মুসাফির, গর্ভবতী, দুগ্ধদানকারিনী ও দুর্বল বৃদ্ধ ব্যক্তির রোযার মাসআলা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: মুসাফির, গর্ভবতী, দুগ্ধদানকারিনী ও দুর্বল বৃদ্ধ ব্যক্তির মাসআলা

মুসাফির

মাসআলা :
মুসাফিরের জন্য সফরের হালতে রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে। তবে অস্বাভাবিক কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম। আর অস্বাভাবিক কষ্ট হলে রোযা রাখা মাকরূহ। এ অবস্থায় রোযা না রেখে পরে তা কাযা করে নিবে। আছিম রাহ. বলেন, হযরত আনাস রা.কে সফরকালে রোযা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘যে রোযা রাখবে না সে অবকাশ গ্রহণ করল। আর যে রোযা রাখল সে উত্তম কাজ করল।’-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৩২

মাসআলা :
সফরের হালতে নিয়ত করে রোযা রাখা শুরু করলে তা আর ভাঙ্গা জায়েয নয়। কেউ ভেঙ্গে ফেললে গুনাহগার হবে। তবে কাফফারা আসবে না। শুধু কাযাই যথেষ্ট। হযরত আনাস রা. বলেন, ‘কেউ রোযা রেখে সফরে বের হলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে যদি পিপাসার কারণে প্রাণের আশঙ্কা হয় তাহলে রোযা ভাঙ্গতে পারবে, পরে তা কাযা করবে।

মাসআলা :
মুসাফির সফরের কারণে রোযা রাখেনি, কিন্তু দিন শেষ হওয়ার আগেই মুকীম হয়ে গেল। তাহলে দিনের অবশিষ্ট সময় রমযানের মর্যাদা রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকবে। তবে পরবর্তী সময়ে এ রোযার কাযা অবশ্যই করতে হবে। ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, যে মুসাফির রমযানের দিনে (সফরের হালতে) খানা খেয়েছে সে মুকীম হয়ে গেলে দিনের বাকি অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকবে।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/২২১

মাসআলা :
রমযানের দিনে হায়েয-নেফাস থেকে পবিত্র হলে অবশিষ্ট দিন রমযানের মর্যাদা রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকা জরুরি। তবে উক্ত ওযরে ছুটে যাওয়া রোযাগুলোর সাথে এ দিনের রোযাও কাযা করবে। হযরত হাসান রা. বলেন, ‘সোবহে সাদিকের পর যে হায়েয থেকে পবিত্র হয়েছে সে দিনে বাকি অংশে পানাহার করবে না।’ (প্রাগুক্ত)

মাসআলা :
রোযার কারণে যে রোগ বৃদ্ধি পায় বা রোগ-ভোগ দীর্ঘ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে সে রোগে রোযা ভাঙ্গার অবকাশ আছে। উল্লেখ্য, আশঙ্কা যদি সুস্পষ্ট হয় তাহলে তো কথা নেই। নতুবা একজন অভিজ্ঞ ও দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামতের প্রয়োজন হবে।

গর্ভবতীর মাসআলা :

রোযা রাখার কারণে গর্ভবতী মহিলা নিজের বা তার সন্তানের প্রাণহানী বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর প্রবল আশঙ্কা হলে তার জন্য রোযা না রাখা বা ভাঙ্গা জায়েয। তবে পরে কাযা করে নিবে।

দুগ্ধদানকারিনীর মাসআলা :

রোযার কারণে সন্তান দুধ না পেয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে এমন আশঙ্কা হলে দুগ্ধদানকারীনীও আপাতত রোযা ভাঙ্গতে পারবে এবং পরে কাযা করে নিবে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
إن الله وضع عن المسافر الصوم وشطر الصلاة وعن الحامل والمرض. رواه الترمذي وقال : هذا حديث حسن.
আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোযার হুকুম শিথিল করেছেন এবং নামায কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোযার হুকুম শিথিল করেছেন।-জামে তিরমিযী ১/১৫২ ৫.

দুর্বল বৃদ্ধ ব্যক্তি

মাসআলা :
যে বৃদ্ধ বা অসুস্থ ব্যক্তির রোযা রাখার সামর্থ্য নেই এবং পরবর্তীতে কাযা করতে পারবে এমন সম্ভাবনাও নেই এমন ব্যক্তি রোযার পরিবর্তে ফিদয়া প্রদান করবে।-সূরা বাকারা : ১৮৪ বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ছাবেত বুনানী রাহ. বলেন, হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. যখন বার্ধক্যের কারণে রোযা রাখতে সক্ষম ছিলেন না তখন তিনি রোযা না রেখে (ফিদইয়া) খাবার দান করতেন।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযযাক হাদীস : ৭৫৭০ উক্ত মাসআলা হযরত ইবনে আব্বাস রা., উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা., আতা রাহ., সায়ীদ ইবনে যুবাইর রাহ., হাসান বসরী রাহ., মুজাহিদ রাহ., সায়ীদ ইবনে মুসাইয়াব রাহ. থেকে বর্ণিত আছে।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/২২০-২২৪ ইকরামা রাহ. বলেন, ‘‘আমার মা প্রচণ্ড তৃষ্ণা-রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং রোযা রাখতে সক্ষম ছিলেন না। তাঁর সম্পর্কে আমি তাউস রাহ.কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘প্রতি দিনের পরিবর্তে মিসকীনকে এক মুদ (আধুনিক হিসাবে ১ কেজি ৬৩৬ গ্রাম) পরিমাণ গম প্রদান করবে’।’’-আবদুর রাযযাক হাদীস : ৭৫৮১

মাসআলা :
যাদের জন্য রোযার পরিবর্তে ফিদইয়া দেওয়ার অনুমতি রয়েছে তারা রমযানের শুরুতেই পুরো মাসের ফিদইয়া দিয়ে দিতে পারবে।-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭

মাসআলা :
উপরোক্ত দুই শ্রেণীর মানুষ ছাড়া (অর্থাৎ দুর্বল বৃদ্ধ ও এমন অসুস্থ ব্যক্তি যার ভবিষ্যতে রোযার শক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।) আরো যাদের জন্যে রোযা ভাঙ্গা জায়েয আছে, যেমন-মুসাফির, গর্ভবতী ও শিশুকে স্তন্যদানকারিনী) তারা রোযা না রাখলে রোযার ফিদইয়া দিবে না; বরং পরে কাযা করবে। আর ওযরের হালতে মৃত্যুবরণ করলে কাযা ও ফিদয়া প্রদানের অসিয়ত উভয় দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি পাবে। অবশ্য ওযরের হালত শেষ হওয়ার পর, অর্থাৎ মুসাফির মুকীম হওয়ার পর, গর্ভবতী নারীর সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া ও স্রাব বন্ধ হওয়ার পর এবং স্তন্যদানকারিনী স্তন্যদান বন্ধ করার পর যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে ওযর শেষে যে কয়দিন সময় পেয়েছে সে কয়দিনের কাযা যিম্মায় আসবে। কাযা না করলে উক্ত দিনগুলির ফিদয়া প্রদানের অসিয়ত করে যেতে হবে।-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৩-৪২৪; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/২৫৫

মাসআলা :
ছুটে যাওয়া রোযার কাযা সম্ভব না হলে মৃত্যুর পূর্বে ফিদয়া দেওয়ার অসিয়ত করে যাওয়া জরুরি। অসিয়ত না করে গেলে ওয়ারিশরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে ফিদয়া দেয় তবে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন। তবে অসিয়ত না করা অবস্থায় মিরাসের সম্পদ থেকে ফিদয়া দিতে হলে সকল ওয়ারিস বালেগ হওয়া জরুরি এবং সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি জরুরি। তবে মিরাস বণ্টনের পর কেউ স্বেচ্ছায় নিজের অংশ থেকে ফিদয়া আদায় করতে চাইলে কোনো অসুবিধা নেই।

পূর্ববর্তি সংবাদকনের বাড়ি থেকে ইফতার পাঠানোর কুপ্রথা: কী বলেন সিলেটের তরুণ আলেমরা
পরবর্তি সংবাদসিলেটে স্বামীকে খুন করে স্ত্রী নিজেই গেলেন নিখোঁজের জিডি করতে!