর যদি আগে মদীনার হয় তাহলে ঢাকা থেকে স্বাভাবিক পোশাকে সফর হবে। মদীনা থেকে মক্কায় যাওয়ার সময় ইহরাম বাঁধতে হবে। কিন্তু যদি ঢাকা থেকে জিদ্দা এবং সেখান থেকে মক্কার সফর হয় তাহলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ইহরামের কাপড় পরে নিবেন।

* বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে পাসপোর্ট, টিকেট, রিয়াল নিয়েছেন কি না তা আবার দেখে নিন। সাথের বড় ব্যাগে নাম লেখা হল কি না নিশ্চিত হোন। হাত ব্যাগে বা সাথে বহনযোগ্য ব্যাগে কাঁচি, ব্লে−ড, রেজর, ছুরি ইত্যাদি রাখবেন না। কেননা এগুলো বিমানে যাত্রীর সাথে রাখা নিষেধ। তাই এ জাতীয় প্রয়োজনীয় লোহার জিনিসপত্র লাগেজ বা বড় ব্যাগে নিন।

* পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়দের থেকে বিদায় নিন এবং বের হওয়ার সময় এ দুআ পড়ুন

بِسْمِ اللّهِ تَوَكَّلْتُ عَلي اللّهِ، لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ اِلاَّ بِاللّهِ

* সম্ভব হলে পরিবার-পরিজনের হেফাযতের উদ্দেশ্যে নিম্নের দুআটি পড়ুন :

اَسْتَوْدِعُكُمُ اللّهَ الذِّىْ لاَ تَضِيْعُ وَدَائِعُهُ

অর্থ : আমি তোমাদেরকে আল্লাহর হেফাযতে রাখছি, যাঁর (কাছে রাখা) আমানত নষ্ট হয় না।

اَللّهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ اَنْ اَضِلَّ اَوْ اُضَلَّ، اَوْ اَزِلَّ اَوْ اُزَلَّ، اَوْ اَظْلِمَ اَوْ اُظْلَمَ، اَوْ اَجْهَلَ اَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ.

অর্থ : ইয়া আল্লাহ!  আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি নিজে পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে এবং অন্য কেউ আমাকে পথভ্রষ্ট করা থেকে। নিজের পদস্খলন থেকে এবং অন্যের দ্বারা পদস্খলিত হওয়া থেকে। নিজে জুলুম করা থেকে এবং মাজলুম হওয়া থেকে। আমি অন্যের সাথে যেন মূর্খতার আচরণ না করি এবং কেউ যেন আমার সাথে মূর্খতার আচরণ না করে।

* বিসমিল্লাহ বলে ডান পা দিয়ে গাড়িতে উঠুন। এরপর আলহামদুলিল্ল−াহ বলুন। এরপর প্রথমে তিনবার আল্লাহু আকবার বলে এই দুআ পড়ুন

سُبْحَانَ الَّذِىْ سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِيْنَ وَاِنَّا اِلَي رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ.

এরপর তিনবার আলহামদুলিল্লাহ ও তিনবার আল্লাহু আকবার বলুন। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৬০৫

* এরপর নিচের দুআটি পড়ুন, আরবী না পারলে  অন্তত বাংলায় দুআ করুন।

اَللّهُمَّ اِنَّا نَسْئَلُكَ فِيْ سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَىْ وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَي اَللّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ، اَللّهُمَّ اَنْتَ الصَّاحِبُ فِيْ السَّفَرِ وَالْخَلِيْفَةُ فِيْ الْاَهْلِ، اَللّهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوْءِ الْمُنْقَلَبِ فِيْ الْمَالِ وَالْاَهْلِ.

অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আমাদের এই সফরে আপনার কাছে নেকি ও তাকওয়া প্রার্থনা করছি। আর এমন সব আমল প্রার্থনা করছি, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। হে আল্লাহ!   আমাদের এ সফরকে সহজ করে দিন এবং এর দূরত্বকে সংকুচিত করে দিন। হে আল্লাহ! সফরে আপনিই আমাদের সাথী এবং পরিবার-পরিজনের মাঝে আপনি একমাত্র কর্মবিধায়ক। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি সফরের কষ্ট ও মন্দ পরিস্থিতি থেকে এবং ফিরে আসার পর সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের মধ্যে দুরবস্থার সম্মুখীন হওয়া থেকে।

উপরের দুআসমূহ শুধু হজ্বের সফরের জন্য নয়; বরং যে কোনো সফরের মাসনুন দুআ।

 

ঢাকার হাজ্বীক্যাম্প ও বিমানবন্দর

* বাংলাদেশ বিমানের সব হজ্বযাত্রীকে হাজ্বীক্যাম্পে যেতে হয়। এখান থেকে তাদের ব্যবস্থাপনায় বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। কখনো সরাসরি বিমানবন্দর যেতে হলে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়।

* যারা হাজ্বীক্যাম্প হয়ে যাবেন, তাদের ইমিগ্রেশন, বোডিং পাস, মাল-সামানা ও লাগেজ গ্রহণ ইত্যাদি হাজ্বীক্যাম্পেই সম্পন্ন করা হয়। তাই সাথে বহনযোগ্য একান্ত জরুরি সামানাসহ ছোট ব্যাগ রেখে অন্য সব সামানা লাগেজে দিয়ে দিন।

* সকল উমরাকারীর এবং বিমান বাংলাদেশের হজ্বযাত্রী ছাড়া অন্য হাজ্বীদের সরাসরি বিমানবন্দরে যেতে হয়। তাই তাদের ইমিগ্রেশন, বোডিং ওখানেই হবে। সরাসরি মক্কাগামী হাজ্বীদের জন্য বাসা থেকে ইহরামের কাপড় পরা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে আসা ভালো। যেন বাড়ি থেকে যারা ইহরাম করে আসেননি তারা ইমিগ্রেশনের পর কিংবা বিমানে উঠেই নিয়ত ও তালবিয়ার মাধ্যমে ইহরাম করে নিতে পারেন।

 

বিমান বন্দরে নামায

যারা ঢাকায় মুকীম তারা বিমান বন্দরেও মুকীম। বিমান ফ্লাই করার আগ পর্যন্ত তারা মুকীম থাকবেন। অবশ্য বিমান উপরে উঠে গেলে পথিমধ্যে সকলে মুসাফির থাকবেন। তাই বিমানের ভেতর চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত পড়বেন।

 

বিমানে অযু ও নামায

বিমানে বিশেষত হজ্ব ফ্লাইটে যাত্রীদের অযু করা নিষেধ থাকে। তাই নামাযের সময় অযু থাকলে ভালো। অন্যথায় এ পরিস্থিতিতে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে। আর বিমানে দাঁড়িয়ে বা বসে সমতলে রুকু-সিজদা করে নামায পড়া সম্ভব। তাই সেভাবেই নামায পড়তে চেষ্টা করবেন। এভাবে নামায পড়লে এ নামায পরিপূর্ণ সহীহ হয়ে যাবে। পরে আর পড়তে হবে না। কিন্তু কেউ যদি সিটে বসে ইশারায় পড়ে নেন তবে পরবর্তীতে এ নামায অবশ্যই কাযা পড়তে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য

বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় বিমান পশ্চিম দিকে যায়। এ জন্য নামাযের ওয়াক্ত দীর্ঘ সময় থাকে।  পক্ষান্তরে ফেরার সময় নামাযের ওয়াক্ত দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ফজর ও মাগরিবের ওয়াক্ত খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই নামায কাযা হয়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

 

শুধু উমরা ও তামাত্তু হজ্বকারীর উমরা আদায়ের পদ্ধতি

তামাত্তু হজ্বকারীকে প্রথমে উমরা আদায় করতে হয়। অতপর মাথা মুণ্ডানোর মাধ্যমে হালাল হয়ে হজ্বের সময় অর্থাৎ ৭/৮ যিলহজ্ব হজ্বের ইহরাম করতে হয়। তাই তামাত্তুকারীর ধারাবাহিক আমল হিসেবে নিম্নে আগে উমরার পদ্ধতি ও নিয়ম উল্লেখ করা হচ্ছে। প্রকাশ থাকে যে, যারা শুধু উমরা আদায় করতে চান তাদের জন্যও উমরার এই বিবরণ প্রযোজ্য হবে।

উমরার ফরয-ওয়াজিব

মীকাত বা তার আগে থেকে শুধু উমরার ইহরাম করে বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়ার সাঈ করা, এরপর মাথার চুল মুণ্ডিয়ে বা ছোট করে হালাল হওয়া। অর্থাৎ উমরার ফরয আমল দুটি এবং ওয়াজিব আমল দুটি।

উমরার দুই ফরয : ১. উমরার নিয়তে ইহরাম করা। অর্থাৎ উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করা। ২. বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা। বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৭৯

উমরার দুই ওয়াজিব : ১. সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করা। ২. মাথার চুল কামিয়ে ফেলা বা ছোট করা। বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৮০

 

কখন ইহরাম বাঁধবেন?

ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে সরাসরি মক্কাগামী হাজ্বীদের জন্য মীকাত হল কারনুল মানাযিল ও যাতু র্ইক-এর মধ্যবর্তী স্থান। (আহকামে হজ্ব ৪১) যে স্থান সাধারণত বিমান জিদ্দা অবতরণের আধা ঘণ্টা আগে অতিক্রম করে থাকে। ঢাকা থেকে আগে  মক্কাগামীদের জন্য ইহরাম না করে এই স্থান অতিক্রম করা জায়েয নয়। এই স্থানের আগেও ইহরাম করা জায়েয। বরং মুস্তাহাব হল নিজ বাড়ি থেকে ইহরাম করা। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩১৪৪; ইলাউস সুনান ১০/২১; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৩৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৩৪; আততামহীদ ১৫/১৪৪-১৪৬)

তবে ফ্লাইট শিডিউল পরিবর্তন কিংবা বিলম্ব হতে পারে বিধায় ফ্লাইটের সময়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে ইহরাম বাঁধবেন। সঠিক সময়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে না পারলে বিমানে উঠার আগে ইহরামের কাপড় পরে ইহরামের দুই রাকাত নামায পড়ে নিন। এরপর বিমানে উঠার আগ মুহূর্তে কিংবা বিমানে উঠেই ইহরামের নিয়ত করে তালবিয়া পড়ে ইহরাম সম্পন্ন করে নিবেন।

আর যদি ঢাকা থেকে আগে মদীনা মুনাওয়ারা যাওয়া হয় তাহলে এখন ইহরাম বাঁধবেন না; বরং সাধারণ পোষাকে মদীনা মুনাওয়ারা যাবেন। অতপর মদীনা মুনাওয়ারা থেকে মক্কায় যাওয়ার সময় মদীনা মুনাওয়ারা থেকে কিংবা সেখানের মীকাত যুলহুলাইফা থেকে ইহরাম বাঁধবেন। গুনইয়াতুন নাসিক ৫০

 

যেভাবে ইহরাম বাঁধবেন

মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে ইহরামের নিয়ত করার আগে টুপি মাথায় দিয়ে বা মাথা ঢেকে দু’রাকাত নামায পড়ে নিন। এই দু’রাকাত নামায পড়া সুন্নত। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৯৯)

এই নামাযের জন্য আলাদা কোনো নিয়ত বা নির্দিষ্ট কোনো সূরা নেই। মাকরূহ ওয়াক্ত হলে কিংবা অন্য কোনো ওজরে এই দু’রাকাত নামায পড়তে না পারলেও কোনো সমস্যা নেই। কেননা, ইহরাম বাঁধার জন্য এই নামায জরুরি নয়। এই নামায ছাড়াও ইহরাম বাঁধা যায়। শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৫২১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮২

নামায শেষে টুপি খুলে নিন। এরপর কিবলামুখী হয়ে পুরুষ-মহিলা সকলে এভাবে নিয়ত করুন :

উমরার ইহরামের নিয়ত : হে আল্লাহ!  আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য উমরার নিয়ত করছি। তা সহজ করুন এবং কবুল করুন।’

নিয়তের পর তালবিয়া পড়ুন। নিয়তের পর তালবিয়া পড়ার দ্বারাই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। পুরুষ উচ্চস্বরে আর মহিলা অনুচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বেন। সহীহ ইবনে হিব্বান  : ৩৮০৫; সুনানে দারা কুতনী ২/২৯৫; মাবসূত ৪/৬, ১৮৮

তালবিয়া হল :

لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ.

 

উচ্চারণ : লাব্বাইকা আল−াহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক। লা-শারীকা লাক।

অর্থ : ‘‘আমি হাজির : হে আল্লাহ!  আমি হাজির, আমি হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সকল রাজত্ব আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই।’’ সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৪৯

* উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়ার দ্বারাই আপনার ইহরাম সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন থেকেই আপনার উপর ইহরামের বিধি-নিষেধ আরোপিত হবে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

* এরপর দরূদ শরীফ পড়ুন এবং এই দুআ পড়ুন

اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْئَلُكَ رِضَاكَ وَالْجَنَّةَ، وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ غَضَبِكَ وَالنَّارِ.

 

অর্থ : : হে আল্লাহ!  আমি আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রার্থনা করছি। আপনার অসন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চাচ্ছি। সুনানে দারা কুতনী ২/২৩৮; আলকিরা লিকাসিদি উম্মিল কুরা ১৭৮

* এরপর প্রাণ খুলে দুআ করুন। এ সময় দুআ কবুল হয়।

 

ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ

* ঝগড়া-বিবাদ করা নিষেধ।

* সাজ-সজ্জা গ্রহণ করা নিষেধ।

হাদীস শরীফে আছে, ‘উত্তম হজ্ব¡ পালনকারী সেই ব্যক্তি, যার চুল উষ্কখুষ্ক এবং দেহ কটুগন্ধি।’ জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৯৯৮

তাই ইহরাম অবস্থায় সবধরনের সাজ-সজ্জা ত্যাগ করুন। সাজ-সজ্জার জন্য চুলে বা শরীরে তেলও ব্যবহার করা যাবে না।

* পুরুষের জন্য শরীরের কোনো অঙ্গের আকৃতি বা গঠন অনুযায়ী তৈরিকৃত বা সেলাইকৃত পোশাক পরাও নিষেধ। যেমন : পাঞ্জাবি, জুব্বা, শার্ট, গেঞ্জি, কোর্ট, সোয়েটার, সেলোয়ার, প্যান্ট, জাঙ্গিয়া। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৮৯) লুঙ্গিও সেলাইহীন পরাই উত্তম। সেলাইযুক্ত লুঙ্গি পরা মাকরূহ। তবে এ কারণে কোনো প্রকার দম বা জরিমানা ওয়াজিব হবে না। কারণ এটা শরীরের আদলে সেলাইযুক্ত পোশাক পরিধানের মতো নয়। তাই একেবারে বৃদ্ধ বা রুগী, যারা সেলাইহীন পরলে সতর খুলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে তাদের জন্য সেলাইযুক্ত লুঙ্গি পরাই বাঞ্ছনীয়।

মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. বলেন, ইহরামের লুঙ্গির মাঝে সেলাই করা থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। তবে উত্তম হল, ইহরামের কাপড় একেবারে সেলাইমুক্ত হওয়া। আহকামে হজ্ব ৩৪; তরীকায়ে হজ্ব ও উমরা ১০৬

* পুরুষের জন্য মাথা ও চেহারা ঢাকা নিষেধ। টুপি, চাদর, কম্বল ইত্যাদি দ্বারা চেহারা, মাথা ঢাকা যাবে না। আর মহিলাদের জন্য শুধু চেহারায় কাপড় লাগানো নিষেধ। মুআত্তা মুহাম্মাদ, হাদীস : ৪১৮; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী, হাদীস : ৯০৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪৮৭-৮

* পুরুষের জন্য পায়ের পাতার উঁচু অংশ ঢেকে যায় এমন জুতা পরিধান করা নিষেধ। এমন জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার করবেন যা পরলে ওই উঁচু অংশ খোলা থাকে। যেমন দুই ফিতাবিশিষ্ট স্যান্ডেল। সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯০

* ইহরাম অবস্থায় কাপড় বা শরীরে আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ। তদ্রুপ ইচ্ছাকৃত আতরের ঘ্রাণ নেওয়াও নিষেধ। সুগন্ধিযুক্ত তেল, নারিকেল ও সরিষার তেল এবং যয়তূন ও তিলের তেলও লাগানো যাবে না। সুগন্ধি সাবান দ্বারা হাত-পা ইত্যাদি ধোয়া যাবে না। পাউডার, স্নো, ক্রীম-পারফিউম ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি পান ছাড়া শুধু সুগন্ধি জর্দাও খাওয়া যাবে না। পানের সাথে খাওয়াও মাকরূহ। ইচ্ছাকৃতভাবে ফল-ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া মাকরূহ। সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৭৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৮২৭, ১৪৮৩৩; মানাসিক ১২১, ৩১৭; আহকামে হজ্ব ৩৪, ৯৩

* চুল, দাড়ি আঁচড়ানো ও চুলে সিঁথি করা নিষেধ। কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৪৯৮

* নখ কাটা বা শরীরের কোনো স্থানের চুল বা পশম উপড়ানো নিষেধ। আলমুগনী ৫/১৪৫; মানাসিক ১১৭

* ইহরাম অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করা বা স্ত্রীর সামনে কামোত্তেজক কথা বলা বা কাজ করা নিষেধ। তবে স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি বসা, চলাচলে স্ত্রীর হাত ধরে রাখা নিষেধ নয়। কিন্তু একই বিছানায় শোয়া যাবে না। সূরা বাকারা ২ : ১৯৭; মানাসিক ১১৭

* বন্য পশু-পাখি শিকার করা বা কোনো শিকারীকে সহযোগিতা করা নিষেধ। তবে হাঁস-মুরগীসহ যে কোনো গৃহপালিত পশু-পাখি জবাই করা জায়েয। সূরা মায়েদা ৯৫-৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৯৬; মানাসিক ১১৯

* কাপড় বা শরীরের উকুন মারা নিষেধ। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস :১৫৮৭৬; মানাসিক ১১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৪

 

ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ নয়

ইহরাম অবস্থায় মাথা ও মুখ ছাড়া গোটা শরীর চাদর ইত্যাদি দিয়ে আবৃত করা যাবে। কান, ঘাড়, গলা ও পা ঢাকা যাবে। মাথা ও গাল বালিশে রেখে শোয়া যাবে। তবে পুরো মুখমণ্ডল বালিশের উপর রেখে শোয়া যাবে না। তদ্রƒপ চাদর, লেপ ইত্যাদি দিয়ে মাথা, মুখ ঢাকা যাবে না। মানাসিক ১২৩-৪

* ইহরাম অবস্থায় ইহরামের পোশাক পরিবর্তন করা যাবে। ময়লা বা নাপাক না হলেও পরিবর্তন করা যাবে। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫০১০; মানাসিক ৯৮

* ইহরামের কাপড় ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে বা তালি লাগিয়ে পরিধান করা যাবে। মানাসিক ৯৮; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮১

* টুথপেস্ট ও মাজন দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

* সাবান ব্যবহার না করে গোসল করা যাবে। তবে ইচ্ছাকৃত শরীরের ময়লা পরিষ্কার করা বা উঠানো যাবে না। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩০৫৯-৬৩; মানাসিক ১২০, ১২২; গুনইয়াতুন নাসিক ৯০

* সুঘ্রাণযুক্ত ফল খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। তবে ইচ্ছাকৃত ফলের ঘ্রাণ শোঁকা মাকরূহ। যুবদাতুল মানাসিক ১০০

* মশা-মাছি, পিঁপড়া, বিচ্ছু ও কষ্টদায়ক পোকা-মাকড় মারা যাবে। কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৪৯৬; মানাসিক ৩৭৯

* মাথা, দাড়ি চুলকানো জায়েয। চুল পড়ার আশঙ্কা থাকলে কম চুলকাবেন। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫১৭৮; মানাসিক ১২৫

* আয়না দেখা যাবে। কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৪৯৮

* ঘ্রাণমুক্ত লিপজেল, ভ্যাসলিন সাজ-সজ্জার নিয়ত ছাড়া জরুরতবশত ব্যবহার করা যাবে। মানাসিক ১২২

* ছাতা ব্যবহার করা যাবে। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪১৭

* সেলাইযুক্ত বেল্ট, ব্যাগ ব্যবহার করা যাবে। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫৬৮৬; মানাসিক, মোল্লা  আলী কারী ১২২

* আংটি, ঘড়ি, চশমা পরা যাবে। মানাসিক ১২২

 

মহিলাদের ইহরাম সংক্রান্ত বিশেষ মাসায়েল

* মহিলাদের ইহরামের নিয়ত ও ইহরাম করার নিয়মাবলি পুরুষের মতোই। আর ইহরামের অধিকাংশ বিধি-নিষেধও পুরুষের মতোই। তবে কিছু কিছু বিষয়ে ভিন্নতা রয়েছে। যেমন, মহিলাদের জন্য সেলাইযুক্ত কাপড় পরা জায়েয। মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় ঢিলেঢালা স্বাভাবিক পোশাক পরবেন। নতুন পোশাক জরুরি নয়। রঙিন পোশাক এবং বাড়িতে ব্যবহৃত সাধারণ পোশাকও পরতে পারবেন। কালো বোরকা ব্যবহার করতে পারবেন। অনেকে ইহরাম অবস্থায় সাদা বোরকা পরা এবং সাদা পোশাক পরা জরুরি মনে করেন। এটা ঠিক নয়। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৪১৯; মাসালিক ১/৩৫১; মানাসিক ১১৫; গুনইয়াতুন নাসিক ৯৪

* মক্কায় অবস্থানকালে মহিলাগণ হজ্বের ইহরাম বাসাতেই করবেন। এটিই উত্তম।

* বাইরে বের হলে অবশ্যই মাথা, চুল ঢাকবেন এবং মুখমণ্ডলের পর্দাও করবেন। ইহরাম অবস্থায় পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা যাবে না। অন্য সময়ের মতো এখনও চেহারার পর্দা করা জরুরি। কিন্তু মুখমণ্ডলে কাপড় লাগানো যাবে না। এজন্য বিশেষ ধরনের ক্যাপ পাওয়া যায়, যা পরে উপর দিয়ে নেকাব ঝুলিয়ে দিলে চেহারার পর্দাও হয়, নেকাবও চেহারার সাথে লেগে থাকে না। হ্যাঁ, বাতাসে বা হাঁটা-চলার সময় মাঝে মধ্যে চেহারার সাথে নেকাব লেগে গেলে কোনো অসুবিধা নেই। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৩৩; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪৩৩; মানাসিক ১১৫

* ইহরাম অবস্থায় চুলে তেল দেওয়া, সিঁথি করা যাবে না। চুল বেঁধে রাখতে পারবেন। আর চুল না আঁচড়ানোর কারণে যদি খুব বেশি অস্বস্তি লাগে কিংবা চুলে জট লেগে যায় তাহলে সাজসজ্জার নিয়ত না করে প্রয়োজনমতো আঁচড়ানো যাবে।

* মেহেদি লাগানো যাবে না এবং স্নো, পাউডার, লিপস্টিক ইত্যাদি সাজসজ্জার প্রসাধনী ঘ্রাণমুক্ত হলেও ব্যবহার করা যাবে না। গুনইয়াতুন নাসিক, পৃষ্ঠা : ৮৯-৯০

* জুতা, মোজা পরতে পারবেন। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৩১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮৬; গুনইয়াতুন নাসিক ৯৪

* মহিলারা ইহরাম অবস্থায় হাত মোজাও পরতে পারবেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মুহরিম মহিলা হাতমোজা ও পায়জামা পরিধান করতে পারবে। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৪৪০

সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ইহরাম অবস্থায় তার কন্যাদেরকে হাতমোজা পরার নির্দেশ দিতেন। কিতাবুল উম্ম ২/২২৩

কাসিম, হাকাম, হাম্মাদ রাহ. প্রমুখ তাবেয়ীগণের মতেও ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের হাতমোজা পরা জায়েয। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা : ১৫৯৬৭, ১৪৪৪১

* ওজর অবস্থায় থাকলে অর্থাৎ মাসিক ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব অবস্থায় ইহরামের নিয়তে তালবিয়া পড়তে পারবেন। হজ্বের অন্যান্য কাজও করতে পারবেন। শুধু তাওয়াফ, নামায, কুরআন তিলাওয়াত ও মসজিদে প্রবেশ করা নিষেধ। সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৫৬; গুনইয়াতুন নাসিক ৯৪

* স্বর্ণ-রূপা ও অন্যান্য অলংকার পরতে পারবেন। তবে ইহরাম অবস্থায় অলংকার না পরাই ভালো। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৪০৭; যুবদাতুল মানাসিক ১০৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮৬

* তালবিয়া নিচু আওয়াজে পড়বেন। কেননা মহিলাদের জন্য জোরে পড়া নিষেধ। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৮৮২; মানাসিক ১১৫; গুনইয়াতুন নাসিক ৯৪

 

নাবালেগ, অবুঝ শিশু ও পাগলের ইহরামের নিয়ম ও এ সংক্রান্ত মাসায়েল

নাবালেগ ছেলে-মেয়ে যারা বুঝমান তারা নিজের ইহরাম নিজেই করবে। অর্থাৎ নফল উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়বে। তদ্রুপ হজ্বের সময় নফল হজ্বের নিয়ত করে তালবিয়া পড়বে। আর অবুঝ শিশু ও পাগলের পক্ষ থেকে তার ইহরাম সফরে থাকবেন এমন অভিভাবক করবেন। অর্থাৎ এভাবে বলবেন যে, আমার ছেলে বা ভাই অমুকের পক্ষ থেকে ইহরাম করছি। হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন, সহজ করুন। এরপর তালবিয়া পড়বেন। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৩০১

* তাওয়াফ, সাঈসহ সকল আমলে বাচ্চাকেও সাথে রাখবেন এবং তার পক্ষ থেকেও নিয়ত করবেন। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫১১০

* নাবালেগ, অবুঝ শিশু ও পাগলকেও ইহরামের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করবেন। তবে তাদের দ্বারা কোনো ত্র“টি হয়ে গেলে কোনো জরিমানা দম বা সদকা ওয়াজিব হবে না। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫১১৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৬৯

* হালাল হওয়ার সময় বড়দের মতো তাদের চুল কেটে দিতে হবে।

* বুঝমান বাচ্চা হজ্বের সকল কাজ নিজে করতে সক্ষম হলে তাকেই করতে হবে। নিজে করার সামর্থ্য থাকলে তার পক্ষ থেকে অন্যের করে দেওয়া জায়েয হবে না। মানাসিক ১১২; আলমাসালিক ১/৩৬১

* নাবালেগের উপর দমে শোকর বা জরিমানা দম ওয়াজিব হয় না। তাই না দিলেও চলবে। তবে দেওয়া উত্তম। মানাসিক ২৬৩

 

তালবিয়ার ক্ষেত্র ও নিয়ম

* তামাত্তু হজ্বকারীগণ বা শুধু উমরাহকারীগণ উমরার ইহরাম বাঁধার পর থেকে উমরার তাওয়াফ করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে থাকবেন। উমরার তাওয়াফের শুরুতে বন্ধ করে দিবেন। এরপর হজ্বের ইহরামের পর থেকে ১০ যিলহজ্ব কংকর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়বেন। আর ইফরাদ ও কিরানকারীগণ ইহরাম বাঁধার পর থেকে একেবারে ১০ যিলহজ্ব কংকর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত পুরো সময়, এমনকি কিরানকারী উমরার তাওয়াফরত অবস্থায়ও তালবিয়া পড়বেন। সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫৪৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮১৭; মানাসিক ১৮২

* যেকোনো স্থান ও অবস্থার পরিবর্তনে তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। যেমন যেকোনো নামাযের পরে। বসলে, দাঁড়ালে, শুয়ে পড়লে। কোথাও যাত্রাকালে, উপরে বা গাড়িতে উঠার সময়, নামার সময়, সিটে বসলে, সিট থেকে দাঁড়ালে। কারো সাথে সাক্ষাতের সময়। সাহরীর সময় এবং ঘুম থেকে উঠে ইত্যাদি। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৮৯৫; মানাসিক ১০৩

* এছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে ইহরামকারীর জন্য বেশি বেশি তালবিয়া পড়া মুস্তাহাব। বিশেষত হজ্বের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ যিকর এটিই। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৫২৭৭; আলকিরা ১৭০; গুনইয়াতুন নাসিক ৪৮

* তালবিয়া বেশি বেশি পড়া এবং পুরুষের জন্য শব্দ করে পড়া মুস্তাহাব।Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮১৪; মানাসিক ১০২-৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮৪

 

মসজিদে হারামে প্রবেশ ও সংশ্লিষ্ট কিছু মাসায়েল

* মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় অন্যান্য মসজিদের মতো নফল ইতিকাফের নিয়ত করুন এবং বিসমিল্লাহ ও দরুদ শরীফ পড়ুন। এরপর এই দুআ পড়ুন

اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ.

 

অর্থ : : হে আল্লাহ!  আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আপনার রহমতের দরজাসমূহ আমার জন্য খুলে দিন।

* কাবা শরীফ দেখে নিম্নোক্ত দুআ পড়ুন

اللّهُمَّ زِدْ هَذَا البَيْتَ تَشْرِيْفًا وَتَعْظِيْماً وَتَكْرِيْمًا وَمَهَابَةً وَزِدْ مَنْ شَرَّفَهُ وَكَرَّمَهُ مِمَّنْ حَجَّهُ أَوْ اعْتَمَرَهُ تَشْرِيْفًا وَتَكْرِيْمًا وَتَعْظِيْمًا وَبِرًّا، اللّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ فَحَيّنَا رَبَّنَا بِالسَّلاَمِ

 

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার এই ঘরের বড়ত্ব, সম্মান ও মর্যাদা এবং শান-শওকত বাড়িয়ে দিন এবং হজ্ব ও উমরাকারীদের মধ্যে যে এ ঘরের সম্মান ও ইহতিরাম করবে তার সম্মান, মর্যাদা, মহত্ব ও নেকি বাড়িয়ে দিন। : হে আল্লাহ! আপনি শান্তির মালিক, সকল শান্তি আপনার পক্ষ থেকেই। হে আমাদের রব! শান্তির সঙ্গে আমাদের বাঁচিয়ে রাখুন। আলকিরা ২৫৫, আল মাসালিক ১/৩৮২

এরপর প্রাণ খুলে দুআ করুন। এখন দুআ কবুলের সময়।

* মক্কায় অবস্থানকালে মসজিদে হারামে নামায পড়তে চেষ্টা  করুন। কেননা হাদীস শরীফে আছে, মসজিদে হারামে এক রাকাতে এক লক্ষ গুণ নেকি হয়। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৬৯৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৪০৬

* মসজিদে হারামেও মহিলার পাশে বা সরাসরি পেছনে নামায আদায় করা থেকে বিরত থাকুন। তবে নামায অবস্থায় কোনো মহিলা যদি পাশে এসে নামাযে শরিক হয়ে যায় কিংবা সামনে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে আপনার নামায নষ্ট হবে না।

* মসজিদে হারামের যেখানেই নামায পড়বেন নামায অবস্থায়  সিনা একেবারে কাবা শরীফ বরাবর থাকা জরুরি। এজন্য কাতারের দাগগুলোর প্রতি খেয়াল রেখে দাঁড়াবেন। বাদায়েউস সানায়ে ১/৩১২; শরহুল মুনয়াহ ২১৭

* বাইতুল্লাহ শরীফের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকাও সওয়াবের কাজ। তাই ইশক-মুহাব্বতের সাথে গুনাহ মাফের আশায় আবেগভরা চোখে বেশি বেশি তাকিয়ে থাকুন। আতা ও তাউস রাহ. বলেন, বাইতুল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকা ইবাদত। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৯৮৪

* বাইরে কোনো প্রয়োজনে এলে কিংবা তাওয়াফ করতে গেলে জায়নামায বিছিয়ে কিংবা কারো সাহায্যে জায়গা ধরে রাখবেন না। এটা গুনাহের কাজ। তাই প্রয়োজন সেরে যেখানে জায়গা পাবেন সেখানে বসে যাবেন। অন্যের ঘাড় ডিঙিয়েও যাবেন না। এখানের নেক আমলের সওয়াব যেমন বেশি তেমনি গুনাহের ক্ষতি ও ভয়াবহতাও অনেক বেশি।

* মসজিদে হারামে উচ্চস্বরে কথা বলা, গল্পগুজব করা থেকে বিরত থাকুন।

তাওয়াফের প্রস্তুতি

* হায়েয, নেফাস ও গোসল ফরয অবস্থায় তাওয়াফ করা জায়েয নয়। তদ্রুপ বিনা অযুতেও তাওয়াফ করা জায়েয নয়। তাওয়াফের জন্য অযু থাকা ওয়াজিব। তাই মসজিদে হারামে প্রবেশের আগেই পবিত্রতা অর্জন করে নিন। আর কাপড় ও শরীরে নাপাকি থাকলে পাক করে নিন অথবা কাপড় পরিবর্তন করে নিন। অবশ্য কাপড় ও শরীরে বাহ্যিক নাপাকি থাকলেও তাওয়াফ হয়ে যাবে। তবে মাকরূহ হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৬৫০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৪৫৫৯; গুনইয়াতুন নাসিক ১১২

 

ইযতিবা

* উমরার এ তাওয়াফের পর যেহেতু সাঈ আছে তাই এ তাওয়াফে ইযতিবা করা সুন্নত। ইযতিবা হল, গায়ে জড়ানো কাপড়টি ডান বগলের নিচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রাখা। এ তাওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো সময় ‘ইযতিবা’ অবস্থায় থাকা সুন্নত। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৮৩-৪; মানাসিক ১২৯

 

রমল

এ তাওয়াফের পর যেহেতু সাঈ আছে তাই এ তাওয়াফে পুরুষকে রমলও করতে হবে। রমল হল, কাঁধ হেলিয়ে দুলিয়ে ছোট ছোট পদে একটু দ্রুত ও বীরদর্পে হাঁটা। এ তাওয়াফের শুধু প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নতে মুআক্কাদা। অবশিষ্ট চার চক্করে স্বাভাবিকভাবেই হাঁটবেন। কেননা, শেষ চার চক্করে রমল না করা সুন্নত। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২৬২; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৫২৩)

* মহিলাদের রমল  ও ইযতিবা নেই। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩১০৯

* অধিক ভিড়ের মধ্যে রমল করলে অন্যের কষ্ট হতে পারে। তাই সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্যের কষ্টের আশঙ্কা হলে ঐ মুহূর্তে রমল বন্ধ রাখবেন এবং স্বাভাবিকভাবে চলবেন। এরপর প্রথম তিন চক্করের মধ্যে ফাঁকা পেলেই রমল করবেন। মানাসিক ১৩৪

 

তালবিয়া বন্ধ

শুধু উমরাহকারীগণ এবং তামাত্তুকারী হাজ্বীগণ উমরার তাওয়াফ শুরু করার আগে তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিন। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮১৭; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/৩৯৬-৩৯৮; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১৮২

 

উমরার তাওয়াফ শুরু (উমরার দ্বিতীয় ফরয)

* তাওয়াফের সময় তাওয়াফের স্বাভাবিক নিয়ত থাকা ফরয। কাবার চার পাশে তাওয়াফের নিয়ত ছাড়া এমনি ঘুরলে তাওয়াফ আদায় হবে না। আর এক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে উমরার নিয়ত করা জরুরি নয়; বরং মুস্তাহাব। আলবাহরুল আমীক ২/১১১০-১১১১; যুবদাতুল মানাসিক ১১৪

* হাজরে আসওয়াদের কোণায় এসে এভাবে নিয়ত করুন : হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে উমরার তাওয়াফ করছি। আমার জন্য তা সহজ করুন ও কবুল করুন।

 

হাজরে আসওয়াদকে ইছতিলাম বা চুমু খাওয়ার নিয়ম

* নিয়তের পর হাজরে আসওয়াদের দিকে ফিরে দাঁড়ান। অতপর নামাযের তাকবীরে তাহরীমার মতো কান পর্যন্ত হাত ওঠান। যেন হাতের তালু হাজরে আসওয়াদের দিকে থাকে। শরহু মাআনিল আছার ১/৪১৭; মুখতাসারুত তহাবী ৬৩

এরপর হাত দ্বারা হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করুন এবং বলুন

بِسْمِ اللهِ اللهُ اَكْبَرُ، لاَ إِلَهَ إِلا اللهُ، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَىْ رَسُوْلِ اللهِ.

 

শুধু বিসমিল্লাহি আল্লাহু  আকবার বললেও চলবে। এরপর উভয় হাতের তালুতে চুমু খান।

এরপর সম্ভব হলে এই দুআ পড়ুন।

اَللّهُمَّ إِيْمَانًا بِكَ وَتَصْدِيْقًا بِكِتَابِكَ وَاِتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّي اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

 

আলমুজামুল আওসাত, তবারানী ৪৯৬; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫৪৭০; আলকিরা ৩০৭; আলবাহরুল আমীক ২/১১৭৩-৭৪

 

হাজরে আসওয়াদে সরাসরি চুমু দেওয়ার তরিকা

উপরে হাজরে আসওয়াদকে ইশারার তরিকা বলা হয়েছে। এ তরিকা যারা হাজরে আসওয়াদকে সরাসরি চুমু দিতে পারবেন না বা স্পর্শ করতে পারবেন না তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা সরাসরি চুমু দিতে বা স্পর্শ করতে পারবেন তাদের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, হাজরে আসওয়াদের উপর দুই হাত রেখে বিসমিল্লাহি আল্লাহু  আকবার বলে দুই হাতের মাঝে পাথরের উপর নিঃশব্দে চুমু খাবেন এবং সিজদার মতো করে তাতে কপাল রাখবেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব রা.কে দেখেছি, তিনি হাজরে আসওয়াদে চুমু দিয়েছেন এবং তার উপর সিজদা করেছেন এবং বলেছেন, রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামকে এরূপ করতে দেখেছি। তাই আমিও করেছি। সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৭১৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৭১৫; আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৫/৭৪

যদি সরাসরি চুমু খাওয়া সম্ভব না হয় এবং এতটা কাছে থাকেন যে, হাত দ্বারা স্পর্শ করা যায় তাহলে বিসমিল্লাহি আল্লাহু  আকবার বলে হাত দ্বারা স্পর্শ করে হাতের ঐ অংশে চুমু খাবেন। মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক : ৮৯২৩; মানাসিক ১৩১; গুনইয়াতুন নাসিক ১০২; যুবদাতুল মানাসিক ১১৪

 

চক্কর শুরু করুন

হাজরে আসওয়াদকে চুমু বা ইছতিলামের পর ওই জায়গায় দাঁড়িয়েই কাবা শরীফকে বাম দিকে রেখে তাওয়াফ শুরু করুন। প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নত। তাই পুরুষগণ বীরদর্পে একটু দ্রুত পদে হাঁটা শুরু করুন। এভাবে কাবা শরীফকে হাতের বামে রেখেই হাতীমের বাইরে দিয়ে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত চক্কর পূর্ণ করুন। সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২১৮; মানাসিক ১৩৩

 

 

পূর্ববর্তি সংবাদবৃটেনের ব্রাডফোর্ডে ২৪ তম আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত
পরবর্তি সংবাদএবার গ্রেফতার দুদক পরিচালক এনামুল বাছির