রবিবার মাগরিবের আগেই ইতিকাফকারীরা মসজিদে প্রবেশ করবেন

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: মাহে রমজানের মর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে কদর রাত প্রাপ্তির সুনিশ্চিত প্রত্যাশায় সর্বোপরি মহান আল্লাহর একান্ত নৈকট্য লাভের জন্য রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফকে সুন্নাত করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করা। এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। সে হিসেবে রবিবার (২০ রমজান) মাগরিবের আগেই সুন্নত ইতিকাফকারীরা ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করবেন।

ইতিকাফ আরবি ‘আক্ফ’ মূল ধাতু থেকে গঠিত একটি শব্দ। আক্ফ শব্দের অর্থ হলো অবস্থান করা। যেমন আল্লাহর বাণী ‘ওয়ানতুম আকিফুনা ফিল মাসজিদে’-আর তোমরা সালাতের নির্দিষ্ট স্থানসমূহে অবস্থানরত (সূরা বাকারা, ২:১৮৭)। আভিধানিকভাবে কোনো বস্তুকে বাধ্যতামূলকভাবে ধারণ করা কিংবা কোনো বস্তুর ওপর নিজেকেদৃঢ়ভাবে আটকিয়ে রাখার নাম ইতিকাফ।

শরিয়তের পরিভাষায় যে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতসহকারে নিয়মিত আদায় করা হয় এমন মসজিদে মহান আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়তসহ অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। রাসূলুল্লাহ সা: স্বয়ং ইতিকাফ করেছেন এবং ইতিকাফ করার জন্য সাহাবীদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মসজিদ মুত্তাকিদের ঘর। যে ব্যক্তি ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করবে আল্লাহ তার প্রতি শান্তি ও রহমত নাজিল করবেন এবং পুলসিরাত পার-পূর্বক জান্নাতে পৌঁছাবার জিম্মাদার হবেন।’

ইতিকাফের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে।
সুন্নাত ইতিকাফ হলো, রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করা। এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।

ওয়াজিব ইতিকাফ বলা হয়, নজর বা মানতের ইতিকাফকে। যেমন কেউ বলল যে, আমার অমুক কাজ সমাধা হলে আমি এতদিন ইতিকাফ করব অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই বলল, আমি এতদিন অবশ্যই ইতিকাফ করব। যতদিন শর্ত করা হবে ততদিন ইতিকাফ করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। সুন্নাত ইতিকাফ ভঙ্গ করলে তা পালন করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

আর নফল ইতিকাফ হচ্ছে, সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করা। এর কোনো দিন কিংবা সময়ের পরিমাপ নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। এ জন্য মসজিদে প্রবেশের পূর্বে ইতিকাফ-এর নিয়ত করে প্রবেশ করা ভালো।

সুন্নত ইতিকাফের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভ। ইতিকাফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম র: বলেছেন, ‘আল্লাহর প্রতি মন নিবিষ্ট করা, তাঁর সাথে নির্জনে বাস করা এবং স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি থেকে দূরে অবস্থান করা যাতে করে তার চিন্তা ও ভালোবাসা মনে স্থান করে নিতে পারে।’

ইতিকাফের বহু ফজিলত রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করে, আল্লাহ সেই ব্যক্তি ও দোজখের মধ্যে ৩ খন্দক পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করেন।’ (তাবরানি ও হাকেম) প্রত্যেক খন্দক পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের চেয়ে আরো বহুদূর।
আলী বিন হোসাইন রা: নিজ পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করে, তা দুই হজ ও দুই ওমরার সমান’ (বায়হাকি)।ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ইতিকাফকারী গোনাহ থেকে বিরত থাকে। তাকে সব নেক কাজের কর্মী বিবেচনা করে বহু সওয়াব দেয়া হবে’ (ইবনে মাজাহ)।

ইতিকাফের শর্ত : ১. মুসলমান হওয়া ২. পাগল না হওয়া ৩. বালেগ হওয়া ৪. নিয়ত করা ৫. ফরজ গোসলসহ হায়েজ নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া ৬. মসজিদে ইতিকাফ করা (ইমাম মালেক র:-এর মতে জামে মসজিদে ইতিকাফ করা উত্তম। ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল র:-র মতে, যে মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ হয় না, সে মসজিদে ইতিকাফ জায়েজ নেই।) ৭. রোজা রাখা।

মহিলারাও ঘরে বসে ইতিকাফ করতে পারেন। ঘরের যে অংশে সাধারণত নামাজ পড়া হয় সেই রকম কোনো অংশকে ইতিকাফের জন্য নির্দিষ্ট করে দশ দিন কিংবা কম সময়ের জন্য ইতিকাফের নিয়ত করে সেই জায়গায় বসে ইবাদত বন্দেগি শুরু করবেন। শরই কোনো ওজর ছাড়া সেখান থেকে উঠে অন্যত্র না যাওয়া। (রাতে সেখানেই ঘুমাবেন)।

পূর্ববর্তি সংবাদআমি মুসলিম তোষণ করি, যে গরু দুধ দেয় তার লাথিও খাবো: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পরবর্তি সংবাদরমযানের শেষ দশ দিন ঈদ প্রস্তুতির জন্যে নয়