যেসব কাজ রোযাদারের জন্য মাকরূহ

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: রোযা মাকরূহ হওয়ার কারণসমূহ

মাসআলা :
কুলি করার সময় গড়গড়া করা এবং নাকে পানি দেওয়ার সময় উপরের দিকে পানি পৌঁছানো মাকরূহ। হযরত লাকিত ইবনে সবিরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- بالغ في الاستنشاق إلا أن تكون صائما ‘নাকে পানি দেওয়ার সময় ভালোভাবে নাকে পানি দাও, তবে রোযাদার হলে নয়।-জামে তিরমিযী হাদীস: ৭৬৬; সুনানে আবু দাউদ ১/৩২২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ৯৮৪৪

মাসআলা :
এমন কাজ করা মাকরূহ, যার দ্বারা রোযাদার নিতান্তই দুর্বল হয়ে পড়ে। যেমন শিঙ্গা লাগানো।

মাসআলা :
রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে বা ইনজেকশন ইত্যাদি দ্বারা রক্ত বের করলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার দ্বারা রোযাদার খুব দুর্বল হয়ে যায়। সাবেত আলবুনানী রাহ. বলেন, হযরত আনাস রা. কে জিজ্ঞাসা করা হল রোযার হালতে শিঙ্গা লাগানোকে কি আপনারা মাকরূহ মনে করতেন? তিনি বলেন, ‘না। তবে এ কারণে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরূহ হবে।’-সহীহ বুখারী হাদীস ১৯৪০

মাসআলা :
রোযার হালতে গীবত করলে, গালি-গালাজ করলে, টিভি-সিনেমা ইত্যাদি দেখলে, গান-বাদ্য শ্রবণ করলে এবং যে কোনো বড় ধরনের গুনাহে লিপ্ত হলে রোযা মাকরূহ হয়ে যায়। আর এ কাজগুলো যে সর্বাবস্থায় হারাম তা তো বলাই বাহুল্য। একটি হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- اذا كان يوم صوم احدكم فلا يرفث ولا يصخب ‘তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখে তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা না বলে ও হৈ চৈ না করে।-সহীহ বুখারী হাদীস : ১৯০৪; সুনানে আবু দাউদের রেওয়ায়েতে এ শব্দ রয়েছে, ‘রোযাদার যেন কোনো অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত না হয়।’ হাদীস : ৩৩৬৩ (১/৩২২) হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা-প্রতারণা ও গুনাহর কাজ ত্যাগ করে না আললাহ তাআলার নিকট তার পানাহার থেকে বিরত থাকার কোনো মূল্য নেই।’-বুখারী, হাদীস ১৯০৩; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৩৩৬২ (১/৩২২)

যেসব কাজ রোযাদারের জন্য মাকরূহ নয়

মাসআলা :
রোযার হালতে প্রয়োজনে জিহ্বা দ্বারা কোনো কিছুর স্বাদ নেওয়া বা প্রয়োজনে বাচ্চাদের জন্য খাদ্য চিবানো মাকরূহ নয়। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন স্বাদ গলার ভেতরে চলে না যায়। রোযাদার মহিলা তার বাচ্চার জন্য খাদ্য চিবানোকে ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. দোষের বিষয় মনে করতেন না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৭

মাসআলা :
রোযাদারের জন্য সুরমা লাগানো বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মাকরূহ নয়। আতা রাহ. বলেন, ‘রোযাদারের জন্য সুরমা ব্যবহার করাতে দোষ নেই।’-প্রাগুক্ত ৪/২০৮

মাসআলা :
রোযা অবস্থায় টুথ পাউডার ইত্যাদি ছাড়া শুধু মিসওয়াক ব্যবহার করা মাকরূহ নয়। এতে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না; বরং অন্য সময়ের মতো রোযার হালতেও মিসওয়াক করা সুন্নত। হযরত আমির ইবনে রবীয়া রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি রোযার হালতে অসংখ্যবার মিসওয়াক করতে দেখেছি।-সহীহ বুখারী ১/২৫৯; আবদুর রাযযাক ৪/২০০

মাসআলা :
রোযা অবস্থায় বিকেলে এমনকি ইফতারের পূর্বেও মিসওয়াক করা মাকরূহ নয়। বরং অন্য সময়ের মতোই সুন্নত। হাসান রাহ.কে রোযা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রোযা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই। মিসওয়াক পবিত্রতার মাধ্যম। অতএব দিনের শুরুতে এবং শেষেও মিসওয়াক করো।’-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০২ ইবরাহীম রাহ. বলেন, ‘রোযা অবস্থায় দিনের শুরু ও শেষে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই।’-প্রাগুক্ত ৪/২০৩

মাসআলা :
গাছের কাঁচা ডাল দ্বারা বা পানিতে ভেজানো ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা মাকরূহ নয়; বরং জায়েয। উরওয়া রাহ. রোযা অবস্থায় তাজা মিসওয়াক ব্যবহার করে মিসওয়াকের সুন্নত আদায় করতেন।-প্রাগুক্ত ৪/২০২ মুজাহিদ রাহ. রোযা অবস্থায় তাজা মিসওয়াক ব্যবহার করাকে দোষের মনে করতেন না। সুফিয়ান সাওরী রাহ. থেকেও অনুরূপ মত বর্ণিত আছে।-প্রাগুক্ত ৪/২০২

পূর্ববর্তি সংবাদভারতে প্রধান বিচারপতির যৌন কেলেঙ্কারি, বিক্ষোভ মিছিল থেকে আটক ৫০জন নারী
পরবর্তি সংবাদসরকার চায় বিএনপি টিকে থাকুক : তথ্যমন্ত্রী