থেমে নেই কাদিয়ানি তৎপরতা, আমাদের আরো অনেক করণীয় বাকী

ওলিউর রহমান।।

১৯০৮ সালের ২৬ মে মৃত্যু হয় মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদার পাঞ্জাবের মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানির। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝিতে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি নিজেকে নবী দাবি করার মাধ্যমে বৃটিশদের ছত্রছায়ায় ভারতে কাদিয়ানি ধর্মমতের প্রবর্তন করে । বিশ শতকের শুরু দিকেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শুরু হয় কাদিয়ানি তৎপরতা। সময়ে সময়ে, প্রকাশ্যে-গোপনে বিভিন্ন কৌশলে চলতেই থাকে কাদিয়ানি ধর্মমতের প্রচার।

ইসলামের নাম ব্যবহার করা কাদিয়ানিরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খতমে নবুওয়াতে বিশ্বাস করে না। তারা বরং মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে নবী মনে করে। এর সঙ্গে তারা আরও দাবি করে, মির্জা কাদিয়ানিই হচ্ছে প্রতিশ্রুত মাহদি এবং ঈসা। ( নাউযুবিল্লাহ)।

ইসলামের মৌলিক ও শাশ্বত বিশ্বাসের বিরোধী হওয়ায় সব দেশের সব মতপথের আলেমদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাদিয়ানিরা কাফের- অমুসলিম। কিন্তু সরল সাধারণ মানুষদের প্রতারিত করতে তারা নিজেদের ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাত’ নামে পরিচয় দিয়ে থাকে। মাস দুয়েক আগে পঞ্চগড়ে কাদিয়ানিদের ডাকা ইজতেমাকে কেন্দ্র করে আলেমদের ভূমিকায় দেশব্যাপী জনসচেতনতা তৈরি হয়েছে। তবে কাদিয়ানিরাও থেমে নেই। কৌশল পরিবর্তন করে তারা কাজের ধারা অব্যাহত রেখেছে।

কাদিয়ানিদের কার্যক্রম কোথায় কেমন জানতে চাইলে মধ্যবাড্ডার মিফতাহুল উলূম মাদরাসার মুহাদ্দিস, ‘আহমদি বন্ধু’ বই-এর লেখক মাওলানা আবদুল মজিদ ইসলাম টাইমসকে জানান, দারিদ্র্যপীড়িত উত্তরবঙ্গ কাদিয়ানিদের প্রধান টার্গেট। পঞ্চগড়ের আহমদনগর ছাড়াও সাতক্ষীরার শ্যামনগরে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে, রংপুরের বদরগঞ্জে ও নীলফামারীর সৈয়দপুরে ভয়াবহরকম চলছে কাদিয়ানি কার্যক্রম। সারা দেশে প্রায় ৩০০ আস্তানা রয়েছে কাদিয়ানীদের।

পঞ্চগড়ের ঘটনার পরে কাদিয়ানী তৎপরতা সাময়িক বন্ধ কি না জানতে চাইলে মাওলানা আবদুল মজিদ বলেন, আহমদ শফি সাহেবের উপস্থিতিতে আলেমদের সমাবেশে জনসচেতনতা তৈরি হয়েছে বটে তবে আহমদনগরে কাদিয়ারি তৎপরতায় কোন প্রভাব পড়েনি বরং তারা আগের মতোই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, অতএব মাহফিল করার পাশাপাশি কাদিয়ানিরা যে প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয় আমাদের আলেমদেরও সেভাবে কাজ করা উচিত। ওরা ইজতেমা প্রকাশ্যে করতে না পারলেও তাদের অপপ্রচার বন্ধ করে দেয়নি কাজেই আলমদেরও কর্তব্য হবে শুধু সময়ে সময়ে মাহফিল না করে কাদিয়ানিরা যেখানে বাতিলের দাওয়াত নিয়ে যায় সেখানেই হক নিয়ে পৌঁছা। আঘাত যেমন তার প্রতিষেধকও তেমন হতে হবে। তবে এজন্য অবশ্যই যোগ্যতার প্রয়োজন। দাওয়াতের কাজের সাথে সম্পৃক্ত যারা, তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সতর্কতার সাথে কাজ করা প্রয়োজন। জায়গায় জায়গায় বিশেষত আক্রান্ত এলাকায় কাদিয়ানি বিষয়ক কর্মশালা করা, দাওয়াতি জামাত পাঠানো, স্থায়ীভাবে কাজ করার লোক নির্ধারণসহ উপযোগী কল্যাণকর আরো অনেক পদক্ষেপ আলেমদের গ্রহণ করা প্রয়োজন।

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় কাদিয়ানি বিষয়ক কর্মশালা হয় জানিয়ে মাওলানা আবদুল মাজিদ বলেন, পঞ্চগড়ের ঘটনার পরে দেশে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে আলেমদের কাজ করার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সতর্কতার সাথে কাজ করলে অনেক দূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব।

বিভিন্ন দাওয়াতি কার্ক্রমের সাথে সম্পৃক্ত মাওলানা আবু সালমানের সাথে কাদিয়ানি বিষয়ে কথা বললে তিনি ইসলাম টাইমসকে বলেন, উলামায়ে কেরাম দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে সব বাতিলই মোকাবেলা করা সম্ভব। ঢাকার বড় বড় মাদরাসা ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত, প্রসিদ্ধ মাদরাসাগুলো বাতিল ফিরকার মোকাবেলায় দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হলে কাদিয়ানি মতবাদসহ সব বাতিলই মোকাবেলা করা সহজে সম্ভব।

পূর্ববর্তি সংবাদবিজেপির সাফল্যের পেছনে বিদেশী শক্তির হাত আছে: মমতা
পরবর্তি সংবাদদিনাজপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি