অনাদরে শেষ হতে চলেছে ইসলামী বইমেলা-২০১৯

ইসলাম টাইমস প্রতিবেদন: অনাদর ও অবহেলায় শেষ হতে চলেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত রমযানব্যাপী ইসলামী বইমেলা৷ জাতীয় মসজিদ বাইতুল মুকাররমের দক্ষিণ চত্বরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তার বাস্তব প্রমান৷ ৬২ টি স্টলের মধ্যে রয়েছে সাতটি এমদাদিয়া প্রকাশনীর স্টল এছাড়া রয়েছে আতর টুপি ও ওষুধের স্টল৷ খোদ আয়োজক প্রতিষ্ঠানের স্টল দেখে মনে হয় শুধুমাত্র দায়দায়িত্বের কারণেই টেবিলে কিছু চটি সাইজের বই সাজিয়ে রেখেছেন৷ পিছনের তাকে এলোমেলোভাবে আছে কয়েক সিট বই৷

ইফা স্টল

অভিযোগ উঠেছে, আয়োজন কর্তৃপক্ষ গুরুত্বহীনতা এবং বহুমাত্রিক সিন্ডিকেট থাকার দেশের প্রথিতযশা ইসলামী প্রকাশনীগুলো স্টল বরাদ্দ পায় না৷ সমস্ত শর্ত পূরণ করেও নানান জটিলতা দেখিয়ে স্টল দেয়া হয় না৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকাশকের সাথে কথা বলে জানা যায়, রমযানে মাসব্যাপী বইমেলায় ৬২ টা স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়৷ এর মধ্যে প্রতিটি ডাবল প্লটের দোকানের ভাড়া নির্ধারিত হয় ১৪,৫০০ টাকা৷

অভিযোগ আছে, কর্তৃপক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন কোন প্রকাশনীর সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও একাধিক স্টল পেয়ে যায়৷ তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্টল বরাদ্দ নিয়ে অন্যদের কাছে মোটা অংকে ভাড়া দিয়ে থাকে৷ তাই বাধ্য হয়ে কিছু প্রকাশনী মেলা আয়োজকের নির্ধারিত অংকের চেয়ে বেশি দিয়ে স্টল নেন৷

সমকালীন প্রকাশনীর বিক্রেতা হাবিব জানান, আমরা ৪০ হাজার টাকায় স্টল নিয়েছি৷ এতো বেশি টাকা দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা সরাসরি কর্তৃপক্ষ থেকে স্টল নিতে পারি নি৷ তাই অন্যদের থেকে নিতে গিয়েই অতিরিক্ত এই টাকা গুনতে হচ্ছে৷ এবারে বই বেচা-কিনি সন্তোষজনক বলে জানান হাবিব।

মেলার একাংশ

 

মেলার সার্বিক অবস্থা নিয়ে বোখারী একাডেমির মিজানের সাথে কথা বলে জানা যায়, আয়োজকদের আন্তরিকতা আর মিডিয়ায় মেলার প্রচার না থাকায় মেলা জমকালো হয় না৷ আয়োজকদের গুরুত্বহীনতা এবং অসচেতনতাকে দায়ী করেন মিজান।

মিজান আরো জানান, এখানে এমদাদিয়ার সাইনবোর্ডে ৬/৭ টা স্টল৷ অথচ তারা কেউ মূল এমদাদিয়া না৷ সবাই নকল৷ মূল প্রকাশনী মেলায় অংশগ্রহণ আসে না৷ মূল প্রকাশনী নকল বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমদাদিয়া লগোর প্রচার হচ্ছে এতেই সন্তুষ্ট মূল প্রকাশনী। এই নামের ব্যবহারে আগ্রহের কারণ হলো, মেলায় সাধারণ মানুষ বেশি হয়, এবং রমযানকেন্দ্রিক মেলা হওয়ায় কুরআন শরীফ বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি৷ অসাধু ব্যসায়ীরা কুরআনকে পুজিঁ করেই এমদাদিয়া নাম ব্যবহারে এতো প্রতিযোগিতা!

নব্বইয়ের দশকের মেলার হালচাল নিয়ে একজন জনপ্রিয় লেখক ইসলাম টাইমসকে জানান, সেসময় এখনকার মতো দৈন্যদশা দেখা যেতো না। তখন মেলা অনেক আনন্দমুখর হতো। দেশের জনপ্রিয় প্রকাশনীগুলো স্টল বরাদ্দ পেতো। সেইসাথে সৌদী, ইরানসহ ইসলামী দেশের এম্বাসীগুলো আলাদা আলাদা স্টল নিতো। সেসব স্টলে ক্যালিগ্রাফিসহ ইসলামি সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয় প্রদর্শনী হতো৷ কোন কোন বছর কবিতা পাঠের আয়োজন হতো, মঞ্চে উপস্থিতি থাকতেন আব্দুল মান্নান সৈয়দ এবং কবি আল মাহমুদসহ অন্যান্য কবিরা। পাঠক ও থাকতো চোখে পড়ার মতো৷

মেলার সার্বিক ব্যবস্থা এবং চলমান সঙ্কট কাটিয়ে প্রাণবন্ত মেলার আয়োজন কীভাবে হতে পারে জানতে চাইলে আলেম, লেখক  আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ইসলামী বইমেলা নিশ্চয়ই আমাদের প্রাণের মেলা হওয়ার দরকার ছিলো। কিন্তু এরমধ্যে দুইটা সঙ্কট দেখা যায়। প্রথমত, মিডিয়ায় প্রচার না হওয়া। দ্বিতীয়ত, স্টল বরাদ্ধে সিন্ডিকেট হওয়া৷ এই সিন্ডিকেটকে ডিঙিয়ে স্থানীয় হকার ছাড়া বাহিরের কেউ স্টল পায় না। যারা সিন্ডিকেটারদের থেকে স্টল নিতে চায় তাদের অতিরিক্ত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা গুনতে হয়৷ এই অতিরিক্ত টাকায় স্টল নেয়ার কারণে আমাদের পাঠকবর্গ বই থেকে বঞ্চিত হয়। সিন্ডিকেটের অতিরিক্ত খরচ না থাকলে প্রচুর বই আসতো, বহু প্রকাশনী আসতো, এবং বাড়তো ক্রেতার সংখ্যা।

তিনি আরো বলেন, মেলার সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনা ও সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হলে প্রতি স্টল বরাদ্দের জন্য কিছু শর্ত বেঁধে দিতে হবে, যেমন; যারা স্টল নিবে তাদের অন্তত বিশটা করে নিজস্ব বই যেন থাকে৷ এজাতীয় শর্ত দিয়ে স্টল বরাদ্দ দিলে দুর্নীতি কমে যেতো৷ এখন এজাতীয় শর্ত না থাকায় প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনীগুলোকে নানান ফাঁদে ফেলে স্টল দেয়া হয় না। তার বদলে মেলা প্রাঙ্গণে আতর, টুপি ও কাপড়ের পসরা সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়।

 

 

পূর্ববর্তি সংবাদমুসলিম হওয়ার কারণে ভারতে গুলিবিদ্ধ হলেন এক যুবক
পরবর্তি সংবাদমোদির শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ইমরান খানকে