বাড়ছে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা: কিসাসের বিধান না থাকাই কি আসল কারণ নয়?

মাহমুদুল হাসান।।
সম্প্রতি ফেনী সোনাগাজী মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাটি দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে মানুষকে নাড়া দিয়েছে। নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গণমাধ্যমে আসতে শুরু করেছে একই কায়দায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যার বিভিন্ন ঘটনা।
কয়েকদিন আগে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় সৎ মেয়ে ও স্ত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বেলাল হোসেন (৩৫ নামে) এক ব্যক্তি।
 
নরসিংদীতে কলেজগামী এক তরুণীকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরের ২০ ভাগ পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
 
যেখানে কাউকে হত্যা করা তো দূরের কথা, কাউকে কষ্ট দেওয়াও তো জায়েয নেই। শুধু মানুষ কেন কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেওয়াও ইসলামে বৈধ নয়।
 
হাদীস শরীফে এসেছে, এক মহিলাকে শুধু এজন্য জাহান্নামে শাস্তি দেয়ার হয়েছে যে সে শুধু একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। নিজেও খাওয়াতো না এবং অন্য কোন পোকা মাকড় খাওয়ার জন্য বেড়ালটিকে ছেড়েও দিত না।
আগুনে পুড়িয়ে হত্যা এর ছবির ফলাফল
 
যেখানে অন্য প্রাণীকে কষ্ট দেওয়া নিষেধ সেখানে মানুষকে কষ্ট দেয়া কেমন জঘন্য হতে পারে? আর কাউকে হত্যা করা সেটা তো কোনো মুসলমানের জন্য কল্পনাও করা যায় না। তদুপরি সেই হত্যা যদি হয় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে, তবে এর চেয়ে জঘন্যতম অপরাধ ও বড় কোনো পাপ আর হতে পারে না।
 
আগুন দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া কখনো জায়েয নয়। এমন কি কোনো প্রাণীকে আগুন দিয়ে মারা বৈধ নয়। যদি সেটি ক্ষতিকর প্রাণী হয়, তাও বৈধ নয়।
 
একবারে রসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কিছু লোককে দেখলেন তারা পিঁপড়ার বাসা আগুনে পুড়ে দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাদেরকে বললেন আগুনের রবই কেবল আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে পারেন। আবু দাউদ ১৬১০
 
বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের দুই জনকে পুড়িয়ে হত্যা করার জন্য একদল সাহাবাকে পাঠিয়ে ছিলেন ।
 
তারা বের হওয়ার সময় রাসূল তাদেরকে আবার ডাকলেন এবং বললেন, আমি তোমাদেরকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করতে বলেছিলাম । এখন তোমরা তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করবে না । আগুন দিয়ে আগুনের প্রভুই শাস্তি দিবেন । তাদেরকে পেলে কতল করবে। বুখারী ১/ ১৬০৯
 
মানব জাতিকে আল্লাহ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন। কিন্তু কখনো কখনো এই শ্রেষ্ঠ মানুষটি পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট হয়ে যায়। কোন একটা হিংস্র প্রাণীও তো অন্য প্রাণীকে এমন নির্দয়ভাবে হত্যা করে না, যেভাবে আমাদের সমাজে এখন মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। যারা এমন করে তারা আসলে পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট।
 
কুরআনে তাদেরই দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে এভাবে , তাদের অন্তর আছে কিন্তু তারা অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করে না। তাদের কান আছে তারা কান দিয়ে হক কথা শোনে না। তারা আসলে পশুর মত। বরং পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট।
সমাজের এই নিষ্ঠুর বিবেকহীন লোকগুলো কখনো কথা শুনবে না যতক্ষণ না সরকার কুরআনে বর্ণিত কিসাসের বিধান প্রয়োগ না করবে।
লেখক: শিক্ষক, বিক্রমপুর বাদশাহী মাদরাসা
পূর্ববর্তি সংবাদবিশ্বের ১৫ কোটি ২০ লাখ শিশু শিশুশ্রমের শিকার: জাতিসংঘ
পরবর্তি সংবাদ‘কথার ফুলঝুরি ও মিথ্যা আশ্বাসে ভরা বাজেট প্রস্তাবনা’