মুসলিম স্পেনের সেই বিখ্যাত শহর, যা কেবল ৭০ বছর টিকে ছিল

এনাম হাসান জুনাইদ।।

দক্ষিণ স্পেনের কর্ডোভা এলাকার আন্দালুস শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শহরটি । মাদিনাতুয যাহরা নামের এই ঐতিহ্যবাহী নগরীটি পৃথিবীর সুন্দরতম শহরগুলোর একটি। শহরটি যেই দেখত সেই অভিভূত হয়ে যেত।

স্পেনের মুসলিম শাসক আবদুর রহমান নাসের এই শহরটি নির্মাণ করেন। তিনি তার স্ত্রী যাহরার নামে শহরটির নামকরণ করেন।

১০ বছরের কম সময়ে শহরটি নির্মাণ করা হয়। ৯৪৫ সনে এখানে খলীফা আবদুর রহমানের রাজদরবার স্থানান্তরিত হয়।

 
জানা যায়, এই শহরটি নির্মাণ করতে প্রায় দশ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল।
مدینہ الزاہرہ
 
মাদীনাতুয যাহরা নগরীর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক আলবার্ট মনটেজু গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই শহর তখনকার খেলাফতের শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। এ জন্য এ শহরের প্রতিটি জিনিসকে অত্যন্ত শানশওকতের সাথে তৈরি করা হয়েছে।’
 
শহরটির উচুঁ ভূমিতে করা নির্মাণ করা হয়েছে রাজপ্রাসাদ, যেখানে এমন একটি দালান নির্মাণ করা হয়, যার উপর দাঁড়িয়ে থেকে খলিফা গোটা শহর দেখতে পান ।
 
এর চেয়ে নিম্নভূমিতে নির্মাণ করা হয় সরকারি ভবন ও সরকারি কর্মকর্তাদের বাসগৃহ, বাগবাগিচা, মসজিদ, সেনা নিবাস।
 
তখনকার দুনিয়ায় কারুকার্য ও নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে কোন তুলনা ছিল না শহরটির।مدینہ الزاہرہ
 
কিন্তু এরপরও ৭০ বছরের মাথায় শহরটি তার সকল শোভা-সৌন্দর্যসহ এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যায় যে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তার আর কোন হদিসই পাওয়া যায়নি।
 
১৯১১ সনে সর্বপ্রথম প্রত্নতত্ত্ববিদগণ পাহাড়ের পাদদেশে কিছু নিদর্শনের সন্ধান পান। তারপর দীর্ঘ প্রায় ১০০ বছরের খনন কাজ শেষে বেরিয়ে আসে এই শহর।
ধারণা করা হয়, হারিয়ে যাওয়া এই শহরটির ১১ শতাংশ কেবল এখন পাওয়া যাচ্ছে। এই ধ্বংসাবশেষগুলো মুসলমানদের অতীতের বেদনাদায়ক ইতিহাসকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
 
বিখ্যাত এক পর্যটক এই শহরটি ভ্রমণশেষে লিখেছেন,

مدینہ الزاہرہ

 ‘এ অঞ্চল থেকে মুসলিম প্রভাব খর্ব হওয়ার পর অনেক শতাব্দী পার হওয়ার পরও স্পেনিশদের বিশেষ কিছু গুণ, কিছু আচরণ তাদের ফেলে আসা অতীতকে আজও মৃদুভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়।
 
‘স্পেনিশদের আকার অবয়ব ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন ধরণের। গৌরবর্ণের সাথে গোধুমবর্ণের সংমিশ্রণ, চেহারার উজ্জ্বল গড়ন আর তেজপূর্ণ শারীরিক গঠন তাদের আরব বংশোদ্ভূত হওয়ার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
 
‘এছাড়া এখনও তারা ইউরোপের অন্যান্য লোকদের তুলনায় অধিক হাস্যোজ্জ্বল, ভদ্র ও বিনয়ী। এখনো তাদের মাঝে পরস্পরকে আলিঙ্গন করা, চুমু খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। খাওয়ার আগে স্পেনিশরা হাত ধুয়ে থাকে, যা ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে দেখা যায় না।’
সূত্র: বিবিসি উর্দূ অবলম্বনে
পূর্ববর্তি সংবাদনতুন শিক্ষাবর্ষ: নতুন উদ্দীপনা নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করুন
পরবর্তি সংবাদতথ্যমন্ত্রী বললেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে পাওয়া ‘বোমার’ সাথে বিএনপির সংযোগ থাকতে পারে