এই এক আরেক শাহীন, আমাদের রেল ব্যবস্থার বলি

আবু আবদুর রহমান।।

গিয়েছিলাম আহত কিশোর শাহীনকে দেখার জন্যে। কিন্তু হাসপাতালে দেখা হল আরেক শাহীনের সাথে। বলতে কি, শাহীনের চেয়ে আরও করুণ। বয়স বার কি তের। খুব মায়াবী চেহারা। শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে। তার দুপায়ে ব্যান্ডেজ লাগানো। দুটি পা-ই অপারেশন করে কেটে ফেলতে হয়েছে।

এত অল্প বয়সে পা দুটি হারিয়ে এখন শুধু  ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে বাচ্চাটি।

কাছে গিয়ে আদর করতেই জানা গেল, তার নাম রমযান। থাকে শাহজানপুরে রেললাইনের পাশে।একদিন রেল গাড়ির ছাদে উঠে দুষ্টমি করছিল। এমন সময় রেল গাড়ি ছেড়ে দেয়। ঘটনাক্রমে সে পা পিছলে পড়ে যায়।রেলের চাকার নীচে তার পা দুটি কাটা পড়ে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিমানবন্দর স্টেশন পর্যন্ত ৩০ মিনিটের এই রেলপথের প্রথমে শাহজানপুরের বস্তি। শাহজানপুরের পরে এই ৩০ মিনিটের দূরত্বে আরও অনেক বস্তি  আছে।

রেললাইন থেকে কমপক্ষে ৫০ গজের ভেতরে বস্তি নিষিদ্ধ হলেও সেদিকে কারো তোয়াক্কা নেই।ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে মানুষের জীবন। মৃত্যু আর এ রমযানের মত এমন অঙ্গহানির ঘটনা ঘটেই চলেছে একের পর এক।

জানা যায়, বাংলাদেশে রেল পুলিশের হিসেবে ২০১৬ সালে প্রায় এক হাজার মানুষ রেললাইনে কাটা পড়ে মারা যায়। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আসল সংখ্যা এর চেয়ে বেশি।

বছরে রেলে কাটা পড়ে যে মৃত্যু হয় তার বড় একটি অংশ হয় ঢাকা জেলাতেই । রেল পুলিশের হিসেবেই বছরে গড়ে সেটি ৩০০-র কম নয়।

 

“এটা খুবই অস্বাভাবিক। এবিষয়টি নিয়ে আমাদের রেল কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এতটা নির্লিপ্ত কেন সেটাই আমার কাছে খটকা লাগে”-  এক গণমাধ্যমকে বলছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন।

দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনকে সুরক্ষিত করার কথা বলছেন কেউ কেউ । রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, তারা রেললাইন সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সাড়া খুব একটা পাননি।

১৮৯০ সালের রেল আইনে রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুটের মধ্য দিয়ে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ। এমনকি এর মধ্যে গরু-ছাগল ঢুকে পড়লে সেটিকেও নিলামে বিক্রি করে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের। রেলে কাটা পড়ে কেউ আহত হলে উল্টো ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধেই মামলা করতে পারে রেলওয়ে।

এতসব কঠোর নিয়ম থাকার পরও প্রতিবছর হাজারের বেশি মানুষ কেন রেলে কাটা পড়ে মারা যায়? কীভাবে এত এত  মানুষকে পঙ্গু হতে হয়?

রেললাইনে প্রতিবছর এত এত  মৃত্যুর দায় রেল কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এড়াতে পারবে?

এই ছোট্ট শিশু রমযান রেলগাড়ির চাকার নীচে তার পা দুটি হারাল। চিরদিনের সে পঙ্গু হয়ে গেল। সে হয়তো আর কোনো দিন হাঁটতে পারবে না। এই যে শিশুটা জীবনের জন্যে পঙ্গু হয়ে গেল, এই শিশুটির পঙ্গু হয়ে যাওয়ার দায় ভার কে নিবে? এই শিশুটির পঙ্গুত্ব আমাদের রেল কর্তৃপক্ষের শিথিলতার বিষয়টি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না?

 

পূর্ববর্তি সংবাদএ সরকারের নৈতিক অধিকার নেই জনগণের ওপর ট্যাক্স ধার্য করার: সেলিম
পরবর্তি সংবাদফিলিস্তিনের ইব্রাহিমী মসজিদ: ৫ মাসে ২৯৪ বার আজানে বাধা দিয়েছে ইসরাইল