রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত প্রকল্প: অবিশ্বাস্য রকম দুর্নীতির তথ্য ফাঁস

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: নির্মাণাধীন দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্মিত গ্রিনসিটিতে আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয়ে অবিশ্বাস্য রকম দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়েছে। বাংলাদেশের একাধিক  দৈনিক পত্রিকার অন লাইন সংস্করণে এই খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকা দরে ১১০টি খাট কিনতে খরচ হয়েছে ৪৭ লাখ ৫৯ হাজার ২৭০ টাকা। খাটগুলোর প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটে নিতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা। একেকটি সোফা কেনা হয়েছে ৭৪ হাজার ৫০৯ টাকা, ভবনে ওঠাতে খরচ হয়েছে ২৪ হাজার ২৪৪ টাকা করে। ১৪ হাজার ৫৬১ টাকা দরে কেনা সেন্টার টেবিলের প্রত্যেকটি ভবনে তুলতে লেগেছে ২ হাজার ৪৮৯ টাকা।

কেজিখানেক ওজনের একটি বৈদ্যুতিক কেটলি নিচ থেকে ফ্ল্যাটে তুলতেই খরচ হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। একই রকম খরচ দেখানো হয়েছে জামা-কাপড় ইস্ত্রি করার কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি ইলেক্ট্রিক আয়রন ওপরে তুলতে। প্রায় আট হাজার টাকা করে কেনা প্রতিটি বৈদ্যুতিক চুলা ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিতে খরচ দেখানো হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার টাকার বেশি। ঘুমানোর জন্য প্রতিটি বালিশ ভবনে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা করে। আর একেকটি ওয়াশিং মেশিন ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৩০ হাজার টাকারও বেশি। এভাবে ওয়াশিং মেশিনসহ অন্তত ৫০টি পণ্য ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ক্রয়মূল্যের প্রায় অর্ধেক, কোনো কোনোটিতে ৭৫ শতাংশ।

অস্বাভাবিক এই অর্থ ব্যয় কেবল ভবনে ওঠানোর ক্ষেত্রেই নয়, আসবাবপত্র কেনার ক্ষেত্রেও দেখানো হয়েছে। প্রতিটি বিছানার চাদর কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৯৮৬ টাকা করে। এ হিসাবে ৩৩০টি চাদর কিনতে খরচ হয়েছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮০ টাকায়। ৩৩০টি বালিশের ক্ষেত্রেও দেখানো হয়েছে কাছাকাছি ব্যয়। কাপড় পরিষ্কারের জন্য ১১০টি ওয়াশিং মেশিনের প্রত্যেকটি কেনা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ১১২ টাকা করে। ১১০টি টেলিভিশনের প্রত্যেকটি কেনা হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৬০ টাকায় এবং সেগুলো রাখার জন্য টেলিভিশন কেবিনেট কেনা হয়েছে ৫২ হাজার ৩৭৮ টাকা করে।

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, এমন ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে তো খুবই বিপদের কথা। এমন হরিলুট চলছে অথচ  দেখার কেউ নেই, শুনার কেউ  নেই, কোনো স্বচ্ছতা নেই। তা তো পরিষ্কার। দেশে বর্তমানে কোনো কিছুই স্বচ্ছ নয়। দেখেন সংসদে যে কাজ গুলো করার কথা সেগুলো হচ্ছে কিনা। দেশে আইনের শাসন আছে কিনা। এসব ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা  থাকতে হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারজ্জামান বলেন,  বিষয়টি যদি নির্ভরযোগ্য হয়, ঘটনাটি অন্ত্যত দুঃখের এবং উদ্বেগের বিষয়। কারণ সরকারের এত বড় হাই প্রোফাইলের একটি প্রকল্পের একটি অংশে এত বড় দুর্নীতির বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলে। সরকারের এসব অর্থ তো বাস্তিবক অর্থে জনগণের অর্থ। এ ধরনের জালিয়াতি অনিয়ম সরকারকে বিব্রত করার জন্য যথেষ্ট। এখন এসবের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে।   এধরনের অস্বচ্ছতার কারণগুলো হচ্ছে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রন না থাকা। এ প্রকল্পগুলো মানেই হচ্ছে কিছু কর্মকর্তারা সুযোগে দুনীর্তি করে নিজের অর্থ সম্পদের বিকাশ ঘটায়।

 

পূর্ববর্তি সংবাদতাফসির পরিচিতি: সাহিত্যবোদ্ধা কোরআনপ্রেমীদের প্রিয় গ্রন্থ ‘তাফসীরে আবুস সাঊদ’
পরবর্তি সংবাদনাটক-সিনেমা বানিয়ে আমার মেয়ের আত্মাকে কষ্ট দেবেন না: নুসরাতের মা